ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ সোমবার। দেশজুড়ে ৪৯টি নির্বাচনি এলাকায় দেশটির লাখ লাখ ভোটার আজ নিজেদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করছে।
সোমবার (২০ মে) ৬টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ চলছে। চলমান দফার ভোট ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোতেও আজ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। অযোধ্যায় এবারের ভোটকে মোদির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জন্য একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ সেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের জায়গায় বিতর্কিত মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন মোদি। এমনকি, এই বিষয়টিকে তিনি তার সরকারের শীর্ষ অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ শুরু
১৯৯২ সালে অযোধ্যার শতাব্দী প্রাচীন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে দেশটির উত্তেজিত হিন্দু জনতা। ওই মসজিদের জায়গায় এ বছর রাম মন্দির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মন্দিরটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হিন্দুত্ববাদী এ নেতার রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হয়।
এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চাওয়া মোদি দেশটির সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছেন বলেও দেখা হচ্ছে। তাই হিন্দু ভোটারদের অনুভূতি ও সমর্থন তাকে রেকর্ড টানা তৃতীয়বারের মতো ভারত শাসনের আসনে বসাবে বলে আশা করছেন মোদি ও তার দল বিজেপি।
তবে দেশটির ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতিজনিত সংকট চলাকালে মোদির এই প্রত্যাশা পূরণ নাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমরনাথ আগারওয়াল বলেন, ‘দেশে চলমান বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, নিরাপত্তার অভাব ও ভিন্নমত ঠেকাতে সরকারের প্রচেষ্টার মতো সমস্যগুলো এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এসবের কোনো সমাধান বিজেপির কাছে নেই।’
হিন্দু মন্দির নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ দেশের রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে নাও উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন আগারওয়াল। তিনি বলেন, ‘ভোটারদের এ বিষয়ে যে আগ্রহের অভাব তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট। ভোটেও এর প্রভাব পড়েছে।’
আরও পড়ুন: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে ভোট গ্রহণ শুরু
গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত চার ধাপের ভোটে সার্বিকভাবে ভোটারদের উপস্থিতি অনেক কম। কয়েকজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞের দাবি, মোদির দলের কট্টর সমর্থকদেরও অনেকে এবার ভোটদান থেকে বিরত রয়েছেন।
অবশ্য বেশিরভাগ জরিপে দেখা গেছে, লোকসভার আসন দখলে মোদি ও তার দল প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, তাদের জোটভুক্ত দল ও শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৭ দফার এ ভোট গ্রহণ কার্যক্রম চলবে আগামী ১ জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ৯৭ কোটি ভোটার দেশজুড়ে ৫৪৩ জন লোকসভা সদস্য নির্বাচন করতে ভোট দেবে। ভোট গণনা শেষে আগামী ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনি জনসভায় 'অনুপ্রবেশকারী' বলায় মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ মোদির বিরুদ্ধে