বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জের মধ্যে যাত্রী সার্ভিস (সি-ট্রাক) চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল ঘাটে এই যাত্রী সার্ভিস এর উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সী-ট্রাক শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাদ মাদারগঞ্জ ও সারিয়াকান্দি নৌরুটে চলাচল করবে। এই নৌরুটের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। মাদারগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি যেতে সময় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। সী-ট্রাকটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২০০ জন। যাত্রী প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা।
উদ্বোধনের পর নৌ প্রতিমন্ত্রী সি-ট্রাক যোগে সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাটে পৌঁছান। সেখানে তিনি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, কোন সরকারই সারিয়াকান্দিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। সারিয়াকান্দিকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার আপনাদের ভাত দিয়েছে, কাপড় দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে, আপনাদের থাকার জায়গা দিয়েছে, বিনামূল্যে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২২ বছরেও সংস্কার হয়নি কুমিল্লার জগতপুর-সাদকপুর সড়ক
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী শাসন না, নদী ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নান্দনিক বাংলা গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আমরা যমুনা করিডোর প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, সারাদেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া পায়রা বন্দর এলাকায় নৌবাহিনীর ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন দেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এদেশে বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে।
সারিয়াকান্দি-সোনাতলা আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট বাকি বিল্লাহ, বগুড়া জেলা পরিষদ সদস্য ডা. মকবুল হোসেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
আরও পড়ুন: বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ
উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে এই সার্ভিস (সী-ট্রাক) চালু করা হয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হবে। বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁও, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর জনসাধারণ অতি দ্রুত এবং অল্প খরচে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনও সম্ভব হবে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সাথে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র উপায়। আলোচ্য রুটে যাত্রী সার্ভিস চালুর ফলে বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বিতীয় মাধ্যম হবে। ফলে সড়ক ও রেল পথের ওপর অতিরিক্ত চাপ হ্রাস পাবে এবং পণ্য পরিবহনসহ যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। পর্যায়ক্রমে অবকাঠামো উন্নয়নপূর্বক এ রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে যানবাহন পারাপারের সুবিধা সৃষ্টি করা হবে।
বিআইডব্লিউটিসি অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় এবং সী-ট্রাক সার্ভিস এর মাধ্যমে যাত্রীবাহী সার্ভিস দিয়ে থাকে। এছাড়া ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করে। বর্তমানে এর বহরে রয়েছে অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ ছয়টি, উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ পাঁচটি, সী-ট্রাক ১২টি এবং ফেরি ৫৩টি।
আরও পড়ুন: ফি মওকুফের দাবিতে বরিশালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