শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তাকে (কাসেম সোলাইমানি) হত্যা করা হয়েছে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য, আরেকটি (যুদ্ধ) শুরু করতে নয়। আর এ হত্যার মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসের শাসন শেষ হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। খবর বিবিসি’র।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। সেই সাথে ওই হামলায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের (পিএমএফ) নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ পিএমএফ’র ছয়জন নিহত হয়। এদিকে মার্কিন এ হামলার পর ভয়ংকর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং নিহত হয়েছে ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা। তবে ইরাকে হওয়া এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাগদাদের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনা পুরো মধ্যেপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা সামাল দিতে তারা আরো তিন হাজার অতিরিক্ত সৈন্য ওই অঞ্চলে মোতায়েন করবেন।
সোলায়মানি হত্যার পর ইরাকে আবারো বিমান হামলা:
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হচ্ছে, সোলায়মানি হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই আবারো ইরাকে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ইরাকের সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে বাগদাদের উত্তরে ক্যাম্প তাজির কাছে ইরাকে ইরানপন্থি শিয়া আধা-সামরিক বাহিনীর একটি গাড়িবহরে মার্কিন বিমান হামলায় ছয়জন নিহত ও আরো অন্তত তিনজন আহত হয়েছে।
ট্রাম্প আসলে যা বলছেন:
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিজের মার-আ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী একটি ত্রুটিহীন ও নির্ভুল হামলা চালিয়ে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সোলাইমানি আমেরিকার কূটনীতিক ও সামরিক কর্মীদের ওপর হামলার ছক কষছিল। কিন্তু আমরা তা ধরে ফেলেছি এবং তাকে শেষ করে দিয়েছি।’
ইরানের প্রতিক্রিয়া কি?
ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সোলাইমানির মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে তার (সোলাইমানি) প্রস্থান মানে এই অর্থ নয় যে, তার পথ ও মিশন শেষ হয়ে গেছে। গত রাতে হামলার মাধ্যমে যারা তার এবং আমাদের আরো শহীদদের রক্ত ঝরিয়েছে, সেসব অপরাধীদের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর লেখা এক চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তাখত রাভানছি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, তেহরান আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।
কিন্ত ইরানের কতটা ক্ষমতা রয়েছে?
ইরাকের নিকটবর্তী বেশ কিছু শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপকে সহায়তা দেয় ইরান।
শুক্রবার বাগদাদাদে বিমানবন্দরে অবতরণের পর এমনই কিছু মিলিশিয়া বাহিনীর কর্মকর্তাদের দ্বারা সজ্জিত হয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ি বহরে বেশ কয়েকটি মার্কিন মিসাইল আঘাত আসে।
মার্কিন ওই হামলায় সোলাইমানিসহ ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদী আল-মুহান্দিসও নিহত হয়েছেন। তিনি ইরাক সমর্থিত কাতাইব হিজবুল্লাহ গ্রুপকে কমান্ড দিয়ে আসছিলেন। গত সপ্তাহে রকেট হামলায় এক মার্কিন নাগরিক হত্যায় এই গ্রুপকেই দায়ী করে আসছিল ওয়াশিংটন।
এদিকে এমন হামলায় বিপদে পড়েছে ইরানের প্রতিবেশী ইরাক। কারণ ওয়াশিংটন ও তেহরান উভয়ের সাথেই তাদের সম্পর্ক রয়েছে।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) মোকাবিলায় ইরাকের সীমান্ত অঞ্চলে হাজার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করা আছে। তবে ইরাক সরকার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির শর্তাবলী অতিক্রম করে কাজ করেছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি এই মিসাইল হামলাকে ‘ইরাকের সার্বভৌমত্বের নির্মম লঙ্ঘন এবং দেশটির মর্যাদার ওপর এক নির্মম আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে আগামী রবিবার ইরাকের পার্লামেন্ট এক জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। অপরদিকে ইরাকে থাকা আমেরিকানদের অবিলম্বে ইরাক ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
কে ছিলেন কাসেম সোলাইমানি?
ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ খামেনির পর ৬২ বছর বয়সী কাসেম সোলাইমানি ছিলেন দেশটির দ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা। জেনারেল কাসেম পুরো আরব বিশ্বের বীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ক্যারিশম্যাটিক কমান্ডার হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচিতি পাওয়ার সাথে সাথে তার বুদ্ধি-সাহস, নেতৃত্বের গুণাবলী ও যুদ্ধক্ষেত্রের বিচক্ষণতার গল্প ছিল মানুষের মুখে মুখে। আর এসব কারণেই হয়তো আমেরিকা ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থারগুলোর এক নম্বর টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
কাসেম সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস বাহিনী ইরানের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী এর সক্ষমতা বিস্তৃত করে গোয়েন্দা, সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।