মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বিএনপি নৈতিক সমর্থন করে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপি নৈতিকভাবে সমর্থন করে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার 'প্রত্যয়' স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন ও সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগ নাকচ করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: রেল করিডোর ও ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার: ফখরুল
তিনি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) যা বলছেন তা অযৌক্তিক। আন্দোলনে বিএনপির উস্কানি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না এবং বিএনপি আন্দোলনকারীদের ওপর নির্ভর করছে না।’
তিনি বলেন, দায়িত্বশীল দল হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী সম্পর্কে বিএনপি অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাবে।
তিনি বলেন, 'তারা (শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা) তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে । এখনও তা অব্যাহত থাকবে। আমরা কি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারি না?
শিক্ষকদের জন্য 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম বাতিল এবং সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে এনে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক আত্মঘাতী হবে: ফখরুল
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক আত্মঘাতী হবে: ফখরুল
নয়াদিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা ১০টি সমঝোতা স্মারককে 'দাসত্বের নতুন সংস্করণ' উল্লেখ করে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি অনতিবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
দলটি উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, ভারতকে একটি রেল করিডোর প্রদান করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
রবিবার (৩০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
ভারতের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা হবে বলে জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, 'জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া অবৈধ মাফিয়া সরকারের বর্তমান প্রধান শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এটা দাসত্বের নতুন সংস্করণ।’
ভারতকে যোগাযোগের নামে একটি করিডোর দেওয়া, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেললাইনের মাধ্যমে ভারতের এক অংশকে অন্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে এসব সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারতের দাসত্বের ফাঁদে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশকে আটকে ফেলার নিন্দনীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতীয় স্বার্থবিরোধী এ ধরনের চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।’
আরও পড়ুন: তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ফখরুল
ফখরুল অভিযোগ করেন, গণম্যান্ডেট ছাড়াই শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর আওয়ামী লীগের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের বিনিময়ে ভারতকে ঘুষ হিসেবে রাষ্ট্রবিরোধী সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আমরা আবারও বলতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী এসব চুক্তি জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। বিএনপি এসব দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে।’
গত ২১ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরের দ্বিতীয় দিনে, ঢাকা ও নয়াদিল্লি ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে যার মধ্যে সাতটি নতুন এবং তিনটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সংহত করতে পুনর্নবীকরণ করা হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, 'চিকেনস নেক' নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে ২২ কিলোমিটার পথ বাইপাস করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতীয় রেলপথকে সংযুক্ত করতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথ স্থাপন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বণ্টন-সীমান্ত হত্যা সমাধানে ব্যর্থ শেখ হাসিনা: ফখরুল
আজিজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী সরকার, সেনাবাহিনীর সুনাম কলঙ্কিত: ফখরুল
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, একজন সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার জন্য এই সরকার দায়ী। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তারা সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত।’
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
'উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে' জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জেনারেল আজিজের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন পরিবেশন করেছে। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাতির বদনাম করার, তার মর্যাদা ও সম্মান হ্রাস করার অধিকার কারও নেই।’
আরও পড়ুন: জেনারেল আজিজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সেনাবাহিনীকে জাতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু সরকারের কারণে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, এটা দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না।
র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। বরং তাদের কয়েকজনকে আইজিপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না এটা (নিষেধাজ্ঞা) কতটা প্রভাব ফেলবে।’
সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশের অন্য শক্তিগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক নয়, লজ্জা ও অস্বস্তিরও বটে।’
সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোট নিয়ে জনগণের আগ্রহ না থাকায় নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো উৎসাহ দেখছি না। নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলায় কোথাও নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ১৩ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
সরকার বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল ও পরাধীন দেশে পরিণত করে জাতির আত্মাকে ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘তথাকথিত উন্নয়নের নামে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কোথায় যাবে?'
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য যখন ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন, তখন বাংলাদেশ সরকার বা বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তাহলে আমরা কী বিশ্বাস করব?’
