পূজামণ্ডপ
মির্জা ফখরুলই ভালো জানেন কুমিল্লার ঘটনা কিভাবে ঘটেছে: তথ্যমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'মির্জা ফখরুল সাহেবের কথা শুনে মনে হয়, কুমিল্লার ঘটনা কিভাবে ঘটানো হয়েছে, তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেই ভালো জানা যাবে।'
শনিবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
কুমিল্লার ঘটনায় সরকারকে দোষারোপ করে এবং কক্সবাজারে ইকবালের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্যের জবাবে ড. হাছান বলেন, 'প্রথম থেকেই মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্যের ধরণ হচ্ছে, 'ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না' এবং মনে হচ্ছে তিনিই ভালো বলতে পারবেন ইকবালকে কারা কক্সবাজারে পাঠিয়েছে। যারা এ ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে, তারাই ইকবালকে কক্সবাজার পাঠিয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটনা ঘটিয়ে আবার বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে।'
আরও পড়ুন: হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা দেশের চেতনার বেদীমূলে হামলা: তথ্যমন্ত্রী
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর ও দ্রুততম ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং সরকার দ্রুততম সময়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। একশ'র বেশি মামলা হয়েছে, কয়েকশ' জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং পূজামণ্ডপে যে কোরআন শরিফ রেখে এসেছিল তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে বাকি তথ্য বেরিয়ে আসবে।'
একইসাথে স্বল্পতম সময়ে পীরগঞ্জে পোড়া ঘরগুলো মেরামত, নতুন ঘর নির্মাণ এবং সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়ে ড. হাছান এসময় তার আইপ্যাড থেকে পীরগঞ্জে নতুন নির্মিত ঘর ও মানুষের রান্নাবান্নাসহ গৃহকর্মের চিত্র সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, সরকার যখন দ্রুততম সময়ে এসকল ব্যবস্থা নিয়েছে, তখন বিএনপি-জামাতসহ ধর্মান্ধগোষ্ঠি যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও কোথাও কোথাও রাস্তা অবরোধের খবর পাওয়া গেছে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও আমাদের চেতনার বেদিমূলে আঘাত। আমরাও এর প্রতিবাদ জানাই এবং প্রতিকারে সচেষ্ট। কিন্তু প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জনগণ যেন ভোগান্তির শিকার না হয় এবং আবেগতাড়িত হলেও যেন কারো বক্তব্য বাস্তবতাবিবর্জিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'
আরও পড়ুন: কুমিল্লার ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে: তথ্যমন্ত্রী
কোরআন অবমাননা: সন্দেহভাজন ইকবাল ৭ দিনের রিমান্ডে
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন ইকবাল হোসেনসহ চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিথিলা জাহান নিপা তাদের প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ মামলার অন্য তিন আসামি হলেন ইকরাম এবং দরগাবাড়ি মাজারের দুই সহকারী খাদেম হাফেজ হুমায়ুন ও ফয়সাল।
আরও পড়ুন: কোরআন অবমাননার ঘটনায় সন্দেহভাজন ইকবাল কক্সবাজারে গ্রেপ্তার
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে অবমাননার ঘটনায় সন্দেহভাজন ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এছাড়া অন্য তিন আসামিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য,গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এরপরই দেশের কয়েক স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হয়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লাসহ সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির,মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা,ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুই জন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর,লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বগুড়ায় সব মন্দির ও পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত
বগুড়ার সব মন্দির ও পূজামণ্ডপে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা সদরের সাবগ্রামের একটি মন্দিরের লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীসহ সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র, বিজিবি প্রতিনিধি, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় গ্রেপ্তার ৪, দেশীয় অস্ত্র জব্দ
বগুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চাচা-ভাতিজাসহ নিহত ৩
বগুড়ায় বাউল শিল্পীকে মাথা ন্যাড়া, স্কুল শিক্ষকসহ আটক ৩
কোরআন অবমাননার ঘটনায় সন্দেহভাজন ইকবাল কক্সবাজারে গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে অবমাননার ঘটনায় সন্দেহভাজন ইকবালকে গ্রেপ্তার করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার করার পর রাতেই তাকে কুমিল্লা পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, কুমিল্লার সেই ইকবাল কক্সবাজারে পালিয়ে আসেন। আসলে গ্রেপ্তার হওয়া ইকবাল কুমিল্লার সেই ইকবাল কিনা তা নিশ্চিত করবেন কুমিল্লা পুলিশ।
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবালকে চিহ্নিত করে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লাসহ সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এরপরই দেশের কয়েক স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হয়।
পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা,ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুই জন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে: তথ্যমন্ত্রী
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: সারাদেশে ৭২ মামলা, গ্রেপ্তার ৪৫০
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সারাদেশে মঙ্গলবার ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৭২টি মামলা হয়েছে এবং ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মোহাম্মদ শাহ জালাল জানিয়েছেন, আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন: পীরগঞ্জে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে: স্পিকার
তিনি বলেন, ঘটনা, অপরাধের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত কাজ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধকল্পে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
যে কোন বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য দেশের সকল নাগরিকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন এআইজি।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় কুমিল্লার সদর থানাধীন নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারী উসকানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায় এবং পরবর্তীতে আরও উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারী সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজামণ্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া দুষ্কৃতিকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজামণ্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালিতলাসহ আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।
মোহাম্মদ শাহ জালাল জানান, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ রাত সাড়ে আটটায় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভাস্থ শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামণ্ডপে ৫০০ থেকে ৬০০ দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের উপর হামলা করে এবং পাঁচ থেকে ছয়টি পূজামণ্ডপ ভাংচুর করে। দুষ্কৃতিকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়। জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারায়।
আরও পড়ুন: হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধ করা প্রয়োজন: জাতিসংঘ
কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত ১৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা মন্দিরের কাছে ৮০০ থেকে ১০০০ উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো হয়ে উসকানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অসংখ্য ইট, লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি'র টহল দলের ওপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারায় এবং পরবর্তীতে পুকুর থেকে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানাধীন বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের জনৈক পরিতোষ (১৯) তার ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কাবা শরীফের অবমাননাকর ছবি আপলোড করে। পরবর্তীতে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাত প্রায় আটটার সময় এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এছাড়া, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়া থানা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থানা, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কাশিমপুর থানাসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সকল ঘটনায় সারাদেশে সাত জন প্রাণ হারায়। তন্মধ্যে দু’জন হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং পাঁচ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনকালে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
আরও পড়ুন: সরকারি একটি মহলের ইঙ্গিতে সাম্প্রদায়িক হামলা: ফখরুল
হিন্দুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তাদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি।
হাম্মাদি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, নিরপেক্ষভাবে ও স্বচ্ছভাবে ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং সহিংসতা ও ভাঙচুরের জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার অভিযোগের পর বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলা: ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
দেশের সবচেয়ে বড় হিন্দু উৎসব দুর্গাপূজার সময় এবং পরে হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবার এবং মন্দিরগুলোতে ‘সহিংস হামলার’ বিষয়ে হাম্মাদি বলেন, ‘দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য, তাদের বাড়ি, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার খবর পাওয়া গেছে যেটা ‘ক্রমবর্ধমান সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাবের লক্ষণ।’
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকাতে ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে লক্ষ্য করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: রংপুরে হিন্দুপল্লীতে আগুন: আটক ৪২
হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধ করা প্রয়োজন: জাতিসংঘ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা ছড়িয়ে বাংলাদেশে সম্প্রতি হিন্দুদের ওপর হামলা সংবিধানের মূল্যবোধ পরিপন্থী এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাতিসংঘের আবাসিক সময়ন্বক মিয়া সেপ্পো।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলবো সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করুন।’
এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মিয়া সেপ্পো।
কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ২০ জেলায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে সরকার।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নেতা হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্তের দাবি জাতিসংঘের
জাতিসংঘ অধিবেশনে একমঞ্চে ৩ বাংলাদেশি নারী
ঢাকায় সংঘর্ষ: ৩ মামলায় আসামি ৪ হাজারের বেশি
কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীতে মুসল্লি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পল্টন, রমনা ও চকবাজার থানায় এসব মামলা করা হয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২ হাজার ৫০০ জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১ হাজার ৫০০ জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পড়ুন: কোরআন অবমাননা: বায়তুল মোকাররম এলাকায় মুসল্লি-পুলিশ সংঘর্ষ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার আহ্বান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনসহ জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, তারা জাতির দুঃসময়ে, দুর্দিনে, বিপদে-আপদে সবার আগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজকে সেই সম্প্রীতি নষ্ট করতে এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে হবে।’
শুক্রবার রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে সম্প্রতি কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি কুমিল্লার পূজামণ্ডপে সৃষ্ট ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রের একটি অংশ উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পড়ুন: ১৯৭২ এর সংবিধানে ফিরতে শিগগিরই সংসদে বিল পেশ: মুরাদ
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে মানুষের সাড়া পায় না বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ইন্ধনের চেষ্টা করছে।’
শুধু দেশে নয় দেশের বাহিরেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা হতদরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নত দেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা এসব ঘটাচ্ছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তারা কখনোই দেশের উন্নয়ন চায় না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সকল ধর্মের মানুষের সহবস্থানে থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন। মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বঙ্গবন্ধু সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। মানুষ যে ধর্মের হোক না কেন, সে যেন রাষ্ট্রীয় অভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করে গেছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সেই নীতি বাস্তবায়ন করছেন।’
পড়ুন: সরকারি একটি মহলের ইঙ্গিতে সাম্প্রদায়িক হামলা: ফখরুল
কুমিল্লার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি ডা. জাফরুল্লাহর
কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা: চট্টগ্রামে ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে প্রতিমার পায়ে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় মূর্তি ভাঙচুর-হামলার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি জানানো হয়।
চট্টগ্রামের যে সব উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে সেগুলো হলো-হাটহাজারী ও বাঁশখালীতে ২ প্লাটুন করে, পটিয়া, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও চন্দনাইশে ১ প্লাটুন করে মোট ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জেলা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য বুধবার রাত ৯টা থেকে আগামী ১৬ অক্টোবর ৬ উপজেলায় ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
পড়ুন: কুমিল্লার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে: ওবায়দুল কাদের
কুমিল্লায় `পবিত্র কোরআন অবমাননা’, শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর