কসমস ফাউন্ডেশন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস বেইজিংয়ের
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের চাওয়া পূরণে চীন সব সময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করে যাবে।’
কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ আমরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি এবং দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে সহায়তার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা কখনই বদলাবে না।’
মূল বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, ’এই বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মিয়ানমারে হঠাৎ করে সেনা অভ্যুত্থান সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবং যে কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, চীন মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, আশা করছি শিগগিরই দেশটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বৃহস্পতিবার রাতে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এতে আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, ‘বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও উপ আঞ্চলিক ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে আমি চীনকে অনুরোধ করব, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে চীন সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে।’
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশটিতে বর্তমানে যে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে তার প্রভাব চীন, বাংলাদেশ, ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ওপরও পড়তে পারে।
তারিক এ করিম বলেন, ‘তাই, আমি এই ইস্যুটিকে নতুন করে দেখার এবং তাদের প্রভাব ব্যবহার করে দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত লি’র মন্তব্যের বিষয়ে শমসের মুবিন বলেন, এই ইস্যুর সন্তোষজনক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি মানবিক সমস্যা, এই সম্প্রদায়ের সম্মানের কথা মাথায় রেখে এর সন্তোষজনক সমাধান না হলে এটি নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, এই ইস্যুর সমাধান যে দেশগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাদের আর দেরি না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সন্ধান করা উচিত।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রোহিঙ্গরা কি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং ভূ-তাত্ত্বিক স্বার্থের শিকার? আমি মনে করি এ প্রশ্নটিই এই অঞ্চলের প্রভাবশালী রাষ্ট্রদের খুব খোলামেলা ও আন্তরিকতার সাথে জিজ্ঞাসা করা দরকার। এটি অনেক বেশি মানবিক সমস্যা এবং আমি মনে করি এর কার্যকর এবং সময়োপযোগী সমাধান হওয়া উচিত।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সার্বজনীন প্রশংসা পেয়েছে বলেও সাবেক এই কূটনীতিক উল্লেখ করেন।
রাখাইন রাজ্যের সঙ্কটকে একটি জটিল ও ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, চীন মিয়ানমার সরকারকে রক্ষা করছে।
এই বিশ্লেষক বলেন, ভারতও মিয়ানমারে প্রভাবের জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সমালোচনা করছে।
বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন যে, বাংলাদেশকে কখনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ বা কথিত ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ‘ঋণ’ কখনও কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চাবি-কাঠি হয়ে উঠবে না বলে আশ্বস্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খুব দক্ষতার সাথেই বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘আমি অবশ্যই বলবো যে, আপনারা খুবই দক্ষতার সাথে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করেছেন এবং আপনাদের কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ নেই। আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তাই, কথিত ঋণের ফাঁদ নিয়ে চিন্তা করবেন না।’
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
উক্ত আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।এছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
আরও পড়ুন: দ্রুতই টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারে সেরাম
আলোচনার এক পর্যায়ে চীনের অর্থায়নে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ঋণের ফাঁদ বর্তমান বিশ্বে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ অঞ্চলে চীনের ব্যাপক ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থা।
এরই প্রেক্ষিতে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর কোনও দেশেই ঋণের ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করেনি চীন। তিনি দাবি করেন এমন কোনও কার্যক্রমের প্রমাণ নেই।লি বলেন, ‘আপনাদের দেশে সুপরিকল্পিত নীতিগত কাঠামো এবং দক্ষ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী রয়েছেন। তাই আপনাদের এই ব্যাপারে চিন্তিত হবার কিছু নেই।’এসময় চীনা রাষ্টদূত জানান, সম্প্রতি এক নিবন্ধ পড়ে তিনি জানতে পারেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া। তাছাড়া, এই ৮ শতাংশ ঋণের অধিকাংশই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে রয়েছে।
আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দেশের বড়-বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। তার মতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চীনের এমন অর্থনৈতিক কাযক্রমকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ঋণের ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করছে। আর এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
তবে এই অর্থনীতিবীদ বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে এবং দেশের মোট ঋণের বড় অংশই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া।’কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণের কারণেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে, বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে মোদির চিঠি: মানবজাতি শিগগিরই মহামারি কাটিয়ে উঠবে
ওয়েবিনারে ঋণ বিষয়ক আলোচনার জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বর্তমান চলমান সম্পর্ক ও বাংলাদেশের প্রতি চীন সরকার ও জনগণের সমর্থনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি দুই দেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে আরও লাভবান করবে বলে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের সুতোয় বাঁধবে চীন-ভারত সম্পর্ক
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় চীনা রাষ্ট্রদূত বেশ হৃদ্যতা প্রকাশ করেন। তার মতে, ভারতকে কখনও নিজেদের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেনি চীন।তিনি বলেন, ‘চীন কখনও ভারতকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। আমরা মনে করি আমাদের (চীন-ভারত) সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা কখনও ভাববেন না যে, ভারতের প্রতি চীনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। এমন কিছুই নেই।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
ভারতের মানুষ ও এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে লি বলেন, ‘আমরা এখনও অনেক বিষয়ে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আর ঐতিহাসিক ভাবে গত দুই থেকে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। যেকোনও শিক্ষিত চীনা নাগরিকের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আলাদা একটি শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে, যা কখনও জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।’
ভারত সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনার আলোকে কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান ২০০৪ সালে চীনের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই-এর (তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সাক্ষাৎকার নেয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভারত-চীন সম্পর্কে মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন- ভারত এবং চীনের মাঝে সেতু বন্ধন করতে পারে বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
প্রযুক্তির আদান-প্রদান
প্রযুক্তির আদান-প্রদান বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জানান, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির আদান-প্রদান চলছে।এসময় উদাহরণ হিসেবে লি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক আমদানি করতো না চীন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত চীনেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চীনে পোশাক আমদানি করছে।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন এতটাই উন্নতি করেছে যে, বাংলাদেশের কাছ থেকে চীন গারমেন্টস পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির আদান-প্রদান ঘটছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেবে জার্মানি
‘কোয়াড’ প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাবনা
আলোচনার এক পর্যায়ে একজন আলোচক চীন বিরোধী আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের জোট- কোয়াড প্রসঙ্গ তুলে আনেন। এ বিষয়ে গত মে মাসে লি জিমিং এর মন্তব্য চীন-বাংলাদেশের মাঝে বেশ অস্বস্তির তৈরি করে।কোয়াড প্রসঙ্গ উঠে আসায় চৈনিক এই কূটনীতিক নিজের সাফাই দেয়ার সুযোগটি লুফে নিয়ে জানান, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি শুধু এই জোটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভাবনার কথা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পর এদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রথম যা জানতে পেরেছি, তা হলো বাংলাদেশ সকলের সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে এবং কারো সাথে বৈরিতায় জড়াতে চায় না। তাই আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কোনও ক্ষুদ্র চক্রান্তকারী গোষ্ঠির সাথে জড়াবে না, বিশেষ করে কোনও যুদ্ধবাজ সামরিক জোটে।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের জন্য চিকিৎসা সামগ্রী গ্রহণ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিস্তা প্রকল্প
চীনের অর্থায়নে তিস্তার গভীরতা বাড়ানো প্রকল্পের ব্যাপারে লি জিমিং কে প্রশ্ন করা হয়।তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সাধারণ মানের।চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রস্তাবনার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রথমে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই এর প্রতিবেদন তৈরি করুন। এর পরে আমরা এই প্রকল্প মূল্যায়নের কাজ শুরু করবো। এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক, প্রকৃতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটগুলোও আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ভূ-রাজনীতির এই টানাপোড়েনের সময়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখে দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনলাইন সংলাপে তারা দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুন: সন্ধান মেলেনি পদ্মায় নিখোঁজ চীনা প্রকৌশলীর
‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সম্পর্ক উন্নয়নে পাঁচ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ চীনা রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মূল বক্তব্যে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করি।’ রাষ্ট্রদূত লি পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন যেখানে বাংলাদেশ ও চীন বর্তমান অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে পারে। এগুলো হলো মহামারি রোধে সহযোগিতা আরও বাড়ানো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাৎক্ষণিক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা এবং বহুপাক্ষিকতা বহাল রাখা।
