টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে বিরোধী জোটের বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার দেশটির লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ চলছে।
তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে এদিন সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ভারতের ৫৮টি নির্বাচনি এলাকায় ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটির ৮৯.৫ শতাংশ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। আগামী ১ জুন সপ্তম ও শেষ ধাপে ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ৬ সপ্তাহব্যাপী বিশাল এ নির্বাচনি কর্মযোগ্য শেষ হবে। ভোটের ফল প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুন।
আরও পড়ুন: ভারতে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে
এদিন রাজধানীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর মতো বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আজ ভোট দিতে দেখা গেছে।
এদিকে দলের শতাধিক কর্মীকে আটকের অভিযোগ তুলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিক্ষোভ করেছেন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি। এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন নির্বাচনে অনন্তনাগ-রাজৌরি এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়ানো এই নেত্রী।
অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন এ আসনে বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। এ নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়।
আরও পড়ুন: ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ শুরু
চলমান এই নির্বাচনকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মোদির রাজনৈতিক আধিপত্যেরও পরীক্ষা হবে এই নির্বাচনে। এবার নির্বাচিত হলে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন তিনি।
নির্বাচনের প্রথম ৫ ধাপে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে দেশটির কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রিতে উঠেছে। ভোটকেন্দ্রে টানতে নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ ভোটারদের জন্য ফ্যান, তাঁবু ও পানির ব্যবস্থা করেছে বলে জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে হয়ে যাওয়া ভোটে মোদির বিজেপির জয়ের ব্যাপারেই ইঙ্গিত দিয়েছে বেশিরভাগ জরিপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশীদ কিদওয়াই বলেন, ‘ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন প্রতিযোগিতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোদি। তবে এখন আমরা এক ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বিরোধী দলগুলো প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করছে এবং মনে হচ্ছে মোদির দল বিপর্যস্ত।’
এ কারণেই ভোটারদের নিজের দলের প্রতি আকৃষ্ট করতে মোদিকে মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: নির্বাচনি জনসভায় 'অনুপ্রবেশকারী' বলায় মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ মোদির বিরুদ্ধে
তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বকে নির্বাচনি প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে বিরোধীরা। এতে মোদি এতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন যে নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শুরুতে নির্বাচনি প্রচারে মোদি তার গত ১০ বছরের শাসনামলে দেশের দরিদ্র নাগরিকদের আর্থিক সুবিধা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, পাকা টয়লেট ও নারীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে রান্নার গ্যাস দেওয়ার মতো কাজগুলো তুলে ধরেন। তবে প্রথম ধাপের ভোটে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটারদের সাড়া না পেয়ে পদ্ধতি বদলান তিনি। এরপর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের বেশি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেওয়া শুরু করেন তিনি।