অর্থাৎ যে পরিমাণ গাছ কাটা হবে তার চেয়ে দুই থেকে পাঁচগুন বেশি গাছ রোপন করতে হবে। একইসঙ্গে ‘ক্ষতিপূরণ বনায়ন’ ব্যাতীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আদালত।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেন।
এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে তেলের ডিপো নির্মাণ; মানিকগঞ্জ, সিঙ্গাইর, হেমায়েতপুর সড়কের গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ; চাঁদপুর ইউনিয়ন, গাজীপুরের কাপাশিয়ায় প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং সংরক্ষিত গজারি বন কেটে গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ বনভূমির বিপরীতে ‘ক্ষতিপূরণ বনায়ন’ বাস্তবায়নে আগামী ছয় মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিগত এক বছরে অন্তঃত ৪টি ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানের সংরক্ষিত, প্রাকৃতিক ও সৃজনকৃত বন রূপান্তরের সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ এবং বন বিভাগ। ফলে দেশের বিদ্যামন ১৩% বনভূমি আরও সংকুচিত হচ্ছে যেখানে সরকারির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে বনভূমির পরিমাণ থাকতে হবে ২০%।
বন বিধ্বংসী এমন সিদ্ধান্ত পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনকে ব্যহত করছে বলে বাদী আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়া, এবং “দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে” এমন শর্তে মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই মন্ত্রী পরিষদ/বন বিভাগ মহেশখালী, কক্সবাজার-১৯১.২৫ একর প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে তেলের ডিপো নির্মাণ; মানিকগঞ্জ, সিঙ্গাইর, হেমায়েতপুর সড়কের গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ; চাঁদপুর ইউনিয়ন, কাপাশিয়া, গাজীপুর প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং গাজীপুর সংরক্ষিত গজারি বন কেটে গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর অনুমোদন প্রদান করেছে ও এসব ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দুইগুণ গাছ “ক্ষতিপূরণ বনায়ন” হিসেবে রোপিত হবে বলে মন্ত্রী পরিষদে সিদ্ধান্ত হলেও তা কোনো ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়নি যা বন্যপ্রাণি ও পরিবেশের ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এসব বিষয় যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করে। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আলী মুস্তাফা খান শুনানি করেন।
আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, আদালত উপরোক্ত দেশের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। রুলে বনভূমি, বন ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত অঞ্চল-এর বিরুদ্ধ ব্যবহার রোধ করতে না পারা কেন বেআইনী, আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং বাংলাদেশের সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এবং সংগতিপূর্ণ আইন প্রণয়ন, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণ, যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ও বনভূমির বিকল্প বনায়ন নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত।
পরিবেশ সচিব, বন সচিবসহ ২০ জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।