চীনা রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মহাসচিব শি জিমিংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) শিগগিরিই তার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী এবং আরও প্রাণবন্ত করতে সিপিসি বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: তিন নভোচারী নিয়ে চীনের প্রথম মহাকাশ যাত্রা
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া
উদ্বোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে যোগাযোগের যে ব্যাপ্তি ও প্রসার রয়েছে তা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। এ সময় তিনি অনেক আগে তার নেওয়া চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন।ওয়াং ইয়েকে অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, তিনি (ওয়াং ইয়ে) আমাকে বলেছিলেন, চীনের মূলনীতি হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সুশীল এবং উভয় পক্ষের অংশীদাররা এই সম্পর্ককে আরও প্রশস্ত ও গভীর করতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী চীনের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যন্য রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব উত্থানে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “চীনের উত্থান সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের বড় ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রথম হতে প্রস্তুত।
ড. চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেয়ে চীনের দৃষ্টি আরও বেশিকিছুর দিকে। ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেটি জানান দিচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে সর্বদাই উদীয়মান শক্তি এবং বর্তমানে এগিয়ে যাওয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব আশা করে যে এ ধরনের সংঘাত এড়ানো যায় এবং শেষ পর্যন্ত বড় শক্তিগুলো যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। চীনের স্বপ্ন বলতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যা বলেছেন তা এভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৯৭ ভাগ পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে চীন: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কূটনীতিকে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক এবং বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সার্মথ্য এবং সংকল্পের পরিচয় দিয়েছে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্লেষকরা অবশ্যই এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের ওপর দৃষ্টি রাখতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর বিকাশ হিসাবে দেখছি যা সকলের, বিশেষত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপকার করতে পারে।’
যেহেতু রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তাই শমসের মনে করেন যে বিষয়টি সবার মাথায় রাখা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয়ভাবে নয়, এশীয় প্রশান্ত মহাসগারীয় সীমান্তের ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী।’তিনি রাষ্ট্রদূত লি এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদকে ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকতায় প্রতিস্থাপন করা উচিত। ‘আমি মনে করি এই বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং একসাথে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ ভাইরাস কমপক্ষে আরও বেশ কিছু সময়ের জন্য থাকবে।’
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. জু বলেছেন, ‘সাধারণ লক্ষ্য এবং পারস্পরিক সুবিধার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিজস্বতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা চীনা ও বাংলাদেশিরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভরসাপূর্ণ বন্ধুত্ব ভাগ করে নিয়েছি; যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে।’ ড. জু আশা প্রকাশ করেন যে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা দু'দেশকে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যাশার সাথে হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভূ-রাজনীতির টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না, কারণ তাদের দূরদৃষ্টি অনুযায়ী আগামী দিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্কে পরিণত হবে। এই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের আওতায় কীভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নিজস্ব ভিত্তিতে রক্ষা করতে পারে তা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা এবং নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব আরও জটিল হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে চীনের অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
কূটনৈতিক সর্ম্পকের বাইরে
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. নিং শেংনান বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসাবে আর্বিভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কেবল তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই নয়, একই উন্নয়ন ফিলোসফির মধ্যে নিহিত। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই শ্রমঘন শিল্প থেকে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন বিরোধী এই শক্তিশালী তরঙ্গের মুখোমুখি হয়ে চীন ও বাংলাদেশের যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান করা এবং একে রক্ষা করা প্রয়োজন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই পূর্বাভাস এমন একটি পথের সন্ধান দিচ্ছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীন ভবিষ্যতে চমৎকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।
ড. রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য কমপক্ষে তিনটি প্রয়োজনীয় শর্ত রয়েছে যা হল: দুই দেশের মধ্যে উৎপাদন নেটওর্য়াক তৈরি, ঝুঁকি-ভাগ করে নেওয়ার ভিত্তিতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তর।সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’-বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ-চীন: একই স্বপ্ন দেখে
চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান তার সমাপনী বক্তব্যে চীনের রোড এবং বেল্ট ইনিশিয়েটিভের কথা উল্লেখ করেন, যা দূর ও নিকটবর্তী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিশ্রুতি বহন করে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মধ্যে চীনের উন্নয়ন বাংলাদেশিদের কাছে গর্ব এবং আনন্দের অন্যতম উৎস। আমরা জানি যে চীনের জনগণের একটি স্বপ্ন আছে; বাংলাদেশের জনগণেরও সেই স্বপ্ন রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টায় রয়েছি আমরা।
কোভিশিল্ডের রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় কোভ্যাক্সিন প্রদানে আগ্রহী দোরাইস্বামী
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী উচ্চ দেশীয় চাহিদার মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভারত থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আরও একটি বিকল্প রয়েছে বলে তার আয়োজকদের মনে করিয়ে দিতে আগ্রহী।
হাইকমিশনার বলেছেন, সেরাম থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ছাড়াও তারা ক্রমাগত কোভ্যাক্সিন রপ্তানির জন্য যে বিকল্প প্রস্তাব করে আসছিল তা কেবল বাংলাদেশে পরীক্ষার জন্য নয়, বরং এখানে নিজস্ব ব্যয়ে সহ-উত্পাদনের জন্যও প্রস্তাব করেছিল।
কোভ্যাক্সিন ভারতের 'স্বদেশজাত ভ্যাকসিন' এর ব্র্যান্ড নাম। ভারতীয় কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) সহযোগিতায় হায়দরাবাদ ভিত্তিক ভারত বায়োটেক দ্বারা ভারতের মাটিতে উৎপাদিত এই ভ্যাকসিন।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর বাণিজ্য, সংযোগ ব্যবস্থা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ধারণ করে: দোরাইস্বামী
দোরাইস্বামী পুনরায় উল্লেখ করেন, কোভ্যাক্সিনের জন্য সহ-উত্পাদনের প্রস্তাবও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা যে কোনটি বেছে নিতে পারে। তারা চাইলে দুটোই অর্ডার করতে পারেন।
তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে 'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা' শীর্ষক একটি আলোচনা সভার বক্তব্যে বলেন, 'বাংলাদেশ সকল বিকল্প বেছে নিতে পারে। এটি কিছু বাছাই করতে পারে। তবে এটি বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত, কোনও ভারতীয় সিদ্ধান্ত নয়।'
প্রখ্যাত পণ্ডিত-কূটনীতিক এবং সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটি কসমস গ্রুপের দাতব্য সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজন করে। কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
এটি ছিল কসমস ফাউন্ডেশনের রাষ্ট্রদূত বক্তৃতা সিরিজের সর্বশেষ সিরিজ, যেখানে বাংলাদেশ এবং রাষ্ট্রদূতরা যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে তার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাথে অংশ নেয়ার আগে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের মূল বক্তব্য দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত (অব.) তারিক এ করিম, অধ্যাপক সি. রাজা মোহন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, ড. দেবপ্রিয়া ভট্টাচার্য, মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম মুনিরুজ্জামান, ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্রিগেডিয়ার মো. জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান এবং রাষ্ট্রদূত (অব.) কৃষ্ণন শ্রীনীবাসন সীমান্তের উভয় দিক থেকে টানা আলোচনাকারীদের প্যানেল হিসাবে বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড ব্র্যান্ড নামে বিক্রিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে। এটি জানুয়ারি থেকে শুরু করে ছয় মাসের জন্য তিন কোটি ডোজ সরবরাহের জন্য স্থানীয় ফার্মা জায়ান্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে একটি চুক্তি করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
ভারতে বর্তমান উচ্চ চাহিদা থাকায় ভ্যাকসিনের বাকি ডোজের সরবরাহ স্থগিত রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ কোভিশিল্ডের ৩৩ লাখ ডোজ পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে, যে কোনও দেশে ভারত পাঠানো সর্বাধিক পরিমাণ হলো ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, সেরাম ইন্সটিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বিষয়ে বেক্সিমকোর মাধ্যমে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি করেছে। 'এটি ভারত সরকারের সুবিধাজনক কোন চুক্তি নয়।'
আইসিডিডিআর, বি এবং ভারত বায়োটেক ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য চুক্তি সম্পাদন করে, তবে মূল ট্রায়াল এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কোভ্যাক্সিন কোভিশিল্ডের তুলনায় ৮০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
দু'দেশের সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে যে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো রয়েছে তা শনাক্ত করার জন্য অনলাইন এই আলোচনা সভাটি কসমস গ্রুপের দাতব্য সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজন করে।
হাইকমিশনার বলেন, তারা যুক্তরাজ্যসহ আইনি ও বাণিজ্যিকভাবে বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ, প্রতিবেশীদের এবং অন্যান্য দেশেও তাদের ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: জরুরি মেডিকেল সহায়তা দিয়ে ভারতের পাশে বাংলাদেশ
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা সম্পর্কে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, এই মুহূর্তে ভারতে বড় একটি সংকট চলছে।
তিনি বলেন, 'আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন সহজলভ্য করতে এবং ভ্যাকসিনের উত্পাদন বাড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমরা কেবল আমাদের জনসংখ্যাকেই সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করতে নয়, বরং যারা এখন ভ্যাকসিনের প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না তবে সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাদের সরবরাহ করতে চাই।'
ভারত তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এবং একই সাথে পুনেতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াতে এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ভ্যাকসিন নির্মাতাদের দ্বারা তৈরি করা আরও বেশি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলোর চুক্তির আওতায় বাধ্যবাধকতা পূরণ করার চেষ্টা করছে।
বৃহত্তর বাণিজ্য, সংযোগ ব্যবস্থা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ধারণ করে: দোরাইস্বামী
পণ্যের ভবিষ্যতে মূল্য সংযোজনকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্ভাব্য মূল চালক হয়ে উঠতে পারে বলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী জানিয়েছেন। তবে, এক্ষেত্রে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের বাণিজ্য ও সম্পূর্ণ নতুন কাঠামোর দিকে নজর দেয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বাণিজ্য আমাদের বন্ধুত্বের মূল চালিকা হয়ে উঠবে।' তিনি আরও জানান, পরবর্তী প্রজন্মের সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে সম্পর্কে দুই দেশকে দুরদর্শী হওয়া দরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে প্রিমিয়ার করা 'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা' শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেয়ার সময় হাইকমিশনার দোরাইস্বামী এই মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ও ভারতের অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সি রাজা মোহন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, পলিসি ডায়ালগ সেন্টারের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয়া ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম মুনিরুজ্জামান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্রিগেডিয়ার ড. জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান এবং সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব কৃষ্ণান শ্রীনীবাসন- দু'দেশের সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে যে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো রয়েছে তা শনাক্ত করার জন্য অনলাইন আলোচনা সভায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশে ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ক, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে এক অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কসমস ফাউন্ডেশন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় এই আলোচন সভা শুরু হবে এবং সম্পূর্ণ আলোচনাটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হবে।
‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ ভাবনা’ বিষয়ক আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান।
কসমস ফাউন্ডেশন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের আয়োজন করে আসছে। এসকল আলোচন সভায় আমন্ত্রিত রাষ্ট্রদূত এবং বিশেষজ্ঞ অতিথিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও বৈদেশিক সম্পর্ক ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে নিয়ে গ্যালারি কসমসের আয়োজিত দুই মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী সমাপ্ত
ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার শনিবার
এবারের আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আমন্ত্রিত আলোচকদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ. করিম, অধ্যাপক সি. রাজা মোহন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম মুনিরুজ্জামান, ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত কৃষ্ণান শ্রীনিভাসান।
বৃহস্পতিবার সম্প্রচারের পর হতে যেকোনও সময় যেকোনও জায়গা হতে কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে আলোচনার ভিডিওটি দেখা যাবে।
গত এক যুগ সময় ধরে বাংলাদেশ এবং ভারত সত্যিকার এক সুসম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে, যা পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ্য প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্কে সাথে তুলনা যোগ্য।
বাংলাদেশ এবং ভারতের সুসম্পর্ক নিহিত আছে দু’দেশের অভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মাঝে, যা কখনোই মুছে ফেলা যাবে না। আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য সাহায্যে মাধ্যমে এই সম্পর্ক চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
এছাড়া বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির অনুষ্ঠানে সবচেয়ে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কে চলমান স্বর্ণযুগের ই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে আসন্ন উন্নয়নের পথে দেশের নীতিগত ও সামাজিক দিক নিয়ে আলোকিত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সময়েই আলোচনা সভার আয়োজন করে আসছে কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা মূল বিষয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে
বাইডেন শাসনামলে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে তারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের ঘটনাবলী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার দরকার আছে বলে তারা মনে করেন।
শনিবার রাতে কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনলাইন অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা-ওয়াশিংটনের বর্তমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় চ্যালেঞ্জসমূহ এবং সুবিধার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার উদ্দেশে কসমস ফাউন্ডেশন এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যান।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সিম্পোজিয়ামটি ছিল কসমস ফাউন্ডেশনের ফ্ল্যাগশিপ ‘ডায়ালগ’ সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, বাংলাদেশি-আমেরিকান বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. নীনা আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সেরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কুগেলম্যান তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক, বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা এবং বাইডেন যুগে কী প্রত্যাশা তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাইডেনের শাসনামলে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতা করার সুযোগ এবং মার্কিন ইন্দো প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন জানে যে চীন-ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে কেউ বিতর্ক করতে পারে যে, দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক বেইজিংয়ের তুলনায় উষ্ণ এবং আরও বহুমুখী, তবে স্পষ্টতই এখানে একটি প্রতিযোগিতা চলছে।’
রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভারতের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবাইকে একটি মূল বার্তা পাঠাতে চাইছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশেষত দুটি প্রধান শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে। এটি কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছে।’
সাবেক কূটনীতিক বলেন, ভারত এবং চীন যারা একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের সাথে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। ‘আমরা ইন্দো প্যাসিফিক এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেরও অংশ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে যা স্বাভাবিক, যেখানে চীন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে।
তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তাদের বৈদেশিক নীতিতে সাবধানতার সাথে বিবেচনা করতে হবে কারণ বাংলাদেশ এখন আর গুরুত্বহীন দেশ নয়।
এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, তারা আশাবাদী যে মিয়ানমারের বর্তমান ঘটনার বিষয়ে আমেরিকা বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ করবে এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমাধান করবে।
ড. ইফতেখার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কিত বিষয়গুলো জড়িত থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ছোট আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাথেও জড়িত হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লক্ষ্য উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হবে এবং আমরা বিশ্বাস করি ইতিবাচক ফলাফল আসবে।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, আমেরিকা ভারতের সাথে কীভাবে আচরণ করে তা বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ড. নীনা আহমেদ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের পিছনে মানুষের আত্মত্যাগ এবং কীভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন তা স্মরণ করেন।
তিনি দরিদ্রদের মাঝে বিনিয়োগের উপর জোর দেন। এছাড়া বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করতে নারীদের কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে এবং শ্রম বাজারে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুই নেই থেকে শুরু করে বাংলাদেশ এখন ৫০ বছরে এসে পৌঁছেছে।’
ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার শনিবার
ঢাকা-ওয়াশিংটনের বর্তমান সম্পর্ক ও এটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে কসমস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা একটি অনলাইন সিম্পোজিয়ামে একত্রিত হচ্ছেন।
‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন: বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যত নির্ধারণ’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যান মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় (ইএসটি সময় সকাল ১০টায়) কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে প্রিমিয়ারের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন।
সিম্পোজিয়ামটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফ্ল্যাগশিপ ‘ডায়ালগ’ সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ।
এছাড়া রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, ডা. নিনা আহমদ, ড. আলী রিয়াজ এবং রাষ্ট্রদূত সেরাজুল ইসলাম সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানের পুরো ভিডিওটি শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে দেখা যাবে।
করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রেকর্ড ৯ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে।
দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্পর্কের সম্ভাবনা এবং দীর্ঘকালীন আলোচিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিজনেস কাউন্সিল এখন বাস্তবতা কাছাকাছি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউএস চেম্বার অব কমার্স এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এটি উদ্বোধনের আয়োজন করেছে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সংবাদ মার্কিন গণমাধ্যমে খুব গুরুত্ব পেয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ‘৫০ স্প্রিং অব ফ্রিডম’ আর্ট ক্যাম্প সম্পন্ন
এই পটভূমিতে কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি এবং নীতি সমাধানের প্রতিশ্রুতির সাথে মিল রেখে এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করছে।
মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ রাতে শুরু
বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের আলোকে ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শীর্ষক মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হবে।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে গ্যালারি কসমসের আয়োজিত দুই মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী সমাপ্ত
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গ্যালারি কসমস আয়োজিত দুই মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।