‘শেখ হাসিনা: অন দ্য রাইট সাইড অব হিস্ট্রি’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনীতে এক আনন্দিত কিশোরী থেকে মায়ের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে কীভাবে কোটি কোটি বাংলাদেশিদের অন্ধকারের থেকে উদ্দীপ্ত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন তার বিস্তৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
চিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি এবং চালচলনের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠেছেন তা শিল্পীরা তাদের তুলির আঁচরে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং বিভিন্ন সময়ে তার ওপর হামলাসহ অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জের মুখে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোতে সুনিপুণভাবে তার অভিব্যক্তি এবং কঠিন সময়ের বিভিন্ন ভঙ্গিমা এবং চালচলন তুলে ধরা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: হাসিনাকে নিয়ে আয়োজিত শিল্প প্রদর্শনীর প্রশংসা ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আরেফিন রাজধানীর কসমস সেন্টারে চলমান দুই মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্যালারি কসমস সম্প্রতি কসমস আতেলিয়ার৭১-এর সাথে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে। আর্ট ক্যাম্পে আঁকা ছবিগুলো নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনাকে একজন কর্মতৎপর ও অমায়িক মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে ড. আরেফিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের সাথে এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, তাদের আত্মীয়। তবে, রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ় মনোভাব এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে অ্যালবাম তৈরির কাজ করছি: পাকিস্তানি হাইকমিশনার
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার সক্ষম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, অপরিসীম সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোবলের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তার ব্যক্তিগত এসব গুণাবলি শিল্প প্রদর্শনীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকারও প্রশংসা করে ঢাবির সাবেক ভিসি বলেন, অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের নাগরিকদের জন্য একটি টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে, শুধুমাত্র শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষ এখন দেশে টিকা পাচ্ছেন।
ফেব্রুয়ারিকে জাতির ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মাস হিসেবে উল্লেখ করে ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মানুষে-মানুষে বন্ধন বাড়িয়ে তুলতে পারে শিল্প: ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাও জানান ড. আরেফিন।
মোট ২১টি অনন্য শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কসমস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতউল্লাহ খান এবং গ্যালারি কসমসের সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সাবেক কূটনীতিক তারিক এ করিম শিল্পকর্মগুলোতে শেখ হাসিনার ভাব ও অভিব্যক্তি সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য শিল্পীদের অভিনন্দন জানান। ‘আমি এমনও ছবি দেখতে পেয়েছি যেখানে শিল্পীরা খুব সুন্দরভাবে তার (হাসিনার) আশ্চর্যন্বিত ও চোখের ভাব এবং চিন্তাভাবনাগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।’
‘আমি অবাক হয়ে দেখি কীভাবে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নিজেকে দক্ষ এবং তার পিতার দর্শন বাস্তবায়ন করেছেন। শিল্পীরা এখানে যথাযথভাবে তার এই গুণাবলি এবং ভাবগুলো তুলে ধরেছেন,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শিল্পকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: দোরাইস্বামী
কসমস গ্রুপের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান কেট জারো খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যাকে নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে কসমস গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী শুধু আমাদের ভবিষ্যতই দেখিয়েছেন তা নয়, সেই সাথে প্রতিটি তরুণী, ছেলে, পুরুষ এবং নারীদের তাদের জীবনের শেষদিন অবধি কীভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় তার অনুপ্রেরণাও দিয়ে যাচ্ছেন।’
এর আগে, কেট জারো খান অতিথিদের স্বাগত জানান এবং প্রদর্শনীর বিষয়ে অবহিত করেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিমের স্ত্রী নাজমা করিম, ওয়াইল্ডটিমের সিইও মো. আনোয়ারুল ইসলাম এবং গ্যালারি কসমসের এক্সিকিউটিভ আর্টিস্টিক ম্যানেজার সৌরভ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
পরে, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন ও পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা ডি অলিভিয়েরা জুনিয়র এ চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
ক্যাম্পে প্রখ্যাত শিল্পী অলকেশ ঘোষ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, নাসির আলী মামুন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, রত্নেশ্বর শুত্রধর, রাসেল কান্তি, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী, মানিক বনিক, জয়ন্ত সরকার, আজমল হোসেন, ফিদা হোসেন, অমিত নন্দী, দিদারুল লিমন, তামান্না আফরোজ, ফাহিম চৌধুরী, মিসকাতুল আবির, প্রসূন হালদার, হাসুরা আক্তার রুমকি ও সুরভী আক্তার অংশ নেন।