শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশে ভাঙচুর করা হয়।
আরও পড়ুন: বায়তুল মোকাররমের সামনে ভাস্কর্যবিরোধী মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটল।
জাতির জনকের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ঘটনায় কুষ্টিয়াজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ভাস্কর্য চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন জেলা শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা গেছে রাত ২টার দিকে দুজন ব্যক্তি ভাস্কর্য ভাঙচুর করছেন। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ ধরনের নোংরা কাজ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং মদদ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। যে বা যারা ভাঙচুর করেছেন তাদের কাউকে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না।’
ইতোমধ্যে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলার ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে মানুষের কাছে এটি ‘শাপলা চত্বর’ হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শাপলার ভাস্কর্য ভেঙে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে নিচের দিকে জাতীয় চার নেতার ম্যুরালও থাকবে।
দরপত্রের মাধ্যমে যশোরের ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম এ নির্মাণের কার্যাদেশ পান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ১৭ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে মজমপুরের দিকে মুখ করে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল। শুক্রবার রাতে এ ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছিল। ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুকে যারা মানতে পারে না, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হচ্ছে।’
এ ঘটনার পর জেলার সবগুলো ভাস্কর্যে অতিরিক্ত নজরদারি শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর কালেক্টরেট চত্বরসহ জেলায় যতগুলো ভাস্কর্য আছে সবগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ভাস্কর্য নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রতিহত করা হবে: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী