এ ক্যাম্পে দেশের পাঁচজন প্রখ্যাত ও বিশিষ্ট শিল্পী নিজ নিজ স্টুডিও থেকে একই সময়ে গ্যালারি কসমসের ফেসবুক পেজের লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভার্চুয়াল ইভেন্টে সরাসরি ছবি আঁকেন এবং তাদের চিত্রকর্ম, মহামারিতে চারপাশের বর্তমান পরিস্থিতি, সামাজিক সচেতনতার গুরুত্ব ও অন্যান্য শিল্প-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সেই সাথে হাজারো দর্শককে স্টুডিও ঘুরিয়ে দেখান।
খ্যাতিমান পাঁচ শিল্পী বীরেন সোম, মোহাম্মদ ইউনুস, কনক চাঁপা চাকমা, আনিসুজ্জামান আনিস এবং বিশ্বজিৎ গোস্বামী প্রত্যেকে দুটি করে মোট ১০টি চিত্রকর্ম তৈরি করেন। দেশের প্রখ্যাত শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারেরও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পারিবারিক কিছু জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় তিনি ক্যাম্পে যোগ দিতে না পারলেও তার শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং এ মহৎ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেছেন।
তাহমিনা এনায়েত, পরিচালক, গ্যালারি কসমস ও কসমস-আতেলিয়ার৭১, এবং হিডেন হার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সুনেহরা জোহুরা ইসলাম ভার্চুয়াল আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেন। অনলাইন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সৌরভ চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ আর্টিস্টিক ম্যানেজার, গ্যালারি কসমস ও কসমস-আতেলিয়ার৭১।
এ উদ্যোগের বিষয়ে বলতে গিয়ে তাহমিনা এনায়েত বলেন, ‘সারা বিশ্বে জুড়ে থাকা প্রত্যেকেই এ মারাত্মক মহামারির কারণে এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। তবে, আমাদের বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা, যারা দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের নিবেদিত রয়েছেন তারা মহামারি মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্যও আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তাদের এ শিল্পকর্মগুলো সত্যই আমাদের কর্মশক্তিকে আরও উজ্জীবিত করেছে। আমরা, গ্যালারি কসমসের পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ না দিলেই নয় এবং সেই সাথে আমরা এ উদ্যোগে অংশ নেয়া সব শিল্পীদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় খ্যাতিমান বাংলাদেশি উদ্যোক্তা, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পের পৃষ্ঠপোষক এবং কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুল্লাহ খান ভার্চুয়াল আর্ট ক্যাম্প আয়োজনের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে লকডাউন চলাকালে আমরা আমাদের ভেতরের সুপ্ত সৃজনশীল শক্তিকে দমিয়ে বা হৃদয়কে বন্ধ করে দিতে পারি না। আমি এ অনন্য উদ্যোগে অংশ নেয়া সব শিল্পী এবং গ্যালারি কসমস, হিডেন হার ফাউন্ডেশন এবং সব কলাকৌশলীকে আন্তরিক অভিবাদন জানাতে চাই। গ্যালারি কসমস এর আগেও বিভিন্ন ইস্যু যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা শরণার্থী, ভাসমান শিল্প, কাঠ-ভিত্তিক চারুকলা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। তবে এটা একটি অনন্য বিষয় যা এর আগে এ দেশে কখনও করা হয়নি। এ মহৎ জনহিতকর অনুষ্ঠান এবং অসাধারণ এ উদ্যোগের সাফল বাস্তবায়ন দেখে অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত।’
হিডেন হার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সুনেহরা জোহুরা ইসলাম বলেন, ‘গোটা বিশ্ব ধমকে গেছে, কোনো কিছুই চলছে না এবং মানুষ তাদের জীবনে প্রফুল্লতার খুব অভাব বোধ করছে। আমি ও আমরা এ প্রথম অনলাইন লাইভ আর্ট ক্যাম্পের অংশ হতে পেরে আনন্দিত। এ উদ্যোগ শুধু ঘরে বন্দী থাকা মানুষদেরই উজ্জীবিত করবে না, সেই সাথে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশের শিল্পী সম্প্রদায়ের কাছে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়াও, এ শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করে যা আয় হবে তা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হবে।’
মহৎ এ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে নিজেদের আনন্দের কথা তুলে ধরেন অংশ নেয়া শিল্পীরা।
প্রবীণ শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম চলমান সংকটকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করেন। ‘আমরা এর আগে কখনই এ জাতীয় মহামারি ও সংকট মোকাবিলা করিনি।’
তবে নিজেদের সৃজনশীল শক্তি ও কর্মস্পৃহার মাধ্যমে এ মারাত্মক মহামারি কাটিয়ে ওঠা এবং সামনে আরও ভালো দিন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ শিল্পী।
দেশের খ্যাতিমান শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা বলেন, ‘আমাদের নতুন স্বাভাবিকতার সাথে মানিয়ে নিতে হবে এবং একই সাথে আমাদের সৃজনশীলতাকে লালন ও প্রকাশ করতে হবে। কসমস ফাউন্ডেশন এবং হিডেন হার ফাউন্ডেশনের এ প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল আর্ট ক্যাম্পের উদ্যোগ গত কয়েক মাস ধরে আমাদের বাড়িতে বন্ধী থাকা অভ্যস্থতাতে একটু প্রফুল্লতা নিয়ে এসেছে।’
দেশবরেণ্য প্রবীণ শিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস সম্মুখ যোদ্ধাদের চেষ্টার প্রশংসা করার পাশাপাশি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সকলেই চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক এবং অন্যান্য পেশাজীবীসহ আমাদের সম্মুখ যোদ্ধাদের অবিরাম প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি। প্রতিনিয়ত তারা আমাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শিল্পী হিসেবে আমাদেরও কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে এবং আমাদের শৈল্পিক কাজ তুলে ধরার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’
প্রখ্যাত ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ গোস্বামী বলেন, ‘আর্ট উইথ স্পিরিটস দ্য আর্ট’ শীর্ষক এ আর্ট ক্যাম্প একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আর্ট ক্যাম্পে শিল্পীদের চিত্রকর্ম বিক্রি থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হবে, এ জন্য মহামারি চলাকালে এটি সমাজের সর্বাধিক কার্যকর ও সৃজনশীল উদ্যোগ। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে গর্বিত।’
মহামারিতে আক্রান্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহে কসমস ফাউন্ডেশন এবং হিডেন হার ফাউন্ডেশন এক সাথে শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।