শিক্ষক
খুলনায় কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ
খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনি কলেজের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী অধ্যক্ষ ও সভাপতিসহ বিভিন্ন জনের কাছে সৌমিত্র সাধু নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত সৌমিত্র সাধু উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের সুনীল সাধুর ছেলে এবং কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক।
এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ডাকযোগে অভিযোগপত্রটি পাওয়ার পর সৌমিত্র সাধুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠানো হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি পাঠানো ওই নোটিশে তাকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নবজাতকের হাত ভেঙে ফেলার অভিযোগ, ফরিদপুরে হাসপাতাল বন্ধ
অভিযোগে জানানো হয়, সৌমিত্র সাধু শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় মটরসাইকেল স্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, সে তার কাছে গত প্রায় চার বছর ধরে কোচিং করছে। গত মাস ছ’য়েক আগে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। সে কপিলমুনি কলেজে পড়ালেখা ও কোচিংয়ের সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী তার এক মাসীর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করে। সম্প্রতি একদিন কোচিংয়ে সকলের অনুপস্থিতে ওই শিক্ষক তার শ্লীলতাহানী ঘটায়। এ ঘটনায় সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি তার এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় ঝামেলা এড়াতে কিছুদিন সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনার পর প্রথমে সে বিষয়টি কলেজের উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মণ্ডলকে জানায়। এরপর তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কলেজের আরও এক শিক্ষক পরিমল সাধুকে সঙ্গে নিয়ে তার মাসীর বাড়িতে যান, বিষয়টি মীমাংসার জন্য। এই ঘটনায় সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাসহ ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, এমনকি উপাধ্যক্ষ এ ঘটনায় তার যথোপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিয়ে অভিযুক্তকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। তবে এখন পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন নি, এমনকি তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করেন।
এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসার অভিযোগ
এ ব্যাপারে কলেজের উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মণ্ডল জানান, খবর পেয়ে তিনি বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে নতুন করে এ নিয়ে অভিযোগপত্র উত্থাপিত হওয়ার ব্যাপারে জানা নেই তার।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্ল্যাহ বাহার অভিযোগপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তার কাছে ডাকযোগে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত সৌমিত্র সাধুকে তার স্বপক্ষে কারণ দর্শাতে সাত দিনের সময় দিয়ে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে। এর জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কপিলমুনি কলেজের সভাপতি ও পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, তাকেও এরকম একটি অভিযোপত্র পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কলেজ অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করেছেন।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশসহ গ্রেপ্তার ৪
আমরা চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে: শাবি অধ্যাপক
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের করা নানা মন্তব্যকে ‘অশালীন’ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষকরা।
বুধবার সকাল ১১টা থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদে অংশ নেয়া কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার কারণে তারা এ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষক। আমরা সম্মানের জন্য কাজ করি এবং সম্মানের জন্যই এ পেশায় এসেছি। আমরা চাষাভুষা নই যে, আমাদের যা খুশি তাই বলবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। সেই বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আমরা ২০২২ সালে এসে কেন এ অপমানের শিকার হবো। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আরও পড়ুন: উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশনের ঘোষণা শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের
তিনি আরও বলেন, আমরা কেমন শিক্ষার্থী তৈরি করছি যে,আমাদের নিয়ে যা খুশি তাই বলবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আমরা জানি না। এ হামলা কে বা কারা করেছে এটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। রাষ্ট্র এ তদন্তের কাজ করতে পারে।
এদিকে, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি কুশপুত্তলিকা তৈরি করেছেন। কুশপুত্তলিকাটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাখা হয়েছে।
কুশপুত্তলিকার মাথার অংশে রয়েছে উপাচার্যের ছবি। কুশপুত্তলিকার ডান হাতে প্রতীকী পিস্তল এবং অন্য হাতে টাকার ব্যাগ রয়েছে। এর মাঝের অংশে তিনশ’ কোটি টাকা লেখা রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা কুশপুত্তলিকাটি তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি আরেকটি বড় প্ল্যাকার্ড তৈরি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে লেখা রয়েছে- ‘হীরক ভিসির শেষে’।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা
জাবিতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা
দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সশরীরে তাত্ত্বিক ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ সময়ে অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে এবং একাধিক কক্ষে সশরীরে ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ সময়ে আবাসিক হলসমূহ খোলা থাকবে।
এছাড়া, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ, মাস্ক পরিধান বাধ্যতাকরণসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এছাড়াও ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পাখি মেলা স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি হলে একই সময়ে চার জন শিক্ষার্থীর জন্য আইসোলেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: জাবিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপভোগ করলেন ‘মিশন এক্সট্রিম’
জাবিতে দিনব্যাপী প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে জাবিতে শুরু হচ্ছে প্রতীকী প্রতিবাদী ক্লাস
চট্টগ্রামে কলেজছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে, শিক্ষক গ্রেপ্তার
কলেজ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী এলাকা থেকে মো.নূর উদ্দিন (২৯) নামে এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
শনিবার সকালে এ তথ্য জানান র্যাব -৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।
আটক মো.নূর উদ্দিন স্থানীয় মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে এবং তিনি ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
র্যাব জানায়, সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারী বিজয় স্মরণী কলেজের এইচএসসি’র এক ছাত্রীর এডিট করা আপত্তিকর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর শিক্ষক নূর উদ্দিনের বিরুদ্ধে র্যাবের কাছে অভিযোগ করে ওই ছাত্রীর বাবা।
অভিযোগে তিনি জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে যাওয়ার পথে মো. নূর উদ্দিন প্রেমের প্রস্তাব দিতো। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক না করলে অপহরণ করবে, এসিড মারবে, কোথাও বিয়ে হতে দিবে না বলে হুমকি দিয়েছে একাধিকবার। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় ওই ছাত্রী।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বোমা হামলার মাস্টাররমাইন্ড গ্রেপ্তার
এরপরই নূর উদ্দিন ওই ছাত্রীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করে একসঙ্গে ছবি তুলে রাখে। কিছুদিন পরে ছাত্রী জানতে পারে নূর উদ্দিন মাদকসেবী এবং তার আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। একথা জানতে পেরে ওই ছাত্রী সম্পর্ক রাখতে না চাইলে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ছবি এডিট করে তা ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয় নূর উদ্দিন। কয়েকদিন আগে ছাত্রীর অন্যত্র বিয়ের প্রস্তাব এলে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ছবি এডিট করে নানান কুরুচিপূর্ণ কথা লিখে ছড়িয়ে দেয়ায় ছাত্রীটির বিয়ে ভেঙ্গে যায়।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, ছাত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার ভাটিয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিক্ষক মো.নূর উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে।
কর্নেল এম এ ইউসুফ আরও জানান, নূর উদ্দিনের বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও তথ্যের ফটোকপি সংগ্রহ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। ছাত্রীর সম্মান নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে নিজে ও অন্য সহযোগীদের দিয়ে সম্মানহানিকর ছবি ও তথ্য প্রকাশ এবং প্রচার করেছেন বলে জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে অপহরণ করে মুক্তিপণ, ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ
পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামে নিহত ৩
কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: ৪৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘অস্বভাবিক মৃত্যু’র ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক নোটিশে এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে ওই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বরের সিন্ডিকেট সভায়, অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন বিকেল ৪টার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে সাতটি হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে মারা যান অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিমকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
ব্যক্তিগত কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড. সেলিম দুপুরের খাবার খেতে ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাসায় যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল কমিটি
অভিযোগ ওঠে, দাপ্তরিক কক্ষে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে দুই দফায় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ২ ডিসেম্বর দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
ড. সেলিমের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। নতুন করে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হলেও ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি কমিটি।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই সভায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হল ৭ জানুয়ারি খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে ৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মৃত্যু: কুয়েট বন্ধ থাকবে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত
কুয়েট শিক্ষক সেলিমের লাশ ময়নাতদন্তে কুষ্টিয়ার চিকিৎসকদের অপারগতা,পাঠানো হচ্ছে ঢামেকে
ঢাবিতে শাটল বাস পুনরায় চালু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের জন্য ক্যাম্পাসে শাটল বাস সার্ভিস পুনরায় চালু করা হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।
এ সময় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বাস সার্ভিস শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এবং ক্যাম্পাসেই এ সেবা দেয়া হবে।
সময়সূচি অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ও দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবন থেকে কলাভবন, টিএসসি, কাজী মোতাহার হোসেন ভবন, মোকাররম ভবন হয়ে কার্জন হল পর্যন্ত যাবে শাটল বাস এবং সকাল ১১টায় ও দুপুর আড়াইটায় কার্জন হল থেকে মোকাররম ভবন, কাজী মোতাহার হোসেন ভবন, টিএসসি, কলাভবন হয়ে প্রশাসনিক ভবনে ফিরে আসবে।
এছাড়া অন্য রুটে শাটল বাস সকাল ১১টায় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে কার্জন হল পর্যন্ত যাবে এবং দুপুর ২টায় কার্জন হল থেকে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে ফিরে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (২) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘অনেক আগে এই সার্ভিস চালু থাকলেও কোনো কারণে বন্ধ ছিল। এখন আমরা আবার সেবাটি পুনরায় চালু করেছি।’
আরও পড়ুন: ঢাবিতে বিবাহিত ছাত্রীদের হলের সিট বাতিলের বিধান বাতিলে লিগ্যাল নোটিশ
ঢাবি গ্রন্থাগার: পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
গণহত্যা নিয়ে ইউএনবিতে আলোচনা অনুষ্ঠান
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নির্মম গণহত্যা নিয়ে ‘দখল দেশে: গণহত্যা ও ৭১’ শিরোনামের চার পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে ইউএনবিতে। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর সম্প্রচারিত হয়েছে এই সিরিজের প্রথম পর্ব ‘পাকিস্তান ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পরাজয়’। আজ বৃহস্পতিবার এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘গণহত্যা ও ৭১’ সম্প্রচার হয়েছে ইউএনবি প্লাটফর্মে।
চার পর্বের এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করছেন ইউএনবি’র এডিটর এট লার্জ আফসান চৌধুরী। তিনি একজন শিক্ষক, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাংবাদিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন আফসান চৌধুরী।
‘দখল দেশে’ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘গণহত্যা ও ৭১’ এ অতিথি হিসেবে থাকবেন গণহত্যা বিষয়ক গবেষক মো.এনামুল হক। তিনি বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের চারটি জেলা –রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে সংঘটিত ১১১টি গণহত্যা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন এবং এই গবেষণালব্ধ ফলাফল তাঁর রচিত চারটি বইতে তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন: ৭১-এ নারীর ভূমিকা নিয়ে ইউএনবিতে পডকাস্ট
গবেষণা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন কর্মক্ষম ব্যক্তি। তাদের মৃত্যুর পর স্বজন হারানোর বেদনার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করাটা তাদের পরিজনদের জন্য আরেকটি যুদ্ধের মতো ছিল।
তিনি আরও দেখেছেন, যেখানেই গণহত্যা হয়েছে সেখানেই ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনও হয়েছে।
মো.এনামুল হক বলেছেন, রাজাকারদের কারণে গণহত্যা বেশি হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত রেষারেষি,রাগ,ক্ষোভের কারণেও অনেক গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যা হানাদারেরা করলেও রাজাকাররা ছিল গণহত্যার মূল ইন্ধনদাতা।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদারদের প্রধান টার্গেট ছিল এদেশের হিন্দুরা। তাই যেখানে হিন্দু পেয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতা বা কর্মী পেয়েছে; তাদের কাউকে ছাড়েনি।
সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ মানুষের মনে কেমন প্রভাব ফেলেছিল সঞ্চালকের এই প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানুষের মনে আতঙ্ক ও ভয় তৈরি করে। মানুষ একটা রাতও শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। বিজয়ের পর মানুষ আস্তে আস্তে এই দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে থাকে।
আরও পড়ুন: ইউএনবি এবং ঢাকা কুরিয়ারে এডিটর এট লার্জ হিসেবে যোগ দিলেন আফসান চৌধুরী
বাংলাদেশে গণহত্যার ‘স্বীকৃতি’ আদায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান
কুয়েট শিক্ষক সেলিমের লাশ ময়নাতদন্তে কুষ্টিয়ার চিকিৎসকদের অপারগতা,পাঠানো হচ্ছে ঢামেকে
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা অপারগতা প্রকাশ করায় সেলিম হোসেনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে চিকিৎসকদের অপারগতার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
দাফনের ১৪ দিন পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বুধবার সকাল ১০ টা ১০ মিনিটের সময় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এর আগেই জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দেন। মেডিকেল বোর্ডের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রুমন রহমান ও ডা. মাহাফুজুর রহমান।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মৃত্যু: কুয়েটের ৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্য স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে (সিভিল সার্জনকে) এই অপারগতার বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সর্ব সম্মতিক্রমে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, উক্ত লাশের সঠিক ময়নাতদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বরাবর পাঠানো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জনকে অনুরোধ জানানো হয়।’
এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সিভিল সার্জন জানান, ময়নাতদন্ত করতে অপারগতার বিষয়টি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা তার জানা নেই।
এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করায় ওই শিক্ষকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি সম্পন্নের পর সন্ধ্যায় লাশ ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল।
ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে অপারগতা প্রকাশের বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যের কেউই গণমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিষয়টি স্পর্শকাতর বিবেচনা করেই হয়তো স্থানীয় চিকিৎসকরা ময়নাতদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: ময়নাতদন্তের জন্য কুয়েট শিক্ষকের লাশ উত্তোলন
বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের সময় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত, খুলনা খান জাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস এবং কুমারখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। লাশ উত্তোলনের সময় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে ভিড় জমান। লাশ উত্তোলনের পর পরই ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ প্রহরায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করা হয়।
এদিকে লাশ উত্তোলনের সময় শিক্ষক সেলিম হোসেনের বাবা শুকুর আলীসহ স্বজনরা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, সেলিমকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এই হত্যার সঠিক বিচার চান।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ড. সেলিম হোসেনের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের খবর পেয়ে বাঁশগ্রাম কবরস্থানে শত শত উৎসুক নারী পুরুষ উপস্থিত হন। থানা পুলিশ ও একজন মেডিকেল অফিসার সেলিমের কবরস্থানের কাছে আসেন। এ সময় তার বাবা শুকুর আলী, তার দুই মেয়ে শিউলী ও শ্যামলীসহ নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও লাশ উত্তোলনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি।
পরবর্তীতে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহান লাবিব উপস্থিত সবাইকে জানান, সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ আজ (মঙ্গলবার) কবর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে না। বুধবার সকাল ৮টায় ড. সেলিম হোসেনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে।
আরও পড়ুন: কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী অধ্যাপক সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ওই শিক্ষক বাসায় ফিরে মারা যান।
অভিযোগ উঠেছে, সেজানসহ ওই শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছিত করেছিলেন, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পরদিন ১ ডিসেম্বর বুধবার অধ্যাপক সেলিমকে তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে দাফন করা হয়।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কবর থেকে তার লাশ তুলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার তার লাশ তোলা হয়েছে।
এ ঘটনায় খুলনার খানজাহান আলী থানার পরিদর্শক তদন্ত শাহরিয়ার হাসান অধ্যাপকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর দুপুরে খুলনার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানান। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি পাঠান।
ওই চিঠিতে বলা হয়, কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমানের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাতে মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের জন্য কুয়েট শিক্ষকের লাশ উত্তোলন
