বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান।
সংগঠনের উপদেষ্টা ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী দাবিগুলো তুলে ধরেন।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অনেক পত্রিকা আছে যেগুলো নিয়মিত বের হয় না। যেদিন ক্রোড়পত্র বা বিজ্ঞাপন পায় সেদিন বের হয়, কিন্তু এগুলো দৈনিক পত্রিকা। এর ফলে নিয়মিত যেসব পত্রিকার বের হয় তাদের স্বার্থহানি হয়। অনিয়মিত বের হওয়া পত্রিকা দৈনিক পত্রিকা হতে পারে না। এটির সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি, সে জন্য অনেকে আমার ওপর অসন্তুষ্ট। এখানে নিয়মিত এ ধরনের পত্রিকায় (নামসর্বস্ব) বিজ্ঞাপন যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো, সেটি অনেকটা কমাতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: টিভি-পত্রিকার নিবন্ধন গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত নীলনকশা: টিআইবি
সম্পাদকের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে- এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত না হয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বহু মানুষ আছেন যারা মেট্রিক পাস, কিন্তু এমএ পাস এমনকি পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের চেয়েও ভালো লেখেন। তাদের সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা আছে।
‘রবি ঠাকুর, কবি নজরুল তো মেট্রিক পাসও করেননি। বিল গেটসকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেল করার জন্য বের করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের দেশেও এ ধরনের বহু সাংবাদিক, লেখক আছে যাদের বড় ডিগ্রি নেই, স্নাতক ডিগ্রি নেই। সে জন্য ডিগ্রি পাস হতেই হবে এটি বলে বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়া সঠিক হবে না। তবে সম্পাদক হতে হলে সাংবাদিক হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্চনীয়, এর সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। একই সাথে তাকে পূর্ণকালী সম্পাদক হতে হবে তার সঙ্গেও একমত,’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
সম্পাদক ফোরামের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে- সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়াতে হবে। ই-টেন্ডারিংয়ের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞাপনসহ অন্য সব সরকারি বিজ্ঞাপন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দুটি এবং জাতীয় পর্যায়ে ছয়টি বাংলা দৈনিক ও দুটি ইংরেজি দৈনিকে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
সব সরকারি ক্রোড়পত্র ডিএফপির মিডিয়া অনুসারে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত যেসব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ঢাকার দুই সংবাদপত্র হকার্স সমিতিতে বিতরণ ও বিক্রির জন্য দেয়া হয় সেগুলোর বাইরের পত্রিকায় সরকারের বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রদান বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বণ্টনের বিষয়ে একটি ন্যায় ও নীতি ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বণ্টন করতে হবে এবং প্রতিটি ক্রোড়পত্র অন্তত ৫০ পত্রিকায় প্রদান করতে হবে।
আরও পড়ুন: নিবন্ধনে অগ্রাধিকার পাবে দৈনিক পত্রিকার অনলাইন ভার্সন: তথ্যমন্ত্রী
সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা নির্ধারণে বর্তমান ব্যবস্থাকে সংশোধন করে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে এবং একটি কমিটির তদারকির মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই কমিটিতে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করতে হবে।
সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল বিজ্ঞাপন প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ দিনের বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদপত্র বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যখন কোনো কমিটি গঠন কবে সেখানে সম্পাদক ফোরামের প্রতিনিধি আন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পত্রিকার প্রকৃত সার্কুলেশন যাচাই করে মিডিয়া তালিকাভুক্ত করতে হবে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং সম্পাদক ফোরামের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।