২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ পরিস্থিতির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপি হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সেসময় এটি ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে এবং পরবর্তী ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকলীন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ এখনো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে এবং যা এসব ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইএমএফ।
রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে এটিকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয় না।
দেশের ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ, মনসুরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ভুয়া ও মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণের অভিযোগে এক ডজন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করেছেন তিনি। যার কারণে খেলাপি ঋণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বড় ঋণখেলাপির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ও বেক্সিমকো গ্রুপ। শরীয়াহ ভিত্তিক দেশের শীর্ষ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ এস আলমের নিয়ন্ত্রাধীন ৯টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের তদন্ত করা হচ্ছে।