যমুনার পানি বৃদ্ধি
সিরাজগঞ্জে টানা বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিরাজগঞ্জে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা প্রবল বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অসময়ে যমুনা ও তার শাখা নদীসহ খাল বিলের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে। টানা এ বর্ষণে জনজীবন এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়াটার) রনজিত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেলেও সোমবার পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে ওইদিন মধ্যেরাত থেকে আবারও টানা বর্ষণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চতুর্থ দফায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এতে মৌসুমী রোপা আমন, মাসকলাই ও সবজির খেতসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। তবে এখন বড় ধরনের বন্যার কোন আশংকা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনভর ভারী বর্ষণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের বড় বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেছেন, টানা বর্ষণে শহরের প্রধান সড়কসহ কয়েকটি সড়কে পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ ড্রেন ময়লা আবর্জনা জমে যাওয়ার কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
যমুনার পানি বৃদ্ধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপদসীমার কাছাকাছি ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পানি প্রবেশ করে পাট ও ধৈঞ্চার খেত ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন গুনছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে সারিয়াকান্দির কালিতলা পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে বাঙালি নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতা
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধিতে সারিয়াকান্দি উপজেলার ১১২টি চরের নিম্নাঞ্চল যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকার পশুচারণভূমি এবং সবুজ ঘাস পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ঘাসের অভাবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ সবধরনের গৃহপালিত পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বন্যার আশঙ্কায় পাট কেটে জাগ দিয়ে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেই পাট বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে পানিতে ভেসে গেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। তার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেকের বেশি পাটের ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
আরও পড়ুন: পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া জানান, যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে করে ১৯ জুনের মধ্যে যমুনা এবং বাঙালি নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকের পাট এবং ধৈঞ্চাসহ কয়েকটি ফসল নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
টানা প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।