ভারতে এমপির মৃত্যুর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সে বিষয়েও তাদের দল নিশ্চিত নয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: এমপি আনোয়ারুলের হত্যাকারীরা বাংলাদেশি: ডিবি প্রধান
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলবে: জেল থেকে বেরিয়ে ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'জনগণের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুন: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় ফখরুল-খসরুর জামিন
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি, আন্দোলনেরও ক্ষতি হয়নি। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, সংগ্রাম করেছে। ‘ইনশাল্লাহ এই লড়াইয়ে তারা (জনগণ) জয়ী হবেই।’
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, জামিনের আদেশ কেরাণীগঞ্জের কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর পর বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে তারা কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জেলগেটে তাদের স্বাগত জানান দলের নেতাকর্মী ও দলের শীর্ষ দুই নেতার স্বজনরা।
ফখরুল ও খসরু কারা গেটে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আমীর খসরু বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ‘গণতন্ত্র ও জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফখরুল-খসরু জামিনে মুক্ত
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনার জন্য বিএনপিসহ সব গণতন্ত্রপন্থী দলের মনোবল যথেষ্ট শক্তিশালী।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলার সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় মির্জা ফখরুল ও খসরুকে জামিন দেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের আবেদনের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২৯ অক্টোবর ফখরুল, খসরুসহ বিএনপির ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
সমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি ও খসরুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়। গত ২৯ অক্টোবর ফখরুল ও ৩ নভেম্বর গুলশানের বাসা থেকে খসরুকে আটক করে পুলিশ। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে তাদের মুক্তির পথ সুগম হয়।
আরও পড়ুন: আজ মুক্তি পেতে পারেন ফখরুল-খসরু
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে রবিবার
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো রবিবার সকাল থেকে সারাদেশে ফের ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ শুরু করতে যাচ্ছে।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যও ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
রবিবার সকাল ৬টায় অবরোধ শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হবে। ৩১ অক্টোবর থেকে এটি হবে বিরোধী দলগুলোর নবম দফা অবরোধ কর্মসূচি।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশবাসী এবং বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।
সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ পরিবহনকারী যানবাহন অবরোধের আওতার বাইরে থাকবে।
আরও পড়ুন: সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের বিজয় নিশ্চিত: নজরুল ইসলাম খান
এর আগে বৃহস্পতিবারও বিরোধী দলের দিনব্যাপী হরতাল শেষ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে নতুন করে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, অন্যান্য বিরোধী দল যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে, তারাও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
ক্ষমতা ছাড়তে এবং নির্দলীয় প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধী দলগুলো আট দফায় অবরোধ পালন করেছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে তারা ২৯শে অক্টোবর দেশব্যাপী ভোর-সন্ধ্যা হরতালও পালন করে। যা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পর শেষ হয়।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ শুরুর আধা ঘণ্টা পর কাকরাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
শিগগিরই সহিংস সংঘর্ষ নয়াপল্টনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাঝপথে সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন: তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
৭ জানুয়ারির তফসিল বাতিলের দাবি বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের
প্রধান বিচারপতির বাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
আটকের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শনিবার দলের মহাসমাবেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পরে তিনি জানান, রাত ৮টার দিকে ফখরুলকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়।
রবিবার সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে আটক করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির হরতালের মধ্যেই ডিবি ফখরুলের গুলশান-২ এর বাসায় অভিযান চালিয়ে সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে আটক করে।
পরে তাকে ডিবির মিন্টু রোড কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, সকালে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের বাড়িতে এসে ফখরুলসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তাদের বাড়ির ভবন থেকে সব সিসিটিভি ক্যামেরা ডিভাইস ও ফুটেজ নিয়ে যায়।
রাহাত আরা বলেন, ‘১০ মিনিট পর তারা আবার ফিরে এসে তাকে (ফখরুল) তুলে নিয়ে যায়।’
আরও পড়ুন: ফখরুলকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি
তিনি বলেন, ‘ফখরুল খুবই অসুস্থ এবং তার চিকিৎসা চলছে।’
রাহাত আরা বলেন, ‘আমি মেনে নিতে পারছি না যে ৭৫ বছর বয়সী একজনকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। আশা করি জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেবে।’
শনিবার নয়াপল্টনে দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রতিবাদে রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়ার পর এ আটক করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত দুইজন নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হওয়ার পর হঠাৎ করে সমাবেশ স্থগিত করে ফখরুল হরতাল ঘোষণা করেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ শুরুর আধা ঘণ্টা পর কাকরাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দলটির নেতা-কর্মীরা।
সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও হামলা চালায় বিএনপি কর্মীরা।
নয়াপল্টনের চারপাশে সহিংস সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি হঠাৎ করে সমাবেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির ১৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় ৬ মামলা
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করেছে পুলিশ
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণ এবারও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ‘এ ডেমোক্রেটিক ফিউচার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’- শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহস নিয়ে রাজপথে থাকুন: ফখরুল
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় ফখরুল বলেন, আমরা এ দেশের সব রাজনৈতিক দল এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কারণ আমরা এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই।
বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর দমন-পীড়নের জন্য সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, জাতি এখন সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন দলের চরম প্রতিহিংসার কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এখন গুরুতর অসুস্থ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের তিন সাবেক সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৭০০ জনকে গুম করা হয়েছে। আমাদের ৪৫ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলার মুখোমুখি করা হয়েছে। আমাদের অনেককে নির্বাচনের আগে সাজা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।’
তিনি বলেন, সরকার দেশে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং বিরোধী দলগুলোকে ভোটদান থেকে দূরে রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে।
আরও পড়ুন: বর্তমান সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করতে আ. লীগের প্রতি ফখরুলের আহ্বান
বিএনপির একমাত্র পরিকল্পনা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, রাজপথ দখল নয়: ফখরুল
সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহস নিয়ে রাজপথে থাকুন: ফখরুল
সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দুর্গাপূজার পর দলের নেতা-কর্মীদের সাহস নিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) কৃষিবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা করেন এবং বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের গডফাদার।
দেড় দশক ধরে একই রকম দমন-পীড়নের শিকার হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের হুমকি ও হামলায় উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ১৫ বছরে আমাদের কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, বহু লোক গুম করা হয়েছে, ৫০ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিএনপির ৭৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে না পারলে জাতি, দেশ ও স্বাধীনতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে, তাই আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে সর্বস্তরের জনগণ এবং বাম-ডানে সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়ায় আন্দোলনের সাফল্যের আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: আ. লীগ নেতারা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন: রিজভী
তিনি বলেন, ‘শেষবারের মতো আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা দয়া করে সম্মানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করুন এবং একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালি দল’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম বৃদ্ধি নজিরবিহীন। সব দেশেই দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই বৃদ্ধি অবিশ্বাস্য ও নজিরবিহীন। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু এর প্রধান কারণ সরকারের জবাবদিহির অভাব।’
তিনি বলেন, সরকার ডিসি ও ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কিনছে। অথচ মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও শাকসবজি কিনতে পারছে না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় দেশের মানুষ ভোট ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) গতকাল (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে আপনি কী? আপনি সন্ত্রাসের গডফাদার ফাদার। আপনারা দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আপনি ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্ষমতায় থাকতে চান।’
আরও পড়ুন: সহজ জয়ের জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে আ. লীগ: ফখরুল
নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন: ফখরুল
চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন, পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (১৬ অক্টোবর) বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে শিগগিরই চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি।
তরুণদের সমাবেশে তিনি রাজপথে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা এবং অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য মুক্ত করা।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির যুব শাখার বিশাল সমাবেশ দুর্গাপূজার কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধী দলের চূড়ান্ত আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি, কারণ আমাদের অনেক ভাই তাদের জীবন ও রক্ত উৎসর্গ করেছে, আমাদের অনেক মা-বোন নির্যাতিত হয়েছে, আমাদের অনেক শিশু তাদের বাবাকে হারিয়েছে এবং আমাদের অনেক মা তাদের সন্তানদের হারিয়েছে। সুতরাং, আমাদের পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ বিএনপির এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল ক্রসিং পর্যন্ত চলা এই র্যালিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাল-সবুজ টুপি পরিহিত হাজার হাজার যুবক-যুবতী অংশ নেন। তাদের অনেককে মাথায় সাদা কাফন পড়ে সমাবেশে বসে থাকতে দেখা গেছে।
তরুণদের বিশাল সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, এই সমাবেশ অবশ্যই দেশের জনগণকে নতুন উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই ভয়ানক ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হব, যারা আমাদের বুকের ওপর বড় পাথরের মতো বসে আছে।’
শর্ত প্রত্যাহার করলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ কিনা, আপনাদের (আওয়ামী লীগ) এটা প্রমাণ করতে হবে। আমি বলছি আপনারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নন।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিকভাবে এনে সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রথমে দেশ ও জনগণের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন।
এই আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই জনগণকে সম্পূর্ণ প্রতারিত করে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। আপনারা যেমন বলছেন, নির্বাচন সংবিধানের ভিত্তিতে হওয়া উচিত; তাই আপনাদেরকে (সরকারকে) প্রথমে পদত্যাগ করতে হবে, কারণ আপনারা অবৈধ।
সংবিধান লঙ্ঘন এবং জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণ বর্তমান সরকারকে ক্ষমা করবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে ক্ষমতা ছাড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: সঠিক পথে আন্দোলন, এবার ভোটার ছাড়া নির্বাচন হবে না: ফখরুল
পর্দার আড়ালে আসলে কিছুই হয়নি: ফখরুল
আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল, তারা যা বলে তার উল্টোটা করে। তারা মার্কিন প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেছিল যে তারা গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেছে এবং আমরা পরবর্তী নির্বাচনে আবারও একই কাজ করব।’
ছাত্রদের এক কনভেনশনে বক্তৃতায় বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী শাসনামলে ২০১৪ সালে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তারা এখন বলছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে, কারণ তারা আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। এটি একটি মুরগিকে শেয়ালের কাছে বর্গা দেওয়ার মতো। আপনাদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে।’
সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে আক্ষেপ করেন ফখরুল।
ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্য (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ১৫টি ছাত্র সংগঠনের একটি মঞ্চ) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ এই ছাত্র সম্মেলনের আয়োজন করে।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসতে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশি চাপ মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং মানুষ আপনার দুঃশাসনে বিরক্ত হওয়ায় কোনো কৌশল কাজে আসবে না। তারা (জনগণ) দমন, চুরি ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায়। তাই এখনও সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নেন।’
আরও পড়ুন: সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল
সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা দাবি করে, তাহলে কেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা সমাজ পরিবর্তন করেছে এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘আমরা এখন আমাদের আন্দোলনের সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী, কারণ ছাত্ররা এখন আবার ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে নরকে পরিণত করা ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাতের জন্য তারা কঠোর সংগ্রামে নেমেছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গভীর রাতে তার বাড়ির দরজা ভেঙে আটক করে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ‘একজন প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন ছাত্রনেতা এ্যানিকে যেভাবে সরকারের কুশীলবেরা বেআইনিভাবে আক্রমণ ও নির্যাতন করেছে, আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না।’
তিনি সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনি পুলিশি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। ‘এটি আমাদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক।’
ফখরুল বলেন, দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও চলমান ফ্যাসিবাদী সরকারের থেকে মুক্তি পেতে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘শুধু স্লোগান দিলে চলবে না। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে সরকার ডিসি ও ইউএনওদের জন্য আধুনিক যানবাহন কিনতে যাচ্ছে।
তিনি আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানান। ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে বলে বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠাচ্ছে ও দমন-পীড়ন করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সনন খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সাইফুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের খারাপ কিছু ঘটনা ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে সরকারকে ভয়াবহ পরিণামের হুঁশিয়ারি ফখরুলের
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত প্রধানমন্ত্রী : ফখরুল