বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশটির নাগরিকদের আশ্রয়ের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে জার্মানিসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশ।
এ বিষয়ে সোমবার জার্মানির অভিবাসন ও রিফিউজি বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, (সিরিয়া থেকে) ৪৭ হাজারের বেশি (আশ্রয়ের) আবেদন এসেছে, যেগুলো অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। তবে দেশটির পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে আবেদনগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে ফের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোনিয়া কক বলেছেন, (বিদেশিদের) আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর দেশের পরিস্থিতিও মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সিরিয়ার বর্তমান অবস্থার মতো পরিস্থিতি যদি অস্পষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের আবেদনগুলো অগ্রাধিকার পায়।
জার্মান কর্মকর্তারা বলছেন, আসাদের পতন ২০১০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া সিরীয়দের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা বলার সময় এখনও আসেনি।
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে ৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৬ জন সিরীয় নাগরিক রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই কোনো না কোনো শরণার্থী বা অন্য ধরনের সুরক্ষিত মর্যাদা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নান্সি ফায়েজার বলেছেন, (আসাদ ক্ষমতায়) ফিরে আসবেন কিনা, সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা এখনই সম্ভব নয় এবং এই ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এটি অনুমান করাও ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন: দেশ ছেড়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ
এদিকে, জার্মানির প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সিরীয়দের আশ্রয় আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে বলেছেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শালেনবেয়ার্গ বলেন, ‘আশ্রয় ও পরিবারের পুনর্মিলন কার্যক্রম স্থগিত করতে প্রথমে সত্য প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ। (সিরিয়ায়) পরিস্থিতি শান্ত হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, যাতে আমরা দেখতে পারি কী ঘটছে এবং পরবর্তীতে এর কী প্রভাব পড়ে।
সিরিয়া থেকে পাওয়া আশ্রয় আবেদনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিতের কথা জানিয়েছে সুইডেনও। দেশটির অভিবাস সংস্থা বলেছে, আবেদনকারীদের নিরাপত্তা চাওয়ার কারণগুলো এই মুহূর্তে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
এই বিরতি কতদিনের জন্য, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার সময়ও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।
এছাড়া, সিরীয়দের বিষয়ে ফিনল্যান্ডও তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ফিনল্যান্ডের সরকারি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির অভিবাসন পরিষেবার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক আন্টি লেহটিনেন বলেছেন, এ (সিরীয়দের) বিষয়ে আবার কবে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নরওয়ের অভিবাসন অধিদপ্তর বলেছে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়ের আবেদন স্থগিত রেখেছে।
এ ছাড়াও, জার্মানির কার্যক্রম পদাঙ্ক অনুসরণ করার কথা বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়ের আবেদনগুলো স্থগিতের বিষয়ে কাজ করছি। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব।
ফ্রান্সে সিরিয়ার নাগরিকদের ৪৫০টি আবেদন বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।