সাবেক মন্ত্রী খোকা নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে তার ছেলে ইশরাক হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন।
ইশরাক তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমার বাবা অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর ২০১৯-এ নিউইয়র্ক সময় রাত ২টা ৫০ মিনিট ও বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে পরবর্তী তথ্য জানানো হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকা গত ১৮ অক্টোবর থেকে নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ইশরাক শনিবার ইউএনবিকে বলেছিলেন, ‘শুরুতে তার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে তা খারাপ হতে থাকে।’
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, তার বাবার চিকিৎসা নেয়ার মতো অবস্থা আর না থাকায় চিকিৎসকরা কয়েক দিন আগে তা বন্ধ করে দেন।
খোকা চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যান এবং ২০১৭ সালে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে খোকাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায় বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তাকে (খোকা) দেশের মাটিতে দাফন করার জন্য আমাদের ও তার বন্ধুদের বলেছেন। তার ছেলে সকালে (রবিবার) আমাকে টেলিফোনে তার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার কথা জানিয়েছেন।’
পরে ওই দিনই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম জানান, খোকার পরিবার ট্রাভেল পারমিটের জন্য আবেদন করলে তার ব্যবস্থা করতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন প্রস্তুত আছে।
এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে খোকার পরিবার ট্রাভেল পারমিটের জন্য আবেদন করলে আমাদের মিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি এবং তার স্ত্রীর যেহেতু পাসপোর্ট নেই সেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে ফেরার এটাই একমাত্র ব্যবস্থা। আমি আমাদের নিউইয়র্কের কনসুলেটে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে, খোকার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সেই সাথে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী শোক জানিয়েছেন।
১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্ম নেয়া খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন এবং পরে বিএনপিতে যোগ দেন ও দলের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হন।
খোকা ১৯৯১ সালে সূত্রাপুর-কোতোয়ালি আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে তাকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বানানো হয়। তিনি ১৯৯৬ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে আবারও সংসদ সদস্য হন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের কয়েক দিন আগে সাবেক মন্ত্রী খোকাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন, কিন্তু চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতার কারণ শনাক্ত করতে পারেননি। সেখান থেকে পরে ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসা করানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান খোকা।