জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক ও দ্বীপচর বন্যার পানিতে এক মাস ১০ দিন লড়াই করে বানভাসি প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩২টি পয়েন্টে সাত কিলোমিটার নদী ভাঙন হয়েছে। বন্যায় বীজতলা, আউশ, পাট, মরিচ ও শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫০০ বসতভিটা, পাঁচটি স্কুল। ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসিদের ত্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করা থাকায় এবং শিশুদের দিকে নজর না দেয়ায় বানের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৭ শিশুর।
এছাড়াও রাজারহাটের বুড়িরহাট স্পার, সদরের সারোডোবের বিকল্পবাধ বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক পরিবার।
অপরদিকে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুর হেলান স্পারটি পানি উন্নয়ন বোর্ড শত চেষ্টা করেও ভাঙন থেকে রক্ষা করা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এবারে বন্যায় চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুব উপজেলা শহর পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে চিলমারী উপজেলা শহরের ১০ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয় উপজেলা শহরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার চিলমারী উপজেলা শহরের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে চিলমারী উপজেলাকে বন্যার পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা রোধ করতে ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সাথে একটি রেগুলেটর স্থাপন করা হবে। যাতে করে বন্যার পানি উপজেলা শহরে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও ১৫ ভেন্টের রেগুলেটর দিয়ে তা নদীতে বের করে দেয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, চিলমারী উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় গত দুই বছর ধরে বন্যার পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আসছে। এর ফলে দীর্ঘ সময় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলা শহরের বাসিন্দাদের।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ৬০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
এসময় কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তারাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম, চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বীক্রম, চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।