দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাগেরহাটে নতুন ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এমন প্রত্যাশা নতুন প্রজন্মের ভোটারদের। তাদের ভোটে নির্বাচিতরা সংসদে গিয়ে দেশের উন্নয়ন করবেন এবং মানুষের ভাগ্য বদলে দেবেন- এমনটিই মনে করেন নতুন ভোটাররা।
প্রার্থীদের বয়স এবং যোগ্যতা নিয়েও নতুন ভোটাদের মতামত রয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যেদের কাছে এলাকার নানাবিধ উন্নয়নের দাবি নতুন ভোটারদের- দেশ হবে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত। আর দেশের প্রতিটি নাগরিক হবেন স্মার্ট এবং সরকার দেশের যুব সমাজকে শক্তিতে পরিণত করবে- এমন আশা নতুন প্রজম্মের ভোটারদের।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে নির্বাচন নিয়ে বাগেরহাটের হাট-বাজার এবং চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পথে-প্রান্তে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনায় সরব নানা বয়সের ভোটাররা। তবে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
বাগেরহাটের ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২৮ জন।
বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন নতুন নারী-পুরুষ ভোটারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ইউএনবির এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা নানা মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ হবে স্মার্ট, সেইসঙ্গে দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলবে নতুন সরকার- এমন প্রত্যাশা নতুন ভোটারদের। প্রার্থী পছন্দের নানা মাপকাঠি রয়েছে নতুন ভোটারদের মধ্যে। সেই সঙ্গে এলাকার নানামুখী উন্নয়ন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দেশকে এগিয়ে নিতে নানা পরামর্শ দিয়েছে নতুন ভোটাররা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করা, প্রাথমিক থেকে শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বেকারত্ব ঘোচাতে কর্মসংস্থানের দাবি নতুন ভোটারদের।
চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি নতুন প্রজম্মের ভোটারদের। দেশ সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার ওপর জোর দিয়েছে নতুন ভোটাররা। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে কথা বলেছে নতুনরা।
নতুন ভোটাররা তাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য সড়ক যোগাযোগ, পানগুছি নদীর উপর সেতু, মোংলায় নদীর উপর সেতু নির্মাণ; বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, নদী-খাল পুনঃখনন, কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, সব ধরনের দুর্যোগ থেকে সাদাসোনাখ্যাত চিংড়ি শিল্পকে রক্ষাসহ নানা ধরনের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন: সভাপতি ড. জাকির, সম্পাদক ড. মাসরিক
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার সেক মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৬ জন এবং নারী ভোটার ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮ জন।
নতুন ভোটার এক লাখ ৬৮ হাজার ২৪৮ জন। নতুন ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৪ হাজার ৭৮৫ জন এবং নারী ভোটার ৮৩ হাজার ১৬২ জন। ভোটাররা জেলার ৪টি আসনে ৪৮৮টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ইমন শেখ বলেন, তরুণ প্রজম্মের প্রার্থীরা তার কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বয়োবৃদ্ধদের থেকে যুবকরা সমাজে বেশি কাজ করতে পারে বলে তার ধারণা। শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাববে এমন প্রার্থী তার পছন্দ।
অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র শেখ হুসাইন বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট, অবকাঠামো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা দরকার। সেইসঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থী শেখ সাকের মাহমুদ প্রিন্স বলেন, ‘সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী প্রার্থী চাই। বিগত সময়ে দেখা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যারা জনগণের সম্পদ লুটে খাবে, আমরা এমন প্রার্থী চাই না।’
শিক্ষার্থী তাসলিমা বলেন, প্রার্থীদের অবশ্যই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নানাভাবে তাদের সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে হবে।
নাজমুস সাকিব, বিল্পব, আলামিন, মনিকাসহ আরো বেশ কয়েকজন নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নানাক্ষেত্রে যুবসমাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব ধরনের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করতে হবে সরকারকে। শিক্ষিত যুব সমাজকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকেরও দেশপ্রেম থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে ইনসানিয়াত বিপ্লবের করা রিটের শুনানি বুধবার