বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।
তিনি খেলাপি ঋণের তথ্য আদালতে সিলগালা অবস্থায় উপস্থাপন করেন। তবে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি বা অর্থের পরিমাণ কত তা আদালতে প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।
এদিকে মোট ঋণের দুই শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে একজন ঋণখেলাপি ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নীতিমালার কার্যক্রমের ওপর ইতিপূর্বে দেয়া স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও দুই মাসের জন্য বাড়িয়েছে আদালত।
ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয়ে তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে হিউম্যান রাউটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইআরপিবি) গত জানুয়ারিতে রিট করে।
রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে।
রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপির তালিকা দাখিল না করায় গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে তা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।
পরবর্তীতে গত ১৬ মে হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণখেলাপিদের তালিকা, কী পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে, ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার তথ্য আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দেয়।
এ অবস্থায় ওই দিনই (১৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করে। পরে রিটকারীর এক আবেদনে গত ২১ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল এক মাসের জন্য। সে অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী হিসেবে আদালতে সিলগালা অবস্থায় ওই প্রতিবেদন জমা দেন।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।