জীববৈচিত্রের লীলাভূমি এই হাওরই এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছের একমাত্র অভয়ারণ্য। স্থানীয়দের কাছে হাওরটি ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত হলেও, একসময় মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডার হিসাবে বেশ খ্যাতি ছিল এর। অথচ আজ এই টাংগুয়ার হাওর যেন এক বিরাণ ভূমি। হাহাকার করছে এর প্রতিটি দূর্বাঘাস, প্রতিটি বৃক্ষকণা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছরই পর্যটকদের ভীড় জমে টাংগুয়ার হাওরে। প্রায় ১০০ কি.মি বিস্তৃত এই হাওরটির অপার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। কিন্তু হারিয়ে গেছে এ হাওরের চিরচেনা সব জীববৈচিত্র।
ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে প্রকৃতি যখন নতুন রুপে সজ্জিত হয়, ঠিক তখনই কিছু অসাধু জেলে অবৈধভাবে ঠেলা জালি দিয়ে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছ ও পোনামাছ আহরণ করে ধ্বংস করছে মৎস্যকূল।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরের পার্শ্ববর্তী তরং ও শিবরামপুর গ্রামের কিছু অসাধু জেলে অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত শিকার করছে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে টাংগুয়ার হাওরের জলজ উদ্ভিদ।
স্থানীয়রা জানান, এইসব জেলেরা টাংগুয়ার হাওরের পার্শ্ববর্তী পাঠলাই নদীর খেয়া পার হয়ে হাওরে প্রবেশ করে। এসময় ছোট্ট খেয়া নৌকায় অতিরিক্ত জেলে কোনঠাসা হয়ে একত্রে ওঠার ফলে হাওরের পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর বাজারে চিকিৎসা নিতে যাওয়া জরুরি রোগীরাও ভোগান্তিতে পড়েন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও থেমে নেই একসাথে অনেক জেলের খেয়া পারাপার। ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা না মেনে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরছেন জেলেরা। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
টাংগুয়ার হাওরে কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর পিসি দৌলত হুসাইন বলেন, ‘এসব অবৈধ জেলেদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে আমি কিছুদিন যাবৎ ছুটিতে থাকায় এখন হাওরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে বিষয়ে আমি অবগত না।’
মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, মৎস্য প্রজননের এই মৌসুমে পোনা নিধনের ফলে মাছের বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। এর ফলে খুব শিগগিরই টাংগুয়ার হাওরে থাকা বিভিন্ন মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে টাংগুয়ার হাওরে নিয়োজিত নির্বাহী মাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বর্তমানে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে যেহেতু এখন শুনেছি খুব শিগগিরই যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’