সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনের করা এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামের বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় এক টেলিভিশন চ্যানেলের সিনিয়র প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্বাধীন কিংবা বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেছিলাম। আজ সেই রিটের শুনানি নিয়ে বিষয়টি খুঁজে বের করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে আদালত। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
একই সঙ্গে গ্রন্থের মেধাস্বত্ব ও গ্রন্থস্বত্ব রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিক নাজমুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নামের বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্বাধীন কিংবা বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিটে বঙ্গবন্ধুর নামের বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
রিটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’ ও ‘স্বাধীকা পাবলিশার্স’ এবং ওই সাংবাদিক ও তার স্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, মুজিববর্ষে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর জন্য আটটি বই কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং ‘৩০৫৩ দিন’ নামের দুটি বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
এ দুটি বইয়ের পাশাপাশি অধ্যাপক নাসরিন আহমদ সম্পাদিত ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটিরও মেধাস্বত্ব চুরি করে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’ ও ‘স্বাধীকা পাবলিশার্স’ নামে দুটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
এদিকে এসব বই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে বিক্রি করা হয়। বইয়ের ছাড়পত্র দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাই নাজমুল হোসেনের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে রিটে বিচার বিভাগীয় অথবা স্বাধীন তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, অবাক করার বিষয় হলো এই দুর্নীতি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামের বই দিয়ে। এটা কী সহ্য করা যায়। বঙ্গবন্ধুর নামের বই নিয়ে যদি দুর্নীতি হয় আর এই সরকার যদি বসে থাকে তাহলে মানুষ সন্দেহ করবে।
সুমন বলেন, তিনি (সাংবাদিক) এ বই বিক্রি করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে এবং বইটি ছাড় দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যে সাংবাদিকের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এটা অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া কখনই সুযোগ হয়নি।
আইনজীবী সুমন বলেন, এই সাংবাদিক আরেকজনের বই অর্থাৎ কারা অধিদপ্তরের বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব এবং মেধাস্বত্ব চুরি করে আবার মন্ত্রণালয়ের কাছেই বিক্রি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নিজ দলের লোকদের ব্যাপারে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে কঠোর অবস্থান এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। এ অবস্থায় এসে ওই সাংবাদিককে কেন এখনো ধরা হচ্ছে না।