‘যেহেতু তারা (সরকার) পুলিশের ওপর নির্ভরশীল, তারা এই ধরনের অপরাধ করার পরও পুলিশ কর্মীদের শাস্তি থেকে ছাড় দিচ্ছে। রায়ে সেটাই প্রতীয়মান হয়েছে,’ বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়, এতে জনগণের ম্যান্ডেট নেই। সুতরাং, তারা জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য এই জাতীয় অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপির এই নেতা এসব কথা বলেন।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।
উল্লেখ্য, নুসরাত নিজ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এতে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হলে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।
সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসা ফখরুল জানান, তিনি সিঙ্গাপুরে দুদিন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং পরে অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। ‘আপনারা সবাই জানেন আমার বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। আমি তাদের (মেয়ের পরিবার) সাথে কিছুদিন কাটাতে দল থেকে ছুটি নিয়েছিলাম।’
তার অনুপস্থিতিতে ফখরুল বলেন, দেশে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। ‘আবরার হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা। এটি একটি ক্ষমাহীন অপরাধ।’
তিনি বলেন, এই ঘটনার জন্য সরকার পুরোপুরি দায়বদ্ধ। ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগ বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এবং পুরো দেশ এর বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য যেভাবে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ‘এটি অকল্পনীয়ও। আমি মনে করি এই ঘটনার জন্য সরকারের পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’
ভোলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করেন, ভোলায় পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে লোকজনের ওপর গুলি চালিয়েছে। ‘দেশে মত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই বলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে যা বলে এসেছি এটা প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, একের পর এক দেশে সংকট তৈরি হচ্ছে। কারণ ‘অনির্বাচিত’ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণের কাছে যার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
‘আমরা মনে করি, দেশের সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা এবং নিরপেক্ষ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।’
‘৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি’ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক মন্তব্য সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ‘আমি মেনন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি এতদিন পরে সত্য প্রকাশ করেছেন। সরকারের এখন পদত্যাগ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের বর্তমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ ‘বড় বড় দুর্নীতিবাজদের’ এতদিনেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।