শিক্ষার্থীদের জোরালো আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের ফলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিঘ্ন ঘটেছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সচিবালয়ের কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ প্রভাবশালী কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে তাদের ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন, অনেকে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন, অনেকে আবার কোনো প্রকার নির্দেশিকা ছাড়াই অধঃস্তনদের ছেড়ে দিয়েছেন। এর ফলে আদেশের পালাক্রমে (চেইন অব কমান্ড) ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং প্রশাসনের মধ্যে নেতৃত্বহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে সচিবালয়ে উত্তেজনাকর পরিবেশ বিরাজ করছে। তারপর থেকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখানে দেখা যায়নি। সেনাবাহিনী এখন সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক দিনের তুলনায় উপস্থিতি অনেকটাই কম। আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত না থাকায় বিএনপিপন্থীদের পুনরায় সংগঠিত হতে দেখা গেছে। এদিকে, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত কর্মচারীরা সরকারের পতন উদযাপন করতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: নৈরাজ্য-লুটপাট বন্ধে পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বললেন রাষ্ট্রপতি
সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করেন। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি দেশে আছেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন কোথায় আছেন তাও জানা যায়নি।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ সচিব অফিসে আসছেন না। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মশিউর রহমান আজ (বুধবার) অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার গত দুই দিন ধরে অফিসে নেই। সোমবার উপস্থিত থাকলেও ভূমি সচিব খলিলুর রহমান মঙ্গলবার অনুপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান মঙ্গলবার উপস্থিত থাকলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে আসেননি। তবে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার এবং খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন সবসময়ই উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পুলিশে ব্যাপক রদবদল, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে
এদিন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মচারী দুপুরের মধ্যেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঠাগারে জড়ো হন। তারা একটি অভিযোগের তালিকা তৈরি করে যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) রিপন চাকমার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে স্লোগান দেন। পরে আরও আলোচনার জন্য পুনরায় সমবেত হন তারা।
পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মচারীদের সভাপতি এ বি এম আল আমিন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আজকের মধ্যে আমাদের পদোন্নতি দাবি করছি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাদের পরে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আমাদের আগে পদোন্নতি পেয়েছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হয়েছি।’