হত্যকাণ্ডে জড়িত নিহত আব্দুল জব্বারের পালিত ছেলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র ও লুটকরা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার।
গ্রেপ্তার তানভীর নওগাঁর মহাদেবপুরের হরিপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে।
রবিবার দুপুরে পাবনা পুলিশ লাইন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ও তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুনের কোনো সন্তান ছিল না। মা-বাবা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একদিন বয়সী শিশু সানজিদাকে পালক নিয়ে লালন পালন করছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ১২ বছর। তারা পাবনা শহরের দিলালপুরে ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন দ্বিতলা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বছর দেড়েক আগে পরিচয় হয় বাড়ির পাশে ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীরের সাথে। তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে একটি ছেলে সন্তানের মা-বাবা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় তানভীরকে সন্তান হিসেবে আপন করে নেন নিহত জব্বার দম্পতি।
তিনি বলেন, তারা তানভীরকে এতটাই আপন করে নেন যে আব্দুল জব্বার তার ব্যাংক, পোস্ট অফিসে টাকা লেনদেনসহ সব ধরনের কাজে তানভীরকে সাথে নিয়ে যেতেন। তানভীরও তাদের বাবা-মা বলে ডাকতেন। কিন্তু কে যানে তানভীর মন থেকে তাদের বাবা-মা হিসেবে মেনে নেননি। লোভের দৃষ্টি পড়ে জব্বার দম্পতির টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কারের উপর। পরিকল্পনা করতে থাকে কীভাবে জব্বার দম্পতির টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাত করা যায়। একপর্যায় সে পরিবারের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পুলিশ সুপার জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীর গত ২৯ মে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুরে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ৩১ মে পাবনা ফিরে এসে মসজিদে না গিয়ে তার পালিত পিতা-মাতা ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অবস্থান নেয়। রাত ২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জব্বার, তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন ও মেয়ে সানজিদাকে (১২) কুপিয়ে ও কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাড়িতে থাকা নগদ ২ লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি ও স্বর্ণের গহনা লুট করে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মারা যাওয়ার চার দিন পর স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ৫ জুন দুপুরে ওই বাড়ি থেকে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে নিহত আব্দুল জব্বারের ভাই আব্দুল কাদের বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই অসিত কুমার বসাক জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুরের তানভীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে লুটকরা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
অসিত কুমার বসাক আরও জানান, রবিবার গ্রেপ্তার তানভীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বিচারক একে কামাল উদ্দিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।