সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় আয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মোকাবিলায় মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং জাতীয় অর্থনীতির উপর আর্থিক চাপ হ্রাস করা।
হামিদ খুচরা ভোক্তাদের ওপর এ প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ মেটাতে আমাদের খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হতে পারে।’
সরকারের অভ্যন্তরের সূত্রগুলো প্রথাগত নিয়ন্ত্রক শুনানিকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে পাইকারি বিদ্যুতের দামে ৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্ত এসেছে, যা শুল্ক বাড়ানো বা আরও বন্ড ইস্যু করার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর মধ্যে বিভক্ত।
বর্তমান বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বিক্রয়মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় বিপিডিবির দ্বারা সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য আর্থিক ঘাটতি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জকে এই সংশয় স্পষ্ট করে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
বিপিডিবির ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ বছরে মোট ৯৮৬.৪৬ বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
এর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়, লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে অর্থবছরের জন্য ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার বিস্ময়কর ক্ষতি হয়েছে। কারণ, সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ হারে বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ক্রয় ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করছে।
এই বিশাল লোকসানে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে এবং নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) ১৪ টাকা ৬২ পয়সা, ভাড়া কেন্দ্রে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা। ভারত থেকে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা দরে বিদ্যুৎ আমদানি করে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ: নসরুল হামিদ
সরকার বেসরকারি খাত থেকে এবং ভারত থেকে ডলারে বিদ্যুৎ ক্রয় করে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের কারখানাগুলোর মধ্যে উৎপাদন ব্যয়ের বৈষম্য আর্থিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে, সরকার একা বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্রমবর্ধমান বকেয়া বিল বহন করে।
নসরুল হামিদ বৈদেশিক মুদ্রার চ্যালেঞ্জ বিষয়ে বলেন, ‘সংকট স্থানীয় মুদ্রায় নয়… তবে মূল সংকট ডলারে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না।’
পেমেন্টের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য মাসিক ১০০ কোটি ডলারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আর্থিক সংকট কিছুটা লাঘব করতে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে, যা সম্ভবত ১২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। তবে, কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে চলমান ভর্তুকির সঙ্গে মিলিত এই পদক্ষেপটি যথেষ্ট নাও হতে পারে। শুল্ক সমন্বয় বা অতিরিক্ত বন্ড ইস্যুর জন্য আরও বিবেচনার কথা জানান তারা।
বাংলাদেশ যখন এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে, তখন বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আসন্ন সিদ্ধান্ত বড় আকার ধারণ করেছে, যা জাতীয় অর্থনীতি ও নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন উভয়ের উপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের পাওনা পরিশোধে ৫৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুতে সম্মত ২৪ ব্যাংক