ফরিদপুর
বোয়ালমারীতে আ’লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত এক
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বর্দী এলাকায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনার গ্রুপ ও গত নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী মান্নান মাতুব্বর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন। এদের মধ্যে গতরাতেই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চেয়ারম্যান গ্রুপের কৃষক শহীদ ফকির (৪৭)।
শহীদ ফকিরের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছতেই রাত থেকে দফা দফায় কাটা খাল ও ফকির পাড়ার অর্ধশত বসবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা ও লুটপাট চালায় নিহত পক্ষের সমর্থকরা।
পড়ুন: ফরিদপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ১০ মৃত্যু
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিপক্ষের মামলার ভয়ে পুরো এলাকা পুরুষ শূন্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নিহত শহীদ ফকিরের বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো কোনো বাড়িতে পুরুষ সদস্যদের দেখা মেলেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত পরমেশ্বর্দীএলাকার বাসিন্দা লতিফা বেগম(৩৫) বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাতে পার্শ্ববর্তী খারদিয়া গ্রামের লোকেরা তাদের বাড়ির গোলা থেকে ধান ও পাট লুট করে নিয়ে যায়। দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমরা নিজেরাই ঘরের তালা খুলে দিতে বাধ্য হই।
পড়ুন: ফরিদপুর মেডিকেলে করোনায় আরও ১৯ প্রাণহানি
ফরিদপুরে আশ্রয়ণের সুবিধা ভোগীদের অন্যরকম ঈদ
তিনি জানান, তাদের আকন গোষ্ঠীর পুরুষ সদস্যরা শুক্রবারের দিনের কাইজায় (মারামারিতে) অংশ না নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের নিজ গ্রামের লোকেরাও তাদের এখন হত্যা মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে।
ওই গ্রামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার রুবেল আকনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার (২৫) বলেন, ‘হামলাকারীরা আমাদের বাড়ির গরু, পাট, পেঁয়াজ এমনকি ফ্রিজটাও লুটে নিয়ে গেছে। বাধা দিতে গেলে গলায় রামদা ধরে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে।’
পাশের বাড়ির প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ির তিনটি গোয়ালের ১০টি গরুই নিয়ে গেছে ওরা, বাড়ির মজুত যা ছিল সবই বস্তায় ভরে মাথায় করে লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ঘরে খাবার কিছুই নেই।’
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরল আলম বলেন, ‘এলাকায় নতুন করে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর রয়েছি, মারামারির ঘটনায় কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’
ঘটনাস্থল পরিদশনে আসা পুলিশের মধুখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ফরিদপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ১০ মৃত্যু
ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ১৬২ জন।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ১০ জনের মারা যান।
আরও পড়ুন: করোনা: কুমিল্লায় আরও ৭ মৃত্যু, শনাক্ত ২৫১
হাসপাতালটির পরিচালক ডা. সাইফুল রহমান জানান, আইসিইউ ও সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে মোট দশ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধে তিন জন করোনা ও সাত জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন ফরিদপুর জেলার।
আরও পড়ুন: রামেকে করোনায় আরও ১৭ মৃত্যু
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৫ নমুনা পরীক্ষার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৬২ জন। শনাক্তের হারে ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
ফরিদপুর মেডিকেলে ১৯ দিনে করোনায় ১৯৭ মৃত্যু
করোনা মহামারিতে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি মাসের ১৯ দিনে ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় ৮৮ এবং উপসর্গ নিয়ে আরও ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, ‘এবারের করোনার ধরনটাই ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। আমরা প্রত্যেক রোগীকে সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি জানান, গত ১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত করোনা এবং উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণহানি হয়েছে ১৯৭ জনের। এরা ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদ, মাগুরা জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে মেডিকেলে এসেছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ১৯ কোটি ছাড়াল
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ১৯ দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ১৭ জুলাই। এই দিনে মারা গেছে ২১ জন।
বর্তমানে ৫১৬ শয্যার এই মেডিকেল কলেজে সম্পূর্ণভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত ৩৪৫ জন ভর্তি রোগী ছিলেন হাসপাতালটিতে। এর মধ্যে আইসিইউ-তে রয়েছেন ১৬ জন। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা শনাক্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৯ জন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত শতভাগ শিশুর দেহে ডেল্টা ধরন
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ’র) ফরিদপুর শাখার সভাপতি ডা. আ.স.ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটো বলেন, এই ভেরিয়েন্টটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা খুব অল্প সময়েই অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। এই জন্য মৃত্যু বাড়ছে।
তিনি বলেন, কোনও ব্যক্তি শরীরে সামান্য জ্বর, ঠান্ডা বা অন্য কোনও সমস্যা হলেই দ্রুত চিকিৎসকরে পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকলকেই চলতে হবে।
ফরিদপুর জেলার করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭০ টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ২১৯ জন। শনাক্তের হার ৪৬.৫৯ ভাগ।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ২শ’ ব্যক্তি, সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৬৭৭ জন। জেলায় মোট মৃত্যু ৩১৫।
আরও পড়ুন: বরিশালে একদিনে ৮৯১ শনাক্ত, মৃত্যু ১২
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, করোনার এই দূর্যোগে সকলকেই স্বাস্থ্য বিধির মধ্যে আসতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করে নয়, করোনা যুদ্ধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা দরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি জেলার হাট-বাজার, বিপনী বিতানসহ জনবহুল স্থানে মানুষকে সচেতন করতে এবং স্বাস্থ্য বিধির মধ্যে আনতে।’
ফরিদপুরে করোনার তাণ্ডব বাড়ছে, আরও ২১ মৃত্যু
ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ জন করোনায় এবং বাকিরা উপসর্গে মারা গেছেন ।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুর রহমান জানান, মৃত ২১ জনের মধ্যে পাঁচ জন ফরিদপুরের। এদের চারজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন।
আরও পড়ুন: খুলনার ২ হাসপাতালে করোনায় আরও ১১ মৃত্যু
ফরিদপুরর সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর পিসিআর ল্যাবে ৯৬০ জনের নমুনা পরীক্ষার করে ৩০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বর্তমানে ফরিদপুরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৪০৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন।
আরও পড়ুন: রামেক হাসপাতালে করোনায় আরও ১৬ মৃত্যু
জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৬৬৭ জনে। সরকারি হিসাবে জেলায় এখণ পর্যন্ত ৩০৯ জনের মত্যু হয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও ফরিদপুরে আশানুরূপ ক্রেতা নেই
সারাদেশের মতো ফরিদপুরে লকডাউন শিথিল হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলছে মন্দাভাব। জেলা শহরের বিভিন্ন বিপনী-বিতান, শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি একেবারে কম। আর এ জন্য ব্যবসায়ীরা করোনার প্রভাবকে দায়ী করছেন।
ফরিদপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, দীর্ঘ সময় মানুষ কর্মহীন। অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে করোনাকালে মানুষের আয়ের পথ সংকুচিত হয়েছে। যে কারণে মার্কেটগুলোতে কেনাবেচা তুলনামূলকভাবে কম। তবে করোনা থেকে মুক্তির পর আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তের ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত খুলনা নগরবাসী
তিনি বলেন, ‘করোনার ভয়াবহতা মানুষ বুঝতে পেরেছে, নিজেদের সচেতনতাও বেড়েছে। যে কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া মার্কেট মুখী হচ্ছে না ক্রেতারা।’
আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে লকডাউন শিথিল হলেও এই জেলায় ব্যবসায়ীদের দুরাবস্থা চলছে। একই সাথে গত দু'দিনে তেমন একটা বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন বিপনী-বিতান ও মার্কেট খোলা থাকলেও তাতে আগের মতো ক্রেতা সমাগম নেই। তাছাড়া ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বড় শপিং মল ও বিপনী-বিতান বিভিন্ন রকম ছাড়ের অফার ঘোষণা করলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলার মধুখালী থেকে ফরিদপুর শহরের আসা বি.কে. সিকদার সজল জানান, হাতে প্রয়োজনের তুলনায় অর্থ কম, তাই কেনাকাটার তালিকা ছোট করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যবিধি হুমকির মুখে: নারায়ণগঞ্জে ঈদের কেনাকাটায় ধুম
ফরিদপুর নিউ মার্কেটের জুতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশা ছিল লকডাউন শিথিল হলে বেঁচা-বিক্রি ভালো হবে। কিন্তু অল্প সংখ্যক ক্রেতা আসলেও কাঙ্খিত ব্যবসা হচ্ছে না। অনেক সময় বসেই থাকতে হয়।’
ফরিদপুরে কর্মহীনদের মাঝে আ’লীগের খাদ্য বিতরণ
মহামারি করোনার দুর্যোগে কর্মহীন ও দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়ার এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি করোনা প্রাদুর্ভাব কমে না আসা পযন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।
কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার দুপুরের ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়রসহ কয়েকটি জায়গায় অসহায় মানুষের মাঝে খাবারের প্যাকেট তুলে দেয়া হয়।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
তিনি বলেন, অসহায় মানুষের পাশে অতীতে আওয়ামী লীগ যেভাবে কাজ করেছে এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
পড়ুন: দেশে করোনায় মৃত্যু ১৭ হাজার ছাড়াল
এই কর্মসূচির বিভিন্ন পর্বে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, শহর আওয়ামী লীগের শামসুলবারী শানু, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মঞ্জুর আলী, মহিলা আওয়ামী লীগের আইভি মাসুদ, বাবুল চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের ইউসুফ চৌধুরী, ইকবাল হাসান রুবেল, আলমগীর হোসেন বাবু, কাবুল খান, সজিব আহমেদ লিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৩,২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ
চট্টগ্রামে একদিনেই শনাক্ত হাজার ছাড়াল, মৃত্যু ১০
করোনা সংকটে মানবিক উদ্যোগ
করোনার প্রভাবে কেউ কাজ হারিয়ে খাদ্য সংকটে, কেউ বা আবার করোনা রোগী নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এই জরুরি মুহূর্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাদ্যসহ বিভিন্ন সংকটে পড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পাশে দাড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এমনকি ব্যক্তিরাও।
কঠোর লকডাউনের শুরু থেকেই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উই কেয়ার’ ‘আমরা করবো জয়’-এর কর্মীরা সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে এ বাড়ি ওবাড়ি ছুটে যাচ্ছেন। রাত নেই, দিন নেই, চলছে তাদের নিরন্তর ছুটে চলা।
পাশাপাশি সংগঠনগুলো ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতালে প্রতি রাতে রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করছে।
আরও পড়ুন: মানবিক সহায়তা পেল ফরিদপুরের ৫ শতাধিক অসহায় মানুষ
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উই কেয়ার’এর সঞ্জয় সাহা জানান, তাদের সংগঠনের প্রধান প্রবাসী রোকেয়া পারভীনের পাঠানো অর্থ দিয়ে চালানো হচ্ছে মানবিক এই কাজ।
তবে অপর সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’এর মহুয়া ইসলাম জানান, তাদের নির্দিষ্ট কোনো দাতা নেই। তবে স্বেচ্ছায় দেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের অনুদানের টাকায় চলছে এই প্রতিষ্ঠানের সেবা কাজ। রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফোন কল আসামাত্রই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন দিশেহারা মুমূর্ষু করোনা রোগীর কাছে৷
একইভাবে করোনার এই যুদ্ধে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমরা জেলা আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা দিচ্ছি। কোনো রোগীর অ্যাম্বুলেন্স সেবার দরকার হলে আমাদের হট নাম্বারে ফোন দিলেই সেখানে চলে যায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্স। আর এই কাজে কাউকে কোন টাকা দিতে হয় না।
অনুরূপভাবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ গত এক মাস ধরে শহরের ফ্রি অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স, এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের সেবা দিয়ে আসছে।
সংগঠনটির সভাপতি শওকত আলী জাহিদ জানান, মানুষের এই বিপদের সময় তাদের পাশে আমরা থাকতে পারছি তাতেই আনন্দ। তিনি বলেন, দেশে লকডাউন থাকায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর স্বজনদের খাবারের ব্যবস্থা আমাদের দলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকারের পাশাপাশি আমাদের কর্মীরা মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। চেষ্টা করছি শুধু নিজেরা ভালো থাকতে নয়, সমাজের সকলকে নিয়ে ভালো থাকার।
আরও পড়ুন: রোগীদের সাথে মানবিক আচরণ করার আহ্বান শিল্প প্রতিমন্ত্রীর
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর পিসিআর ল্যাবে ৪৭০ জনের নমুনা পরীক্ষার করে ২০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় মারা গেছে ১৪ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মারা গেছেন ২৭৬ জন।
’সম্রাটের’ দাম হাঁকা হচ্ছে ১০ লাখ
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ফরিদপুরের ৩৩ মণ ওজনের সম্রাটের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। পশুটি মালিক আদর করে নাম রেখেছে সম্রাট।
সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিলমামুদপুরে অবস্থিত মাইশা ডেইরী ফার্মে ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটির জন্ম। সেখানেই অতিযত্মে লালন পালন করা হচ্ছে। গরুটি লম্বায় সাড়ে ৯ ফুট এবং উচ্চতায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।
জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলায় মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এই ৩৩ মন ওজনের সম্রাট। অনলাইনে ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এই ষাড় গরুটির ছবিসহ তথ্যাদি প্রকাশ করেছেন। গরুটিকে দেখতে অনেক উৎসুক মানুষ ওই খামারেও আসছেন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচাকেনা
মাইশা ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ জানান, তার ডেইরী ফার্মের একটি গাভীর গর্ভে জন্ম হয় এই ষাড় বাছুরটির। এরপর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এটিকে লালন পালন করে বড় করেছেন।
তিনি জানান, তাজা ঘাস, খড়, গম, ভুসি ও খৈল এসব প্রাকৃতিক খাবারই খাওয়ানো হয় এটিকে। প্রতিদিন প্রায় ১৬ কেজি খাবারের জন্য খরচ হয় এক হাজার টাকার মতো। ষাড়টি বড় করতে কোন কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম¦ন করেননি। মোটাতাজাকরণের কোন ওষুধ বা খাবার দিতে হয়নি।
এবারের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখেই গরুটিকে প্রস্তুত করেছিলেন জানিয়ে সবুজ বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে গরুর খামারিরা খুব অসুবিধায় আছেন। অনলাইনে গরু বিক্রির কথা বলা হলেও অনেকে এই সম্পর্কে ধারণা নেই। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু বিক্রির জন্য সীমিত সময়ের জন্য হলেও ব্যবস্থা করলে আমরা উপকৃত হবো।
আরও পড়ুন: ৫০ মণ ওজনের মানিক ও বাবু’র দাম উঠেছে ১৪ লাখ
হাজার কেজির ‘বাংলার টাইগার’: দাম হাঁকছেন ৫ লাখ
ফরিদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অধিপ্তর কর্মকর্তা নুরুল আহসান বলেন, ৩৩ মন ওজনের সম্রাটের খবর জেনেছি। ষাড় গরুটির ছবিসহ অনলাইনে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গরুর হাট চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী ১৪ জুলাই লকডাউনের সময়সীমা শেষ হলে হয়তো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। খামারিদের সমস্যার বিষয়ে সরকার অবহিত রয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে ফরিদপুরে পুলিশের মসজিদভিত্তিক প্রচারণা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফরিদপুর জেলা পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে সংক্রম প্রতিরোধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রার্থনার সময়ে করোনা মহামারির কঠিন সময়ে জনগণের করণীয় ও বর্জনীয় দিক সম্পর্কে সচেতনতামূলক বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলার সকল জনসাধারণকে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে ঘরে থাকার এবং সরকারের প্রজ্ঞাপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিভিন্নভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে জেলার নয় উপজেলার ৬৫টি মসজিদে ধারাবাহিকভাবে পুলিশ অফিসাররা মসজিদ ভিত্তিক প্রচারণার অংশ হিসেবে করোনাকালে সচেতনতামূলক বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কঠোর লকডাউনে জুমার নামাজ: রাজধানীর দুটি মসজিদে ভিন্ন চিত্র
তিনি বলেন, নামাজের পরে বা আগে মসজিদে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে করোনা মহামারির কঠিন সময়ে জনগণের করণীয় ও বর্জনীয় দিক সম্পর্কে সচেতনতামূলক বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, স্থানীয় জনগণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়া। সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, লোক সমাগম এড়িয়ে চলা, হাট-বাজারে চায়ের দোকানে অহেতুক আড্ডা না দেয়াসহ বিভিন্ন সরকারি বিধি নিষেধ মেলে চলতে বিভিন্ন উপায়ে অনুরোধ করা হয়।
তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রার্থনার সময়ে প্রত্যেকটি থানার অফিসাররা উপস্থিত সকলকে করোনার এই সময়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ঘন ঘন হাত ধোঁয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, এই সকল প্রচারণায় সাধ্যমত পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খাওয়া, জ্বর, সর্দি ও কাশি কিংবা অন্য কোন উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে নিকটস্থ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এছাড়াও সকল নাগরিককে করোনা মহামারিতে তার পার্শ্ববর্তী অসহায়, নিঃস্ব, দরিদ্র ও কর্মহীন লোকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ৫০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
এদিকে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরের পিসিআর ল্যাবে ৩৭৬ নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮০ জনের। এই সময় প্রাণহানি হয়েছে ১৬ জনের। এদের মধ্যে সাতজন করোনায় ও নয় জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এরপরও বাড়েনি জনবল।
ফরিদপুর শহর ও শহরতলীর মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা লক্ষ্য নিয়ে ১৯১৭ সালের প্রতিষ্ঠিত হয় জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এর শয্যা সংখ্যা ১০০।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ হুমকির মুখে
ফরিদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গণেষ কুমার আগারাওলা জানান, প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালে বহি:বিভাগে রোগী আসছে ৪০০ থেকে ৫০০। আমাদের চিকিৎসক রয়েছে ১৩ জন। এর মধ্যে দুজন জেলা কারাগারের প্রেষণে রয়েছে।
সম্প্রতি মহামারি করোনার দুর্যোগে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫১৭ শয্যার মধ্যে ৩৬৫ বেডকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষাণার পর থেকে রোগীর চাপ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ১২ জনের মৃত্যু
এ বিষয়ে ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, করোনার এই সময়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জনবল সামর্থ্য মতো সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার।এখানে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৭টি। বর্তমানে কর্মরত আছে ১৩ জন। আর বিপরীতে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১২ জন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের করোনায় শনাক্তের হার ৪৫.৯৫, মৃত্যু ৫
তিনি বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। এই চাপ সামলাতে বেড় পেতে হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকে অবহিত করেছি এবং প্রয়োজনীয় জনবল চাওয়া হয়েছে। তারপরও সেবা নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।