খাদ্যের সন্ধানে এসব মানুষই ভিড় করছেন সড়ক মহাসড়কসহ হাট-বাজারে। খাদ্য সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড় জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের জন্য জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো না গেলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেনাবাহিনী টহল শুরু করার পর মানুষজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চললেও সোমবার থেকে পঞ্চগড়ের হাট-বাজার ও সড়ক-মহাসড়কে মানুষজনের জটলা বেড়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি দেখে লোকজন সরে গেলেও পরে আবারও ভিড় করছেন সেখানে।
ত্রাণ সহায়তার জন্য পথে পথে ঘুরা এসব মানুষ খাদ্য সামগ্রীর সহযোগিতার জন্য কড়া রোদে অপেক্ষা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে সূর্যের কড়া তাপ উপেক্ষা করে কয়েকজন মানুষ পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ত্রানের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে কয়েকটি কার্টুন নিয়ে একটি ভ্যান আসে। ভ্যান দেখা মাত্রই দৌড়ে আসেন দুস্থরা। পরে দেখা যায় রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে একটি করে সাবান বিতরণ করা হচ্ছে। ৩০ টাকা মূল্যের একটি করে সাবানের জন্য কয়েকশ মানুষের কাড়াকাড়ি। মুহূর্তের মধ্যে সাবান বিতরণ শেষ হয়ে যায়।
তবে, চালসহ ত্রাণ সহায়তার জন্য আক্ষেপ থেকেই যায় এ সব দুস্থ মানুষের। সকলের চোখে-মুখে ত্রাণের আকুতি।
এদিকে, নি¤œ আয়ের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্তরাও। বছরের এ সময়ে তাদের ঘরে ধান না থাকায় চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন তারা। তারা না পারছেন সাহায্য চাইতে না পারছেন এ দুর্ভোগের মোকাবিলা করতে।
ত্রাণের আশায় জেলা শহরে আসা শ্রমজীবী নারী সুফিয়া বানু বলেন, ‘আমরা কাজ করে দৈনিক যে মজুরি পাই তা দিয়ে সংসার চলে। কয়েকদিন থেকে কাজ করতে পারছি না। ঘরেও খাবার নেই। তাই বাজারে বের হয়েছি যদি কেউ চাল-ডাল দেয়।’
শহরের রামেরডাঙ্গা এলাকার রিকশাচালক আব্দুল করিম বলেন, রিকশা নিয়ে বের হলেই পুলিশ বাধা দিচ্ছে। শহরে সেরকম মানুষও নেই। খুব কষ্টে পড়ে গেছি। সরকার বাইরে বের হতে নিষেধ করছেন অথচ আমাদের বাড়ির খোঁজ নিচ্ছে না। আমরা কিভাবে চলবো। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের সাতখামার গ্রামের হাফেজা বেগম বলেন, ‘মানুষের বাসায় কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। এখন তো কাজ করতে পারছি না ঘরে খাবারও নাই।’
পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘পঞ্চগড়ে অঘোষিত লকডাউন চলছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা বাইরে বের হতে পারছেন না। দৈনিক উপার্জন নির্ভর মানুষের ঘরে খাবার নেই। দিন দিন দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সরকারকে দ্রæত এ সব মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে হবে।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ উপজেলায় তিন হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। পাঁচ লাখ টাকা ও ৩০ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ সহায়তা আসছে। এলেই তা বিতরণ করা হবে। আমরা প্রকৃত দুস্থদের তালিকা তৈরি করছি।’
উল্লেখ্য, পঞ্চগড় জেলায় ১২ লাখেরও বেশি মানুষ রয়েছে। এদের মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে কঠিন সংকটে পড়েছেন ন্যূনতম তিন লাখের বেশি দরিদ্র ও অসহায় মানুষ।