বুধবার টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মাকসুদা খানম উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য এবং এমপি রানার জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। সকালে শুনানি হলেও বিচারক জামিন বিষয়ে আদেশ দেন বিকাল ৪টায়। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মাইক্রোবাসযোগে এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানাকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আনা হয়।
বিচারক মাকসুদা খানম বেলা ১১টায় এজলাসে উঠেন। ১১টা ৫ মিনিটে শরু হয় ফারুক হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম। এদিন মামলার ৪নং সাক্ষী ফারুক হাসান ভূইয়া ওরফে সনির সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি বিধায় তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি মনিরুল ইসলাম খান। বাদীপক্ষে তার সাথে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম। আসামিপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী মিয়া।
এর আগে আসামিপক্ষের জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি হয়। সেই শুনানিতে বুধবার জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করে আদালত। আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এমপি রানাকে কড়া পুলিশ প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে এমপি রানার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরসহ শহরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আদালত এলাকায় এমপি রানার পক্ষে মিছিল করেন তার কর্মী-সমর্থকরা। অন্যদিকে রানাসহ সকল আসামির ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেন বাদীপক্ষের লোকজন।
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, এমপি রানার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। এজন্য যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরে আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। জেলা সদর গেট এলাকা থেকে দুটি চাইনিজ কুড়াল, দুটি হাতুড়ি, একটি লোহার ডান্ডা ও একটি রড উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শরিফুল হক জানান, দুপুর ১২টার দিকে এমপি রানার সমর্থকরা টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দিক থেকে একটি মিছিল নিয়ে আদালত এলাকায় ঢুকতে চাইলে জেলা সদর গেটে শাসছুল হক তোরণের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ বার বার মিছিলকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললেও তারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দুপুর ১টার দিকে পুলিশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল গেটের একটি দোকান থেকে আট রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগজিন ও একটি বিদেশি পিস্তলসহ রাইছুল ইসলাম রাব্বি ও মাজাহার হোসেন তমাল নামে এমপি রানার দুই সমর্থককে আটক করে। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে আরো নয়জনকে আটক করা হয়। এছাড়া সেখান থেকে বেশকিছু মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এমপি রানা ও তার তিন ভাই সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।