রানা প্লাজা
রানা প্লাজার রানার জামিন স্থগিতই থাকছে
সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতই থাকছে। তবে তার জামিন স্থগিত রেখে এ বিষয়ে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ এ নির্দেশ দেন।
আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজার মালিক সোহেলের জামিন স্থগিত
সর্বশেষ বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১ অক্টোবর রানাকে ছয় মাসের জামিন দেন। তবে ২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জামিন আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। সে অনুযায়ী আজ শুনানি হয় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল এই মামলায় সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের সে জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় একই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন: আজ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর
১ সপ্তাহ আগে
রানা প্লাজার মালিক সোহেলের জামিন স্থগিত
রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একইসঙ্গে আবেদনটি আগামী ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২ অক্টোবর) চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এই স্থগিতাদেশ দেন।
আরও পড়ুন: আজ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. সাজ্জাদ আলী চৌধুরী।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। ফলে সোহেল রানা আপাতত কারামুক্তি পাচ্ছেন না।
পুলিশের করা এই মামলায় গত মাসে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন সোহেল রানা। তার আবেদনের ওপর মঙ্গলবার শুনানি হয়।
তাকে ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর বুধবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানি হয়।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ধস: ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ
১ মাস আগে
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: সোহেল রানার জামিন আদেশ আরও ৬ মাস স্থগিত
সাভারের রানা প্লাজা ধসে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ৬ মাসের জন্য স্ট্যান্ডওভার (মূলতবি) রেখেছেন আপিল বিভাগ। এই ৬ মাস তার জামিন স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।
আরও পড়ুন: অবশেষে রানা প্লাজা ধস মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ এই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। ফলে রানার মুক্তিও স্থগিত হয়ে যায়।
এরপর গত ৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ১০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ফের তার জামিনের বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ৬ মাস স্ট্যান্ডওভার (মূলতবি) রাখেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের জামিন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
যাদের প্রায় সবাই ছিলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি ভবনের মালিক সোহেল রানা।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর আজ
রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
১ বছর আগে
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন আপাতত স্থগিতই থাকছে
সাভারের রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) আগামী ১০ জুলাই শুনানি হবে।
এই সময় পর্যন্ত সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন হাইকোর্টে স্থগিত
এর আগে এই মামলায় সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর করে (রুল অ্যাবসলিউট) গত ৬ এপ্রিল রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৯ এপ্রিল চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি ৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সোহেল রানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা মামলা করেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলার বিচার এখনও চলমান।
এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১ মার্চ এ হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
সেই রুলের চূড়ান্ত নিয়ে গত ৬ এপ্রিল সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন আদেশ স্থগিত
রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
১ বছর আগে
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কর্মীর ৫৪.৫ শতাংশ এখনও বেকার
রানা প্লাজা দুঘর্টনায় বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে বেকারত্বের হার হ্রাস পেলেও বর্তমানে কর্মহীন রয়েছেন ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর উপলক্ষে বুধবার (১২ এপ্রিল) ‘রানা প্লাজা দুঘর্টনা: ট্রাজেডি এবং ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক সমীক্ষায় এই ফলাফল উপস্থাপন করে একশনএইড বাংলাদেশ।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর এক সমীক্ষা অনুসারে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে বেকারত্বের হার হ্রাস পেলেও বর্তমানে ৫৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ কর্মহীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ গত পাঁচ থেকে আট বছর ধরে কর্মহীন, আর পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ কর্মহীন রয়েছেন গত তিন থেকে চার বছর ধরে।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৮ বছর
একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
এর মধ্যে ৬৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ নারী এবং ৩০ দশমিক পাঁচ শতাংশ পুরুষ।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে বেঁচে থাকাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা এবং আর্থিক অবস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল বিষয় তুলে ধরা হয়।
সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য মতে, তাদের বেকারত্বের পেছনে মূল কারণ হলো তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা। তবে এই হার গত বছরে ছিল ৬৭ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, ২১ শতাংশ বলেছেন যে তারা কোন উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না।
এই ফলাফল থেকে দেখা যায় যে শারীরিকভাবে সক্ষমতা থাকা অনেক শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমীক্ষা আরও বলছে, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। সম্পূর্ণরূপে স্থিতিশীল বলে দাবি করা জীবিতদের অনুপাত ২০১৪ সালে ছিল ১৭ শতাংশ যা ২০২৩ সালে এসে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ হয়েছে।
এবছর ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলেছেন তাদের শারীরিক স্বাস্থের অবনতি হয়েছে যা ২০১৪ সালে ছিল ৯ শতাংশ।
উত্তরদাতাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (৩৬ দশমিক আট শতাংশ) উল্লেখ করেছেন যে তারা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন, এক চতুর্থাংশ (২৪ দশমিক ছয় শতাংশ) মাথা ব্যথার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।
অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, হাত ও পায়ে আঘাত, দাঁড়াতে ও সঠিকভাবে হাঁটতে না পারা, দৃষ্টিশক্তি ও কিডনির সমস্যা ইত্যাদি।
মনোসামাজিক স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ অনুভব করা লোকের হার হ্রাস পেলেও মোটামুটি স্থিতিশীল বলে দাবি করার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ইতিবাচক প্রবণতা সত্ত্বেও, এখনও ২৯ শতাংশ মানসিক ট্রমার মধ্যে বেঁচে আছেন, যাদের অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ২৯ শতাংশের মধ্যে ৫৭ দশমিক আট শতাংশ উত্তরদাতারা বলেছেন তাদের মধ্যে ভবন ধসে পড়ার ভয় কাজ করে।
এছাড়া ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ তাদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
সমীক্ষার ফলাফলে আরও দেখা যায় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সেরে উঠেছে ৩৬ দশমিক তিন শতাংশ বর্তমানে পোশাক কারখানায় কর্মরত রয়েছেন।
গত বছর এ হার ছিল ১৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
সমীক্ষা অনুযায়ী, বেঁচে ফেরা পোশাক শ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার পরে কাজ ফিরে আসছে, যা তাদের সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ইতিবাচক বিকাশকে প্রতিফলিত করে।
সমীক্ষায় আরও প্রকাশ পায়, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারের আয়ের পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জীবিতদের অর্ধেকের মাসিক পারিবারিক আয় (৪৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ) ১০ হাজার এক থেকে ১৫ হাজার টাকা, ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১৫ হাজার এক টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা, এবং ১১ শতাংশের প্রতি মাসে আয় ২০ হাজার টাকার বেশি।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৭ বছর পরও অর্ধেক শ্রমিক কর্মহীন: একশনএইড
উত্তরদাতাদের বেশিরভাগের পরিবারের আয় তাদের পারিবারিক খরচ মেটাতে অপর্যাপ্ত। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৭ শতাংশ) তাদের মাসিক ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা এবং তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরী ব্যয় এর মতো অপ্রত্যাশিত ব্যয় এর জন্য কোন সঞ্চয় নেই।
১ বছর আগে
রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুনমুন আক্তার।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। এর ফলে তার মুক্তিতে বাধা নেই।
এর আগে গত বছরের ১ মার্চ রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই রুলের চূড়ান্ত নিয়ে আজ সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সারেন পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজায় আহতদের ৫৬ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি: একশনএইড
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলার বিচার এখনও চলমান।
আরও পড়ুন: অবশেষে রানা প্লাজা ধস মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
১ বছর আগে
রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর আজ
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ‘রানা প্লাজা’ ধসের নয় বছর পূর্তি রবিবার। এই দিনটি স্মরণে মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
রবিবার সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নিহতের স্বরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও গার্মেন্টস এর মালিকদের ফাঁসির দাবি ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পরে বিভিন্ন সংগঠন রানা প্লাজার সামনে নানান দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
