সোমবার মধ্যরাত থেকে ২১ দিনের জন্য অবরুদ্ধ থাকবে বন্দর নগরীর এ এলাকাটি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা এ তথ্য জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১০টি ওয়ার্ডকে গত সোমবার রেড জোন ঘোষণা করার পর সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন করোনা প্রতিরোধ কমিটির নেতারা।
তারা বলেন, কমিটির সাথে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারিভাবে ১০টি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করায় সবগুলোকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হবে।
এর আগে, রবিবার নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের সাথে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ১০টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে। সেসব ওয়ার্ডের মধ্যে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড ছাড়াও ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ৩৭ নম্বর উত্তর-মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর এবং ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর রয়েছে।
চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা বলেন, লকডাউন চলাকালীন অধিবাসীরা নিজের এলাকায় থাকবেন এবং বাইরের কেউ ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যারা ঘরে থাকবেন, তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহল্লাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তা তদারকি করবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বরে কল করলে চাহিদা মোতাবেক ন্যায্যমূল্যের খাদ্য, ওষুধপত্রসহ নিত্যপণ্য পৌঁছে দেয়া হবে। লকডাউনের এলাকায় চলবে না গণপরিবহন, থাকবে না স্টপেজ। তবে শুধুমাত্র রাতে মালবাহী যান চলতে পারবে।
তিনি বলেন, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ। তবে এ মহাসড়ক লকডাউনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। শুধু লকডাউন এলাকায় থামতে পারবে না। যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। দূরপাল্লার পরিবহন স্টেশন লকডাউন এলাকা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে।
এছাড়া উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে প্রায় ১৫০ কলকারখানা আছে। সিটি গেট, কৈবল্যধাম মন্দির এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামও এ ওয়ার্ডে অবস্থিত। কৈবল্যধাম রেলস্টেশন ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম রেলওয়ে স্টেশন নামে দুটি রেলস্টেশন আছে ওয়ার্ডটিতে। সবকিছুই থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
উত্তর কাট্টলী ছাড়া নগরীর আরও নয়টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলোতে পর্যায়ক্রমে লকডাউন কার্যকর করা হবে।
জাতীয় গাইডলাইন অনুসারে চট্টগ্রামে প্রতি লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন সংক্রমিত হওয়া এলাকাগুলোকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে নগরীর চকবাজার ওয়ার্ডে সর্বশেষ ১৪ দিনে সর্বোচ্চ ১৬১ জন, কাট্টলী ওয়ার্ডে ১৪৫ জন এবং উত্তর হালিশহরে সংক্রমিত হন ১০৫ জন।
লকডাউনে মুদি, ওষুধ, নিত্যপণ্যের বাজার ও দোকান বন্ধ থাকবে। তবে জোন কমিটি তা হোম ডেলিভারি দেবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও হোম ডেলিভারি দেবে। লকডাউন এলাকায় কোনো বস্তি থাকলে তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই এলাকায় আকস্মিকভাবে কোনো লোক কর্মহীন হলে তাকেও খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তি ওএমএস, মানবিক সহায়তা বা অন্য কোনো সামাজিক সহায়তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তিনি ত্রাণ সহায়তা থেকে বাদ যাবেন।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবখানে লকডাউন কার্যকর করব। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে বেছে নিয়েছি। লকডাউন থাকা অবস্থায় যেহেতু কেউ ঢুকতে এবং বের হতে পারবে না সেহেতু চকবাজার ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রয়েছে। তাই সেখানে কীভাবে লকডাউন কার্যকর করব সেটা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’