জানা গেছে, উপজেলার পূর্ববীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাওঁ গ্রামের বাসিন্দা আরিফ আহমেদ হিমেলের ছোট বোন শরিফা আক্তার একজন চিকিৎসক (ডি.এম.এফ.ঢাকা)। তিনি দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় বীরগাঁও বাজারে নিজস্ব চেম্বারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। শরিফা আক্তার প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার চেম্বারে যান এবং রাত ৯টার দিকে রোগী দেখে প্রতিদিন ভাই হিমেল তার চিকিৎসক বোনকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও শরিফা আক্তার নিজের জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। এরই মধ্যে একই এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে জুনেল আহমদ নামে এক বখাটে চিকিৎসক শরিফা আক্তারের পিছু নেয়। জুনেল প্রতিদিন যাওয়া আসার সময় চিকিৎসক শরিফা আক্তারকে দেখলেই অশ্লীল ভাষায় ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে উত্যক্ত করতে থাকে।
গত ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে শরিফা আক্তার তার চেম্বারে যাওয়ার পথে বখাটে জুনেল তাকে একা পেয়ে রাস্তা রোধ করে এবং তার গায়ের ওড়না কেড়ে নেয়। এ সময় শরীফা আক্তারের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে জুনেল শরিফা আক্তারকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সময় শরিফা আক্তার তার ভাই আরিফ আহমদ হিমেলকে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করেন। ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে শরিফা আক্তারকে চেম্বার থেকে তার ভাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসী জুনেলের নেতৃত্বে আরও পাঁচজন অজ্ঞাতনামা তিনটি মোটরসাইকেলযোগে তাদের রাস্তা অবরোধ করে এবং শরিফা বেগমকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার হাত ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এ সময় হিমেল বোন শরিফা আক্তারকে উদ্ধারের চেষ্টাকালে সন্ত্রাসীরা শরিফার ব্যাগে থাকা নগদ পাঁচ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা ভাই ও বোনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার পর শরিফা আক্তারকে হত্যারও হুমকি দেন।
বিষয়টি স্থানীয় এলাকার পঞ্চায়েতদের কাছে ওই চিকৎসক জানালেও কোনো বিচার না পেয়ে হিমেল গত ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নেহান শাম্মী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নির্বাহী অফিসার বিষয়টি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসিকে লিখিতভাবে সুপারিশ করেন।
থানা পুলিশ বিষটিকে ‘কোনো গুরুত্ব না দেয়ায়’ সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে পরে বোনের প্রাণ রক্ষা করার জন্য নিজের বসত বাড়ি ছেড়ে ফেরারি হয়ে ন্যায় বিচারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন চিকিৎসক শরিফা আক্তার ও তার ভাই হিমেল।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেবুন নাহার বলেন, ‘মেয়েটির ভাই আমার কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছে, আমি থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তাদির হোসেন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে অভিযোগের কপিটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’