অবৈধভাবে নির্মাণ করা রানা প্লাজা ভবনটি ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। এই দুর্ঘনায় ভবনটিতে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যায়। প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
রানা প্লাজা মামলায় অগ্রগতি সামান্যই
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এবং বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আপিলের শুনানি শেষে ৩১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন
মামলার প্রধান আসামি রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা বর্তমানে কারাগারে এবং বাকি ৪০ জন জামিনে রয়েছেন।
২ বছর আগে
রানা প্লাজায় আহতদের ৫৬ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি: একশনএইড
একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একশনএইড এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বর্তমান জরিপে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে যারা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা কোমর, মাথা, হাত-পা ও পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
এদিকে, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা পর্যায়ক্রমে উন্নত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর: বেঁচে যাওয়াদের অর্ধেক এখনো কর্মহীন
গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।
৯ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে একশনএইড জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, শারীরিক অক্ষমতার কারণে তারা কাজ করতে পারেন না এবং ১০ শতাংশ এখনও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরনের কাজ করার অক্ষমতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
জরিপ অনুসারে, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ তাদের আদি পেশা গার্মেন্টসে ফিরে গেছেন এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। অনেকেই তাদের পেশা বদলে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন৷
জরিপে দেখা গেছে যে বেশিরভাগের আয় করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন যে মহামারি চলাকালীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে ছিল না। ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি। ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালীন তাদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পারিবারিক আয় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি যার অধিকাংশই খরচ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়,বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে।
২ বছর আগে
রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদা। রানা প্লাজা ধসে স্বামী আলতাফ (৩৫) মারা যান। সে সময় মাসুদা নিজেও আহত হয়েছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্তি। এত বছরেও সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি।
এছাড়াও একই গ্রামের শিল্পী আক্তার (২৩) ও আঞ্জু বেগম (২৬) নামে আরও দুই নারী পোশাককর্মী নিহত হন। ভুক্তভোগী এই সব পরিবারের সাথে কথা বললে উঠে আসে সে ভয়াবহ দুঃসহ দিনটির কথা।
মাসুদা বলেন, ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের দিন। সেদিনের কথা কীভাবে ভুলি! বলতে বলতেই ছুটে গেলেন ঘরে। হাতে তুলে নিলেন আলতাফের একটি ছবি। ততক্ষণে আলতাফের ছেলে মাসুদ রানা (১৮) এসেছেন সেখানে। এই ছেলের কথাই এরপর মাসুদা বলতে লাগলেন। জন্মের পর থেকেই ছেলের হৃদরোগ ধরা পড়ে। তাই ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে দুজনেই স্থানীয় একজনের সহায়তায় সাভারের রানা প্লাজায় পোশাক কারখানায় কাজ নেন। ছেলে-মেয়েকে দাদা-দাদির কাছে রেখে তারা সাভারে যান। স্বামী-স্ত্রী মিলে মাসে ১২-১৪ হাজার টাকা আয় করতেন। খরচ শেষে বাকিটা পাঠাতেন বাড়িতে। স্বামী আলতাফ হোসেন রানা প্লাজার সপ্তম তলায় আর মাসুদা কাজ করতেন তৃতীয় তলায়।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৮ বছর
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় ভবনধস হয়। বেলা একটার দিকে উদ্ধার হন মাসুদা। বুকে আঘাত পাওয়া মাসুদাকে নিয়ে যাওয়া হয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু স্বামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে দুই ঘণ্টা পর হাসপাতাল ছেড়ে আবারও ধ্বংসস্তূপের সামনে আসেন মাসুদা। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্বামীকে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অজ্ঞান হয়ে যান আহত মাসুদা। স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে তার ভাড়া বাসায় দিয়ে আসেন। সেখানে রাত ৮টার দিকে মাসুদার মুঠোফোনে ধসে পড়া ভবনের ভেতরে আটকে পড়া একজন শ্রমিকের কল আসে। তিনি মাসুদাকে বলেন, হাতে-পায়ে বিম চাপা অবস্থায় আটকে আছেন আলতাফ। সেখান থেকে তিনি শুধু বারবারই মাসুদার নাম বলছেন। আটকে পড়া ওই শ্রমিক মাসুদাকে অনুরোধ করেন, তাকে ও আলতাফকে উদ্ধারের জন্য। সেদিন ধ্বংসস্তূপে ছুটে গিয়ে এক সেনা সদস্যের সহায়তায় ধসে পড়া ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন মাসুদা। স্বামীর অবস্থান জেনে ডাকাডাকি শুরু করেন। একসময় স্বামীও সাড়া দেন। আলতাফ তখন কেঁদে বলেন, ‘হাত-পা কাটপার হলেও কাটো। মুই ভিক্ষা করি খাইম। তাও ছাওয়ালাক তো দেখতে পাম।’ কাছে গিয়ে মাসুদা স্বামীর মুখে-মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। উদ্ধারকর্মীরা মাসুদাকে বারবার বের হয়ে যেতে তাড়া দিচ্ছিলেন। তখন আলতাফ তাকে বলেছিলেন, তাঁর মুখে একটু পানি দিয়ে যেতে। মাসুদা মুখে পানি দিয়ে উদ্ধারের আশ্বাসে এরপর উদ্ধারকর্মীদের তাগাদায় ফিরে আসেন মাসুদা। ২৫ এপ্রিল মারা যান আলতাফ। ২৬ এপ্রিল তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিজেকে সামলে নিয়ে মাসুদা বলেন, ছেলেটার আর লেখাপড়া হলো না। সংসারের কষ্ট দেখে নিজেও রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেছেন। আর মেয়েটাকে পড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাসুদা জানান, আলতাফের লাশ নেয়ার সময় ২০ হাজার টাকা আর পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছে পরিবারটি।
এই গ্রামেরই শিল্পী আকতার ও আঞ্জু আক্তারের বাড়ি। তাদের পরিবারের সদস্যরাও দুঃসহ দিনটির কথা ভুলতে পারেননি।
শিল্পীর মা শেফালি বেগম বলেন, কারখানার কাজের ফাঁকে ডিগ্রি পড়ছিলেন শিল্পী। এলাকার একজন পরিচিত রানা প্লাজা ধসে পড়ার খবর জানিয়েছিল। শুনেই ঢাকার গাড়িতে চড়ে বসেন শিল্পীর বাবা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেয়েকে না পেয়ে আবার ফিরে আসেন তিনি। রানা প্লাজা ধসের ১৬ দিন পর গ্রামের একজন তাকে মুঠোফোনে জানান, শিল্পীর মোবাইল নম্বর খোলা আছে। তখনই মেয়ের নম্বরে ফোন দেন তিনি। একজন নারী ফোন ধরেন।
এ সময় কথা কেড়ে নিয়ে শিল্পীর বাবা ফাইজুল ইসলাম বলেন, হামি বললাম, শিল্পী, তুই কই? ওপার থেকে নারীকণ্ঠ বলে, “আমি শিল্পী না। শিল্পীর লাশ মিলেছে। পরে অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শিল্পীর লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়।’
ফাইজুল বলেন, তত দিনে শিল্পী প্রায় কঙ্কাল হয়ে গেছে। লম্বা লম্বা চুল ও পায়ের আংটি দেখে চিনতে পেরেছি। মেয়েটা এতই লক্ষ্মী ছিল, তাকে কিছুতেই ভুলতে পারি না।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজার মালিক রানার জামিন স্থগিত, বাতিল প্রশ্নে রুল
শিল্পীর মা শেফালী বলেন, মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সরকার এক লাখ টাকা দিয়েছে। তাই দিয়ে ছেলের জন্য কিছু জমি বন্ধক নিয়েছেন।
এদিকে বিয়ের কয়েক বছর পর বনাবানি না হওয়ায় স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আঞ্জু বেগমের। ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের বাবার বাড়িতে রেখে পোষাক কারখানায় কাজ করতে যান তিনি। প্রতি মাসে বেতনের একটা অংশ পাঠাতেন। সে টাকাতেই চলতো সংসার। রানা প্লাজার ধসের দিনই আঞ্জুও মারা যান।
তার বোন বুলি বেগম বলেন, আঞ্জুর মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে অভাবে নেমে আসে। অভাবের কথা ভেবে আঞ্জুর মেয়ে মৌসুমী (১৫) পোষাক কারখানায় কাজ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে গেছেন।
ছেলে রাজু বলে, মায়ের মুখ খানি মনে রাখতে বার বার মায়ের ছবিটা দেখি।
এই পরিবারটিও দাফনের জন্য ২০ হাজার, পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জানান আঞ্জুর বাবা আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, মোর কুনো ব্যাটা নাই। আঞ্জুই আমার কাছত ব্যাটা আছিল।
৩ বছর আগে
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৮ বছর
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ‘রানা প্লাজা’ ধসের আট বছর পূর্তি শনিবার। করোনা মহামারির মধ্যেই নিহতদের স্মরণে পালিত হচ্ছে দিনটি।
নিহতদের স্মরণে এবছর করোনা মহামারির কারণে খোলা স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে না।
এই দিনটি স্মরণে প্রতিবছর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, বাম রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অবৈধভাবে নির্মাণ করা রানা প্লাজা ভবনটি ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। এই দুর্ঘনায় ভবনটিতে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যায়। প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশে পরিচালিত জরিপ মতে, বেঁচে ফেরা প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যের দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
রানা প্লাজা দুর্ঘনায় জীবিতদের মধ্যে প্রায় ৫৮.৫ শতাংশ মোটামুটি সুস্থ এবং ২৭.৫ শতাংশ ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু ১৪ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি জানিয়েছেন এখনও তারা মাথা ব্যথা, হাত-পা এবং পিঠে ব্যথা অনুভব করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায়, এখনো ১২.৫ শতাংশ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ৬২ শতাংশ ব্যক্তি স্বল্পমাত্রায় মানসিক অসুস্থতার শিকার এবং ২৫.৫ শতাংশ ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। গতবছরের তুলনায় এই বছর ৪.৫ শতাংশ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক ভার্চুয়াল সভায় অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ জরিপে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে। দুর্ঘটনার শিকার ২০০ ব্যক্তি এই জরিপে অংশ নেয়।
৩ বছর আগে