একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একশনএইড এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বর্তমান জরিপে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে যারা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা কোমর, মাথা, হাত-পা ও পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
এদিকে, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা পর্যায়ক্রমে উন্নত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর: বেঁচে যাওয়াদের অর্ধেক এখনো কর্মহীন
গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।
৯ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে একশনএইড জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, শারীরিক অক্ষমতার কারণে তারা কাজ করতে পারেন না এবং ১০ শতাংশ এখনও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরনের কাজ করার অক্ষমতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
জরিপ অনুসারে, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ তাদের আদি পেশা গার্মেন্টসে ফিরে গেছেন এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। অনেকেই তাদের পেশা বদলে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন৷
জরিপে দেখা গেছে যে বেশিরভাগের আয় করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন যে মহামারি চলাকালীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে ছিল না। ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি। ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালীন তাদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পারিবারিক আয় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি যার অধিকাংশই খরচ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়,বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে।