উচ্চ ঝুঁকি
জলবায়ুজনিত দুর্যোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পঞ্চম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বন্যা, উপকূলীয় এলাকা ও নদীর তীরে ভাঙন, খরা ও ভূমিধসের মতো জলবায়ু-জনিত দুর্যোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে, যার ফলে দেশটি তার ৩০ শতাংশ কৃষিজমি হারাবে। এটি উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীকে শহরে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করবে, যেখানে তারা দারিদ্র্য ও বেকারত্বের শিকার হতে পারে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নতুন এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ২০২৩ সালে একটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এই সময়ে প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী (৫৩.৬ শতাংশ) অন্তত একটি সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় এসেছে।
তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বারবার একই এবং নতুন ও পরিবর্তনমূলক– উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা কাজে লাগানোর জন্য দেশগুলো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
‘বিশ্ব সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২৪-২৬ এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সহায়ক প্রতিবেদন: জলবায়ু পদক্ষেপ ও জাস্ট ট্রানজিশনের জন্য সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই অঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তা সেবার কার্যকর আওতা বৈশ্বিক গড়কে (৫২.৪ শতাংশ) ছাড়িয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও প্রায় ২১০ কোটি মানুষ তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন ঝুঁকির ক্ষেত্রে এখনও অরক্ষিত। সামাজিক সুরক্ষা প্রসারে অগ্রগতিও অসম।
আরও পড়ুন: ৩২ হাজার কৃষককে জলবায়ু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে পূর্ব এশিয়ায় সামাজিক নিরাপত্তার কার্যকর আওতার হার ১৫.২ শতাংশ পয়েন্ট (৬৩.৩ থেকে বেড়ে ৭৮.৫ শতাংশ), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৩.৪ শতাংশ পয়েন্ট (৩২.৫ থেকে বেড়ে ৪৫.৯ শতাংশ), দক্ষিণ এশিয়ায় ১৬.৭ শতাংশ পয়েন্ট (১৮.৭ থেকে বেড়ে ৩৫.৪ শতাংশ) এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে ৬.৮ শতাংশ পয়েন্ট (৬৫.৭ থেকে বেড়ে ৭২.৫ শতাংশ) বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৈষম্য বিদ্যমান।
অঞ্চলটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুবিধার পর্যাপ্ততা ও আর্থিক স্থায়িত্বের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ২০২৩ সালে অঞ্চলটি সামাজিক সুরক্ষার পেছনে জিডিপির ১১.৮ শতাংশ ব্যয় করেছে, যা বৈশ্বিক গড়ের (১৯.৩ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম।
এরই সাথে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, অন্তত একটি সুবিধা দিয়ে কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা পুরুষের তুলনায় নারীরা ৬.৮ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। এই ব্যবধান বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় আরও বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবধানের হার ১১.১ শতাংশ পয়েন্ট।
বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পোটিআইনেন বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে, তাই বন্যা, তাপপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহনশীলতা গড়ে তুলতে সামাজিক নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। সঠিকভাবে পরিকল্পিত ও অর্থায়ন করে কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে, জাস্ট ট্রানজিশন বা ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তন সহজতর করতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আয়ের সুরক্ষা দিতে পারে।’
আইএলওর সহকারী মহাপরিচালক এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক চিহোকো আসাদা-মিয়াকাওয়া বলেন, ‘যদিও ২০১৫ সাল থেকে অঞ্চলটিতে অর্জিত অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক, তবে সর্বজনীন আওতা অর্জন এবং পর্যাপ্ত ও বিস্তৃত সুরক্ষার জন্য অঞ্চলটিকে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। বিস্তৃত ও সহনশীল সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ আজ যতটা জরুরি ততটা আগে কখনোই ছিল না।’
আইএলওর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য আইএলওর ডিসেন্ট ওয়ার্ক টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিমের সিনিয়র সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কেনিচি হিরোসে বলেন, ‘এটি বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় যে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন। তবে এসব দেশে সামাজিক নিরাপত্তার কার্যকর আওতা এখনো কম। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন প্রচেষ্টায় সহায়তার ক্ষেত্রে এবং সবার জন্য, বিশেষ করে অরক্ষিত সম্প্রদায়গুলোর সহনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে একটি জাস্ট ট্রানজিশন বা ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তনে সহায়তা প্রদানে সামাজিক নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি বিস্তৃত জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল (এনএসএসএস) থাকলেও এটি এখনও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি, যা আকস্মিক জলবায়ুজনিত অভিঘাত এবং একটি বিস্তৃত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাগুলো চিহ্নিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনার দ্রুত সংশোধনের দাবি তরুণ জলবায়ুকর্মীদের
বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
১ মাস আগে
লকডাউনের তৃতীয় দিন: উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা খুলনায় এখনো সচেতনতার অভাব
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিতে খুলনা জেলা ও খুলনায় অভিযানে ২৭টি মামলায় ১৩ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।
শুক্রবার খুলনা জেলা ও খুলনা মহানগরে মোবাইল কোর্টের এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেতু কুমার বড়ুয়া বলেন, আমাদের টিমটি সোনাডাঙ্গা বয়রা এলাকায় কাজ করছে। অধিকাংশ মানুষ সচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: খুলনায় মাঠে মাঠে সোনালি ধান কাটার উৎসব
নগরীর ব্যস্ত ময়লাপোতা মোড়ের যানবাহনগুলো চলছিল স্বাভাবিকভাবেই। এমন সময় সাইফুল ইসলাম ব্যবসায়িক কাজে বের হন মোটরসাইকেল নিয়ে। কোন রকম মাস্ক বা স্বাস্থ্যবিধি নেই। মোটরসাইকেলে দু'জন যাত্রী। ঠিক এ সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেতু কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম হাজির। টিমের সামনেই পড়তেই মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তাকে জরিমানা করা হয় ৫০০ টাকা।
সাইফুল ইসলাম বলেন, 'ব্যস্ততার কারণে মাস্ক পরার কথা মনে ছিল না।'
নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, 'এটা আসলে আমার সচেতনতার ঘাটতি ছিল। এখন থেকে আর এটা হবে না।'
আরও পড়ুন: খুলনায় করোনায় ৩ জনের মৃত্যু
শুধু সাইফুল ইসলামই নয়, যাদেরকে জরিমানা করা হয় তাদের সবার একই ধরনের বক্তব্য 'ব্যস্ততার কারণে আমি মাস্ক পরতে পারি নাই অথবা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছি না।'
এর আগে, খুলনা মহানগরীতে দ্বিতীয় দফায় দেয়া লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার মোট তিনটি টিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫৩ মামলায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া উপজেলাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন খুলনা জেলার নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)।
এ সময় সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহবান জানানো হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হয়। 'সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮' এবং 'দন্ডবিধি, ১৮৬০' এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক অর্থদণ্ড করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
আরও পড়ুন: খুলনায় চলছে কঠোর লকডাউন
খুলনা সদরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস,এম. রাসেল ইসলাম নূর।
তিনি বলেন, খুলনা উচ্চ ঝুঁকির থাকার পরেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। যাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই মাস্ক পরছেনা অথবা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন পুলিশ, আনসার ও এপিবিএন সদস্যরা। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
৩ বছর আগে