তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের বিশেষ বছরে আমরা মানুষের হাতে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করতে পারছি। আমি বিশ্বাস করি, এটি নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও একবার আলোকিত করবে।’
বুধবার রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট পরিষেবা ও স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
এদিকে, প্রযুক্তি ভিত্তিক এ পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্টের জগতে নাম লেখালো বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার ই-পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল নতুন এ পাসপোর্টটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ই-পাসপোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
১১৮টি দেশ ইতিমধ্যে এটা প্রবর্তন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম বাংলাদেশই ই-পাসপোর্ট চালু করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ১১৯তম দেশ হিসেবে এটি চালু করলো।
শেখ হাসিনা জানান, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেবাকে সময়োপযোগী করেই তার সরকারের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, শোনা যায় যে প্রবাসীরা দেশে ফিরলে তাদের বিভিন্ন ধরণের হয়রানি করা হয়। ‘এ ব্যবস্থায় দেশে ফিরে এবং বিদেশে যাওয়ার সময় লোকেরা ভবিষ্যতে হয়রানির শিকার হবে না।’
দেশের জনগণ দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির সাথে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
‘আমাদের সব ধরনের কার্যক্রমে তাদের (প্রবাসী) সহায়তা আমরা পাই। কাজেই তারা যাতে কোনোরকম হয়রানির শিকার না হন, সেটাও যেন আমরা লক্ষ্য রাখি,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে ২৪ শে নভেম্বর আমরা বাংলাদেশের জনগণের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিতে শুরু করি। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আগামী ১০ বছরের জন্য আমরা এখন ই-পাসপোর্ট প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছি।
‘সরকার ৬৪টি জেলার ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস, ৩৩টি বর্হিগমন চেকপোস্ট এবং বিদেশে বাংলাদেশের ৭৫টি মিশনের ভিসা উইয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট, ভিসা এবং অভিবাসন পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে মানুষের দোরগোড়ায়,’ যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ।
শুরুতে ডিআইপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান ই-পাসপোর্ট সেবার ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন উপলক্ষে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি তুলে নিয়ে যান।
ডিআইপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ সেসময় ইউএনবিকে জানান, প্রাথমিকভাবে উত্তরা, যাত্রাবাড়ি এবং আগারগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা শুরু হবে।
পর্যায়ক্রমে ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস এবং ৮০টি বিদেশি মিশনে চালু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জার্মান সংস্থা ভেরিডোস জিএমবিএইচ দেশে ই-পাসপোর্ট এবং ই-গেটে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) মতে, বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ইস্যুকারী ১০০ টিরও বেশি দেশ এবং বেসরকারি সংস্থা রয়েছে এবং বিশ্বে ৪৯০ মিলিয়ন ই-পাসপোর্টধারী লোক রয়েছে।
প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার’ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ডিআইপি পুরো প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। ই-পাসপোর্ট সেবার সাথে সাথে অনলাইনের মাধ্যমে অভিবাসনের আনুষ্ঠানিকতারও পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে।
জার্মানিতে দুই মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। যারা প্রথমে আবেদন করবেন তাদের পাসপোর্ট জার্মানি থেকে তৈরি করা হবে। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ এবং ১০ বছরের জন্য হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং জার্মানি ভেরিডোস জিএমবিএইচ সংস্থা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।