খুলনা নগরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার এবং সাধারণভাবে নগরবাসীর চলাচলের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পর খুলনা শহরে ‘নগর পরিবহন’ নামে একটি পরিবহন পরিষেবা চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৬০টি বাস দিয়ে এই সেবা চালু হয়। ২০১৭ সালে ৫৫টি বাসই চলাচলের যোগ্যতা হারায়।
২০১৮ সালে পরিবহন পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৮ সালের খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ‘নগর পরিবহন’ পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পান। তবে চার বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
যদিও সেই প্রতিশ্রুতিতে খালেক নির্বাচিত হয়েছেন এবং গত চার বছর ধরে কেসিসি মেয়র হলেও এখন পর্যন্ত তিনি নগর পরিবন সেবা চালু করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: জনবল সংকটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ সেবা বন্ধ
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতি ২০১৯ সালে গণপরিবহন হিসেবে চারটি বাস চালু করেছে। ইজিবাইক, মাহেন্দ্র এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাপের মুখে পরে পরিষেবাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া ২০১৬ সালে বিআরটিসি খুলনার সড়কে পাঁচটি দোতলা বাস (ডাবল ডেকার) নামিয়েছিল। সেটিও অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে নগর পরিবহন সার্ভিস আবার চালুর দাবি জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী বলেন, প্রতিদিন আমাকে কাজের জন্য ডাকবাংলো থেকে ফুলতলা যেতে হয়। তবে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারব কিনা এই নিয়ে চিন্তায় থাকি। নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে আমার মতো মানুষদের জীবনকে প্রতিনিয়ত বিপদে ফেলছে।
পলাশী জানান, মাহেন্দ্র চালকরা বেশি যাত্রী নেয়ার জন্য রাস্তায় অসংখ্যবার থামায়, এতে করে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া মাহেন্দ্র চালকরা তাদের যানবাহন যাত্রী ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ে না। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এছাড়া মহেন্দ্রগুলো থেকে বিকট শব্দ বের হওয়ায় যাত্রীদের শোনার ক্ষমতাও ব্যাহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
খুলনার রূপসা উপজেলার নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী খলিদ হোসাইন বলেন, অটোরিকশা চালকদের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে সীমিত আয়ের মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
তিনি বলেন, সীমিত আয়ের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের আয়ের সিংহভাগই যাতায়াত খরচে চলে যায়। তবে গণপরিবহন ব্যবস্থা থাকলে এমনটা হতো না। এ ছাড়া অটোরিকশার কারণে যানজটের ফলে এক সময়ের সুন্দর খুলনা শহর এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, তারা তাদের উদ্বেগে গণপরিবহন চালুর দাবিতে একাধিক মানববন্ধন করেছেন, কিন্তু সব বিফলে গেছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একই দাবিতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছি। ১৭ জুলাই খুলনা সিটি মেয়রেরর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। ১৮ জুলাই খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে ও ১৯ জুলাই বিআরটিএর পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। এছাড়া একই দাবিতে ২৩ জুলাই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে নিরাপদ সড়ক চাই।
আরও পড়ুন: দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। আগে চলতো এখন চলে না কেন জানি না। এটা প্রশাসন জানে। কেউ যদি চালাতে চায় তার নিজ দায়িত্বে চালাবে।
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি রাস্তা একনেকে পাশ আছে সেগুলো করতে পারলে আমরা ‘নগর পরিবহন’ চালু করবো। যেহেতু একনেকে পাশ করা রাস্তাগুলো কেডিএ করেনি। রাস্তা প্রস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি নতুন কোনো গাড়ি আনতে পারবো না।