ওইদিন দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা সীমান্তের কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর মৃত দেহ।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।
মা-বাবার সাথে ভারতে কাজ করতো ফেলানী। বিয়ের পিড়িতে বসতে ঘটনার দিন কুয়াশাছন্ন ভোর সোয়া ৬টার দিকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল এই কিশোরী। এসময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলেছিল তার নিথর দেহ। মেহেদীর রঙে হাত না রাঙাতে পারলেও বুলেটবিদ্ধ শরীর থেকে পিনকি দিয়ে বের হওয়া রক্তে পুরো শরীরই রাঙ্গিয়ে যায়।
এই ঘটনায় মুহূতেই বিশ্বব্যাপী গণমাধ্য তোলপাড় শুরু হয়। পরে কাঁটাতারের উপর ঝুলে থাকা ফেলানীর দেহ নামিয়ে নিয়ে যায় বিএসএফ। ময়না তদন্ত করে পরদিন ৮ জানুয়ারি শনিবার লাশ ফেরত দেয় ভারত।
এরপর বাংলাদেশে আরও এক দফা ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন হয় ৭৩ ঘণ্টা পর।
তৎকালীন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন কুড়িগ্রামে এসে ফেলানীর মা ও ভাই-বোনদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা এবং কঠোর গোপনীয়তায় মধ্য দিয়ে বিকেলে নিহত ফেলানীর মা ও ভাই-বোনদের বাংলাদেশে ফেরত দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ফেলানি হত্যার ঘটনায় ভারতে বিগত ৮ বছরে বেশ কয়েকবার বিচারিক কাজ শুরু হলেও তা আজও শেষ হয়নি। এতে হতাশ ফেলানীর পরিবারসহ স্থানীয়রা। এখন তারা ন্যায় বিচারের আশায় বুক পেতে আছেন।
হাতে মেহেদী রাঙাতে যে কিশোরী মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন তার মা, সেই ফেলানী বিএসএফ’র গুলিতে চিরবিদায় নিয়ে শুয়ে আছে ৮টি বছর ধরে। কবরের পাশে বসে মা জাহানারা বেগম আর বাবা নুর ইসলাম নুরুর হাহাকার করা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই।
ফেলানীর পরিবার জানায়, সরকারিভাবে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা দেয়া হচ্ছে না। এছাড়াও বারবার মেয়ের হত্যা মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও হতাশ তারা।
জানা গেছে, সর্বশেষ ফেলানী হত্যা ও ক্ষতিপুরণের শুনানি রিট আবেদন গ্রহণ করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আগামী ১৮ জানুয়ারি দু’টি রিটের শুনানির দিন ধার্য করে।
এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও পারিবারিকভাবে ফেলানীর মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।
তবে মৃত্যু বার্ষিকীর আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন।