নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র দুই নেতা জানান, শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দুই জোটের অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে শনিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রবিবার দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন।
গত সাধারণ নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি আগামী এক মাসের মধ্যে নির্বাচন পেছানোর জন্য রবিবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে চিঠি পাঠাবে।
ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানান, কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে ড. কামাল হোসেনের, যার মধ্যে রয়েছে এক মাসের মধ্যে তফসিল পেছানোর দাবি।
তিনি বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের দিকে একটি পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারেন ড. কামাল, যাতে ইসি তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
এছাড়া ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন তফসিল পেছানোর দাবিতে ইসির কাছে রবিবার চিঠি পাঠাবে। যাতে জোটের নেতারা সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চাইবেন।
২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি তার নিবন্ধিত জোট অংশীদারদের একটি সবুজ সংকেত দিয়েছে, তারা রবিবার নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি পাঠিয়ে অবগত করবে যে, বিএনপি জোটের সাথে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এবং তারা বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করবে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা বৈঠকে এ বিষয়ে মওদুদ আহমেদের সঙ্গে তর্ক করেন। তবে পরে অন্যান্য নেতারা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরকে বুঝিয়ে আশ্বস্ত করেন এবং জোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে দুই জোটের অংশীদারদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নির্ধারণ করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
তবে, বিএনপির নেতারা জানান, লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে মাঝপথে নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে নামতে পারেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কারণ এটি নির্বাচনের পক্ষের দল। কিন্তু আমাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখনও কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। কারণ সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সেজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রথমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে চাই।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার চেষ্টা করবে তাদের দল।
এছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিভিন্ন কূটনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে তারা। সরকার দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপের ফলাফল এবং দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে শিগগিরই কূটনৈতিকদের ব্রিফ করবেন দলের নেতারা।
বৈঠকে ২০ দলীয় নেতারা জানান, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও গণতান্ত্রিক লীগ ছাড়া জোটের সকল অংশীদাররা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
এদিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকা জামায়াতের প্রতিনিধি জানান, তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চান, জোটের সঙ্গে নয়।
তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী দুদিনের মধ্যে জানানো হবে।
বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের অংশীদার ও এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ইস্যু এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব নাকি বর্জন করব সে ব্যাপারে আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমাদের জোটের প্রধান অংশীদার বিএনপি দুই একদিনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে।’
অলি আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দিকে এখন মূল গুরুত্বারোপ করছে তাদের জোট। নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাকে মুক্ত করতে হবে।
এদিকে ২০ দলীয় দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে একই জায়গায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
তবে অসুস্থতার কারণে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যোগ দেননি ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় এবং নির্বাচনের দিন তাদের পক্ষে ফলাফল আনতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে চায়।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, দুই জোটের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনে যোগ দিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত ঐক্যফ্রন্টের তারেক রহমান তাদের ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছেন।
ইতিমধ্যে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ইশতেহার প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে বিএনপি।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তবে জোটের অংশীদারদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ২০১৭ সালের ১০ মে খালেদা জিয়ার উপস্থাপন করা ‘ভিশন-২০৩০’ এর আলোকে এবার দলের নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া করেছেন কয়েকজন দলীয় নেতা ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ তারিখ ২২ নভেম্বর। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত।