বাস্তুচ্যুতি
বাস্তুচ্যুতি হ্রাসে সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশ সরকার, আইওএম ও সিভিএফ’র
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিনিয়ত স্থানচ্যুতি এবং অভিবাসনের মূল চালক হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া না হলে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) যৌথভাবে জলবায়ু প্রভাবিত অভিবাসন ও স্থানচ্যুতির বিষয়ে অধিকতর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক কাঠামো সম্মেলনের (ইউএনএফসিসিসি) ২৭তম অধিবেশন (কপ-২৭) প্রেক্ষাপটে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিএফভি) প্যাভিলিয়নে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা ও আহ্বান উঠে আসে। ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা- অভিবাসন এবং জলবায়ু পদক্ষেপে ইতিবাচক ন্যারেটিভ গঠন’ নামের অনুষ্ঠানটির যৌথ আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইওএম ও সিভিএফ।
কপ-২৭ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই বিশেষ সাইড-ইভেন্টে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা বিষয়ক নানা বিষয়ে সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা যোগ দেন।
উল্লেখ্য কপ-২৭ অভিবাসনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্য অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহকে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, আইওএম ও সিভিএফ-এর প্রতিনিধিরা শনাক্ত করেন যে মানুষ এবং তার সম্প্রদায়ের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়ন দ্বিগুণ চায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো
অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২১ অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে আনুমানিক ২১৬ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হতে পারে।
বন্যা, ঝড়-বৃষ্টি, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার উচ্চ সংবেদনশীলতাসহ ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা এবং সেইসঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে জনমত তৈরিতে এগিয়ে রয়েছে।
২ বছর আগে
জলবায়ু অভিবাসন মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান বাংলাদেশ ও আইওএম-এর
জলবায়ু পরিবর্তন অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুতির মূল প্রতিকূল চালিকা হিসেবে বিদ্যমান ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়নকে তরান্বিত করে। জলবায়ুকেন্দ্রীক অভিবাসন মোকাববিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ তীব্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করবে।
সোমবার ঢাকায় অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জলবাযূ পরিবর্তন ও অভিবাসন বিষয়ক নীতি সংলাপে এসব কথা বলেন দেশি বিদেশি আলোচকরা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।
এই সংলাপে সরকার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সংলাপের উদ্দেশ্য ছিল, জলবায়ু পরিবর্তন-অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক এজেন্ডাকে আরও গতিশীল করা। এছাড়া মিশরের শারম-এল-শেখ শহরে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে অভিবাসন, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যাতে বাংলাদেশ নেতৃত্বে দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আবদুল মোমেন বলেন, জলবায়ু অভিবাসী ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গাফিলতি থাকা ঠিক না। তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি শালীন জীবনযাত্রার অবস্থা গড়তে সরকার যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছে, তা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ধীরে ধীরে জলবায়ু-সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা তৈরির মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুখ খুলছে।
নীতি সংলাপের সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জলবায়ু পরিবর্তের কারণে সৃষ্ট অভিবাসন সমস্যা বিশ্বব্যাপী উত্থাপনে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব জোর দিয়ে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো দুর্বল দেশগুলোর পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন ।’
প্যারিস চুক্তির আলোকে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত করার লক্ষ্য পূরণের জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নীতিগুলিতে জলবায়ু অভিবাসনকে একীভূত করা দরাকার।
সামগ্রিকভাবে, বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়নে পৌঁছতে পারে। একইসঙ্গে এটি অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের এক নম্বর কারণ হতে পারে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তার উন্নয়ন পরিকল্পনা কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে একটা ‘অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় জাতীয় কৌশল’ প্রণয়ন করেছে। দেশের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সকল মূল নীতিমালায় জলবায়ু অভিবাসন একটি আলোচিত বিষয়; যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কার্যপরিকল্পনা (২০০৯), ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা দশক ২০৩০।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজনে সমন্বিত পদক্ষেপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনা জলবায়ু অভিবাসন মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে৷ আজকে নেয়া নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য কতটা সহায়ক তা নির্ধারণ করবে।’
সংলাপ চলাকালীন আইওএম-এর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিশেষ দূত মিস ক্যারোলিন ডুমাস 'গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল কনসালটেটিভ প্রসেস অ্যান্ড পলিসি ফ্রেমওয়ার্কস'-এর ওপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সচিবালয়ের প্রধান গোলাম রব্বানী ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা' বিষয়ে আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ডেপুটি মহাপরিচালক উগোচি ডেনিয়েলস বলেন, ‘আইওএম অভিবাসন নীতিমালা এবং প্রায়গিক জ্ঞান সহায়তা প্রদানে বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান। অভিবাসন, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল ২০২১-২০৩০ এর প্রতিফলন হিসেবে জলবায়ু অভিবাসন নিয়ে আইওএম আহ্বায়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে যারা ইতোমধ্যে অভিবাসন করেছেন, করতে আগ্রহী এবং যারা অভিবাসন করেননি, সকলের জন্য সমাধান আনয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আইওএম।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস বলেছেন, ‘জলবায়ু অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বাংলাদেশে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহায়ক অবকাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬-এ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
এছাড়াও, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক জনাব সালিমুল হক; দুর্যোগ অভিবাসন প্লাটফর্ম সচিবালয়ের প্রধান জনাব এটেল সোলবার্গ এবং ইউএন উইমেন-এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মিস দিলরুবা হায়দার এই সংলাপে কথা বলেন।
সংলাপের সমাপনীতে, আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান আব্দুসাত্তর এসোয়েভ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য সকল অংশীদারদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
পড়ুন: জলবায়ু অভিবাসীদের ব্যাপারে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে: ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
২ বছর আগে
বিশ্বব্যাপী মানুষের বাস্তুচ্যুতি বেড়েছে
কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপর্যয়,সংঘাত এবং সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম )‘বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২’- এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার বিকেলে অভিবাসন বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইওএম । প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে।কেননকা সংস্থাটির তথ্যমতে, অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে গেল দুই বছরে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন খাতের আদ্যপান্ত তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিষয় বিশ্লেষণে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে অভিবাসনের ঐতিহাসিক এবং সমসাময়িক কারণগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী,বিশ্বে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২৮১ মিলিয়ন বা ২৮ কোটি ১০ লাখ। অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬ষ্ঠ এবং রেমিট্যান্স গ্রহনে ৮ম।
আরও পড়ুন: আজ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস
প্রতিবেদন সম্পর্কে আইওএম’র মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, “আমরা একটি বৈপরীত্য লক্ষ্য করছি, যা মানব ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। কোভিড ১৯ এর কারণে শত কোটি মানুষ আটকা পড়েছে। তার পরেও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছেন।”
প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যাত্রী সংখ্যা ছিল চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন যা ২০২০ সালে এক দশমিক আট বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দুর্যোগ, সংঘাত ও সহিংসতার ফলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন, যা এক বছর আগে ছিলো ৩১ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন।
প্রতিবেদনটির সম্পাদক ম্যারি ম্যাকঅলিফ বলেছেন,“বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন সিরিজের ১১তম সংস্করণটিতে অভিবাসন বিষয়ে সম্প্রতিক তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অভিবাসন প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাখ্যা করা হয়েছে অভিবাসন নীতির নতুন নতুন দিক।”
আরও পড়ুন: কয়েক লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্বের মর্যাদা দিতে যাচ্ছেন বাইডেন
প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮৪ মিলিয়ন থেকে ২০২০ সালে ২৮১ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানুষই (৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ) যে দেশে জন্মগ্রহন করে সে দেশেই বসবাস করে। কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা দুই মিলিয়নের মতো কম ছিলো।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বসবাস করা বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল সাত দশমিক ৪০ মিলিয়ন। বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করেও প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২০১৯ সালে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে এসেছে যারা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) দেশগুলোতে প্রধানত ‘নিম্ন-দক্ষ’ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এই রেমিট্যান্সগুলো, যা জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় উদ্বুব্ধ করার জন্য নীতিনির্ধারকদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে নগদ প্রণোদনা স্কিমের সর্বোচ্চ সীমা তিনগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে – যার ফলে রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীরা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর উপর দুই শতাংশ বোনাস পান পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত। এছাড়া, রেমিট্যান্স পাঠানোর উৎসাহ আরও বাড়াতে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত এক শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রশংসায় সৌদি কর্তৃপক্ষ
আইওএম বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকমর্তা ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন,“রেমিট্যান্সের প্রবাহের ওপর কোভিড-১৯ অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অভিবাসীরা গন্তব্যদেশে উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন করে এবং তারপরে নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করে।”
বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদনটি ডিজিটাল উপায়ে পড়া ও দেখার জন্য একটি অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে। এ বছরের শুরুতে প্রতিবেদনটির ২০২০ সালের সংস্করণটি ‘আন্তর্জাতিক বার্ষিক প্রতিবেদন পুরষ্কার ২০২১’ এ সোনা জয় করেছে।
২০২২ সংস্করণে এখন একটি নতুন এবং সাধারণ ফ্যাক্ট-চেকারদের টুলকিট রয়েছে যা মাইগ্রেশনের মূল মিথগুলিকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে। তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি, প্রতিবেদনে সেইসব পাঠকদের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়গুলো আওতাভুক্ত করে যাদের আরও গভীরতর বিষয়বস্তুর প্রয়োজন। বিষয়গুলো হলো- স্থানান্তর এবং জলবায়ূ পরিবর্তন; অভিবাসনের সাথে শান্তি ও উন্নয়নের যোগসূত্র; অভিবাসন পথে মানব পাচার; কোভিড-১৯ এর প্রভাব; মাইগ্রেশন সম্পর্কে বিভ্রান্তি; ভুল তথ্যের যুগে অভিবাসীদের অবদান; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্থানান্তর, যা বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ দর্শকশ্রোতা উভয়ের জন্য সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
৩ বছর আগে