দাফনের ১৪ দিন পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়েছে। বুধবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে জেলার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে লাশ তোলা হয়।
লাশ উত্তোলনের পর পরই ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ পাহারায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী অধ্যাপক সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ওই শিক্ষক বাসায় ফিরে মারা যান।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মৃত্যু: কুয়েটের ৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
অভিযোগ উঠেছে, সেজানসহ ওই শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক সেলিমকে লাঞ্ছিত করেছিলেন, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পরদিন ১ ডিসেম্বর বুধবার অধ্যাপক সেলিমকে তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রামে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় খুলনার খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) প্রবীর কুমার বিশ্বাস অধ্যাপকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তেরর জন্য গত ৫ ডিসেম্বর দুপুরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন জানান।
খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে ড. সেলিম হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলণের নির্দেশ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে, অভিযোগ কুয়েট ছাত্রলীগের
শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে, অভিযোগ কুয়েট ছাত্রলীগের
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ।
শুক্রবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেন ১১ মাস আগে কুয়েট লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। যখনই কোনো নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ পান, তখন ছাত্রকল্যাণ কমিটির পক্ষ থেকে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে হলের ফাইনাল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।’
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান ওই দিন অধ্যাপক সেলিম হোসেনের সঙ্গে দেখা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিতি হওয়া এবং হলের নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানানোর জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১২টার সময় প্রাধ্যক্ষ নিজ কার্যালয়ে একটি মিটিং নির্ধারণ করেন। ক্লাস শেষ করে পূর্বনির্ধারিত মিটিংয়ে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের আনুমানিক ৪০ মিনিট বিলম্ব হয়। পরে পথে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা হয় এবং তাঁকে বিলম্বের কারণ জানানো হয়। তখন তিনি আমাদের তাঁর কার্যালয়ে আসতে বলেন। এরপর প্রাধ্যক্ষ তাঁর কার্যালয়ে তালা খুললে শিক্ষার্থীরা তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে ভেতরে প্রবেশ করে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা সাদমান নাহিয়ান আরও বলেন, সব শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন সিনিয়রদের ভেতরে বসতে এবং জুনিয়রদের কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদের ডেকে ভেতরে আনেন। এ সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘আমার তো আড়াইটায় ল্যাবে কাজ আছে। আমি সন্ধ্যায় হলে গিয়ে তোমাদের সঙ্গে পরিচিত হব।’ এরপর তিনি বিদায় নিয়ে বের হন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদমান নাহিয়ান আরও বলেন, ‘আমরা জানি না শিক্ষক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর সঠিক কারণ কী। তবে মৃত্যুসনদ অনুসারে জেনেছি, তিনি স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি হলের অভিভাবক। হলসংক্রান্ত কথাগুলোতে তাঁর কাছে পেশ করার জন্যই তো আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের এই দেখা করাটাকেই কেন্দ্র করে একটা পক্ষ আমাদের অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু অপরাধী বানানোর চেষ্টাই করছে না, বিবৃতি পর্যন্ত দিচ্ছে। উপাচার্য বরাবর দাবি জানাচ্ছি দেখা করার ফুটেজ দেখেই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগণযোগাযোগ ও তথ্য সম্পাদক জামিউর রহমান, সহসম্পাদক আহসানুল আবেদীন, উপপাঠাগার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
এদিকে শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তাঁরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং কুয়েটের শিক্ষকদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করে যদি দোষী পাওয়া যায় তবে তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি কোনোভাবেই বন্ধ না করা, অধ্যাপক সেলিমের পরিবারকে আগামী এক মাসের মধ্যে এক কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া, তাঁর পরিবারের চাকরিযোগ্য অন্তত এক সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরি দেয়া এবং শিক্ষক সমিতির ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি প্রত্যাহার করা।
আরও পড়ুন: সাভারে কুয়েটের শিক্ষার্থীসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার