তিস্তা
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত
উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের ১০ গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকে তিস্তার পানি মারাত্বকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার ও শনিবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলাসহ জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) ভোর থেকে নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করে। হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে বিকালে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে।
পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তাপাড়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ফলে তিস্তার পানিতে পাটগ্রামে অবস্থিত বহুল আলোচিত বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ১০ গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তায় নৌকাডুবি, ৩ কৃষক নিখোঁজ
লালমনিরহাটে তিস্তায় নৌকাডুবি, ৩ কৃষক নিখোঁজ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নৌকাডুবিতে তিনজন কৃষক নিখোঁজ হয়েছেন।
রবিবার (৯ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী এলাকায় হাজীর মোড়ের পশ্চিম পাশে তিস্তা নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ১০৩
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের ফজলু মিয়া (৬০), আহেদুল ইসলাম (৫৮) ও শফিকুল ইসলাম (৫৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১০ জন শ্রমিক একটি ডিঙি নৌকায় কাজের উদ্দেশ্যে তিস্তা নদী পাড় হওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় মাঝ নদীতে প্রবল স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।
এতে অনেকেই সাঁতরে পাড়ে উঠলেও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
হাতীবান্ধা ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, একটি নৌকায় ১০ কৃষক তিস্তার চরে যাচ্ছিলেন। নদীর মাঝখানে প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি ডুবে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেসময় স্থানীয়রা দ্রুত অন্য একটি নৌকা নিয়ে সাতজনকে উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৩ জনের লাশ উদ্ধার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় নৌকাডুবিতে নিহত ১, নিখোঁজ ৩
তিস্তার পানি বাড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
তিস্তা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
বুধবার সংস্থাটি তার নিয়মিত বুলেটিনে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। যা ৪৮ ঘণ্টার বেশি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য কমলগঞ্জ পয়েন্টে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, খোয়াই ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে এবং সোমেশ্বরী ও ধলাই নদীতে যা ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন
তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন
কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে গত ১৫ দিনে শতবিঘা আবাদি জমি, অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও দেড় শতাধিক বাড়িঘর।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও ভাঙন কবলিত মানুষ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে। ঈদের ১০/১২ দিন আগে থেকেই এখানে ভাঙন চলছিল।
জিও ব্যাগ দিয়ে সরকারি স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করা হলেও জিও ব্যাগসহ সেটি নদী গর্ভে চলে গেছে। এসময় ভেঙে গেছে আরও ৪৫ থেকে ৫০টি বসতবাড়ি। সবজি ও পাটখেতসহ শত বিঘা আবাদি জমি নদী গ্রাস করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে গাছপালা-পুকুর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
নদী তীরবর্তী শহিদুর ইসলাম (৫৬) জানান, ভাঙনে বজরা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আর রক্ষা করা যায়নি। সেই সঙ্গে ঠিকানা হারিয়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। আরও দেড় শতাধিক বসতবাড়ি রয়েছে ভাঙনের হুমকীতে। এছাড়াও পিছনে আরও ৬ থেকে ৭শ’ পরিবারও রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
তিস্তার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার দুই তীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুর ২টার দিকে পানি তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সময় তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদ সীমার শূন্য দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার কম।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফাউদ্দৌলা বিপদ সীমার শূন্য দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (১৯ জুন) সকাল সন্ধায় তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারেজের ভাটি এলাকার চর অঞ্চল গুলোতে পানি প্রবেশ করে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি কমলেও বাড়ছে ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তার তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি একদিন থাকার পর রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানির কমলেও দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত দুইদিন পানিবন্দি পরিবারগুলোর কাছে এখনও কোনো সরকারি সহযোগিতা পৌঁছায়নি।
এদিকে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুর্ণা, ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছ, কালমাটি এলাকায় পানি কমলেও দেখা দিয়েছে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ ভাঙনের মুখে উলিপুরের তিস্তা পাড়ের মানুষ
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি থাকার পর পানি নেমে গেলেও সরকারি সহযোগিতা এখনও পরিবারগুলো পায়নি।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। নির্দেশ পেলেই পানিবন্দি পরিবারের গুলোর মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, বন্যার্ত পরিবারের তালিকার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিন থেকে টানা থেমে থেমে আসা বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। আর তাই দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৮ মিটার। সকাল ৯টায় ছিল ৫২ দশমিক ১০ মিটার। যা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার হওয়া স্বাভাবিক।
এর আগে শনিবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৩টায় তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৪ মিটার।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত কয়েক দিন থেমে থেমে ভারিবর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। শনিবার ভোর থেকে আরও বাড়তে থাকে নদীর পানিপ্রবাহ। এই পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের জলকপাটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: তিস্তা নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগে ভারতের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি বাংলাদেশ
নদীপাড়ের লোকজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার চরাঞ্চলের ফসলের খেতগুলো ডুবে গেছে। নিম্নাঞ্চলের ফসলের খেতগুলোও ডুবে গেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কৃষক আ. রহিম মিয়া বলেন, ‘কয়দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কালকেও পানি বাড়ছিলো। আজকে আবারও বাড়তেছে। আমাদের বাদাম খেত ও পাটখেত ডুবে গেছে।’
পাউবো তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আপাতত বিপদসীমা অতিক্রম করার কোনো শঙ্কা নেই।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তার বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। মহিষখোচা এলাকায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে বেরিবাধ করা হয়েছে। এছাড়াও ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের আরও দুটি খাল খনন পরিকল্পনায় বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
তিস্তার ধু ধু বালুচরে এখন ফসলের সমারোহ
তিস্তা নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগে ভারতের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি বাংলাদেশ
তিস্তার পানি ব্যবহারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে আরও দুটি খাল খননের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আমরা এখনও সাড়া দিয়েছি কি না সে সম্পর্কে আমার কাছে বিস্তারিত কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিবের (বাংলাদেশ) মন্তব্য আমি দেখেছি। এটি এমন একটি বিষয় যাতে আমরা এখনও কোনো বিবৃতি দিইনি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেন, তিস্তার পানি প্রত্যাহারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে দুটি নতুন খাল খননের বিষয়ে জানতে চাওয়া তাদের কূটনৈতিক নোটের (নোট ভার্বাল) বিষয়ে ভারত এখনও সাড়া দেয়নি।
আরও পড়ুন: চীন তিস্তা খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন বদলে যাবে: রাষ্ট্রদূত
এর আগে কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে জানায়, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সেচ বিভাগ।
যেখানে আরও বলা হয় যে এই পদক্ষেপটি জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার আরও খামারগুলোকে সেচের আওতায় আনতে সহায়তা করবে, তবে তিস্তা উত্তরবঙ্গ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
তিস্তার পানি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সেচের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময়। পানি সংকট নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে দেশটি।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের আরও দুটি খাল খনন পরিকল্পনায় বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের আরও দুটি খাল খনন পরিকল্পনায় বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খনন করে একতরফাভাবে সাধারণ নদী থেকে আরও বেশি পানি প্রত্যাহার করার জন্য কথিত পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: চৌহালী উপজেলা বিএনপির ৭ নেতাকর্মীর পদত্যাগ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘(স্থায়ী কমিটির) বৈঠকে মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে একটি চুক্তি সই না করেই আরও দুটি খাল খননের পরিকল্পনা বাংলাদেশকে (অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য অংশ থেকে) বঞ্চিত করার চেষ্টা।’
সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ‘হাঁটু গেড়ে’ বৈদেশিক নীতি এবং পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ভারতীয় সংবাদ আউটলেট দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খনন ও সেচের পানি চ্যানেলাইজ করতে প্রায় এক হাজার একর জমির অধিগ্রহণ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিস্তা ও জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য একটি ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত খনন করা হবে এবং তিস্তার বাম তীরে আরেকটি ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল তৈরি করা হবে। এতে প্রায় এক লাখ কৃষক উপকৃত হবে।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি ১৯৭৫ সালে ভারত সূচনা করেছিল। উত্তরবঙ্গের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি নদীর উভয় তীরে খালের মাধ্যমে চ্যানেলাইজ করে।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী থেকে পানি ভারতের প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর অংশ শুকিয়ে যাওয়ায় এই প্রকল্পটি কৃষি, বাস্তুতন্ত্র এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর বিরোধিতা করে আসছেন।
আরও পড়ুন: চবি সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিএনপিপন্থী সাদা দলের বিজয়
পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের জলসায় হামলাকারীর বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক: তথ্যমন্ত্রী
তিস্তা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আবারও আশ্বাস দিয়েছে ভারত: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
ভারত আবারও বাংলাদেশকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আশ্বাসের পর্যায়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি যে ভারত যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণ হবে, যদিও এতে সময় লাগতে পারে।’
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ভারতের রাজধানীর বাংলাদেশ হাউজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সফরের বড় অর্জন বাংলাদেশের কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার চুক্তি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চারদিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাতটি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে এটি অন্যতম।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর চলমান সফরকে ভারত যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে।
আরও পড়ুন: যৌথভাবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট ১- এর কাজ সম্পন্নের ঘোষণা হাসিনা-মোদির
তিনি উল্লেখ করেন, কেউ যদি দিল্লির রাস্তা দিয়ে যায় তবে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার দেখতে পাবে এবং ভারতীয় মিডিয়া এই সফরকে চব্বিশ ঘন্টা কভারেজ দিচ্ছে।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ব্যাপারে তিনি বলেন, উভয় নেতা যোগাযোগ, জ্বালানি ও বাণিজ্যে সহযোগিতা এবং পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রতিটি ইস্যু খোলা মন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষই বিশ্বাস করে যে প্রতিটি সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’
শাহরিয়ার বলেন, নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশের ১৭ কোটি মানুষকে মাতৃস্নেহে যত্ন নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে: মোদি
আশা করি তিস্তা চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে: প্রধানমন্ত্রী
তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি মূলত ভারতের ওপর নির্ভর করছে।
ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের আগে তিনি মাল্টিমিডিয়া নিউজ এজেন্সি-এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) কে বলেছেন, ‘এটি (তিস্তা) একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। তাই এর সমাধান করা উচিত। তবে এটা মূলত ভারতের ওপর নির্ভর করে।
শনিবার এএনআই’র টুইটার অ্যাকাউন্টে ৩৭ সেকেন্ডে একটি ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তিনি এই সব কথ বলেন।
আরও পড়ুন: হামলা হলে পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
রবিবার সকালে পুরো সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হবে।
পূর্বের আলোচনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের সময় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পরিশোধে টান পড়তে পারে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
তিনি তিস্তা নদীর অববাহিকায় নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং জীবিকা বাঁচাতে জোর দিয়েছিলেন, ২০১১ সালের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, তিস্তার পানির ন্যায্য অংশ বাংলাদেশ পেতে পারে, ২০২১ যার খসড়া চুক্তিটি ইতোমধ্যে উভয় সরকার সম্মত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৫-৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী