প্রায় চার বছর আগে ‘শনিবারের পাখি’ নির্মাণ করেছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সিনেমার চিত্রনাট্য গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা অবলম্বনে তৈরি। নির্মাণ শেষ হলে সিনেমাটি সেন্সরের জমা দিলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমনকি সেন্সর বোর্ড ‘শনিবারের বিকেল’কে নিষিদ্ধ করে।
তবে থেমে যাননি ফারুকী। এ নিয়ে আপিল করেছিলেন তিনি। সেই সময় পেরিয়েছে প্রায় ৩ বছর। এখনও তার কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিন ধরে ‘শনিবারের বিকেল’-এর মুক্তি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই পোস্ট করেছেন।
(৭ আগস্ট) ফারুকী তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসের এক অংশে লেখেন, ‘আমরা ফুল, পাখি, লতা, পাতা নিয়া ছবি বানাইলে ঠিক আছে! এমন কিছু বানানো যাবে না যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়। কিন্তু আমিতো চিরকাল সেইসব গল্পই বলে আসছি যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। আমি তো অন্য কিছু পারি না। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে?’
ফারুকী আরো কয়েকটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ‘শনিবারের বিকেল’ প্রসঙ্গে তুলে এনেছে। তিনি (৮ আগস্ট) লিখেছেন, ‘আমার কত রাত গেছে অনিদ্রায়। কত দিন গেছে ক্ষমতাবানদের দুয়ারে হাত মুছতে মুছতে। কত দুপুর গেছে রাগে অন্ধ হয়ে। কত বছর গেছে নিজের চিৎকার নিজেই গিলে ফেলে। ধন্যবাদ, হে রাষ্ট্র! ফিল্মমেকিংয়ের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তো আর নাই। সুতরাং, ঠিকই আছে।’
ফারুকী তার নির্মিত কয়েকটি সিনেমার কথা উল্লেখ করে আরো লেখেন, ‘তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে ঠিকঠাক সাইজ করার জন্য। ব্যাচেলরের সময় তুমি ভাবছো আমার ছবি সমাজ নষ্ট করে ফেলবে! মেড ইন বাংলাদেশে ভাবছো এই ছবি দেশ ধ্বংস করবে! সুতরাং দেড় বছর সেন্সর জেলে রাখছো! ঠিকই আছে। থার্ড পারসন সিঙ্গুলারের জন্য সেন্সরের জেলটা একটা বোধ হয় কম হয়ে গেছিলো। অপরাধ বিবেচনায় ঐ ছবি আটকে রাখা উচিত ছিলো তিন বছর। যাই হোক শনিবার বিকেলে সেটা পুষিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। উঠতে বসতে এইভাবে পিটিয়ে ছাল তোলার জন্য কৃতজ্ঞ।’
স্ট্যাটাসের শেষে ফারুকী লেখেন, ‘কিন্তু এইভাবে বোধ হয় পুরোপুরি হবে না। কারন একটা ছবি ভাবা হয়ে গেলে তো সেটা দুনিয়াতে এগজিস্ট করে গেলো। বানানো হলে তো আরো শক্ত ভাবে এগজিস্ট করলো। আজ হোক কাল হোক সেটা তো দেখে ফেলবে মানুষ। তাই বলি কি এমন কিছু একটা করো যাতে ভাবনাটাও বন্ধ করে দেয়া যায়। এমন ওষুধ আবিষ্কার করো, হে রাষ্ট্র, যাতে কারো মনে ক্ষোভ জন্ম না নেয়! কারন সম্মিলিত ক্ষোভের চেয়ে বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র নাই! আরো খেয়াল রাখতে হবে ক্রমাগত চাপে এই ক্ষোভ যেনো ঘৃণায় রূপ না নেয়। কারন কে না জানে ঘৃণার চেয়ে বড় কোনো মারনাস্ত্র নাই।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবারের বিকেল’-এ অভিনয় করেন বাংলাদেশ থেকে জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার, গাউসুল আলম শাওন, নাদের চৌধুরী। এছাড়াও রয়েছেন ভারতের পরমব্রত চ্যাটার্জি ও ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি।
পড়ুন: ২৫০ বছর ধরে ‘কারাগার’-এ চঞ্চল চৌধুরী
লুঙ্গি পরা দর্শক সামান আলী সরকারকে আমন্ত্রণ জানাল স্টার সিনেপ্লেক্স