বাইডেন শাসনামলে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে তারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের ঘটনাবলী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার দরকার আছে বলে তারা মনে করেন।
শনিবার রাতে কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনলাইন অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা-ওয়াশিংটনের বর্তমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় চ্যালেঞ্জসমূহ এবং সুবিধার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার উদ্দেশে কসমস ফাউন্ডেশন এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যান।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সিম্পোজিয়ামটি ছিল কসমস ফাউন্ডেশনের ফ্ল্যাগশিপ ‘ডায়ালগ’ সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, বাংলাদেশি-আমেরিকান বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. নীনা আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সেরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কুগেলম্যান তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক, বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা এবং বাইডেন যুগে কী প্রত্যাশা তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাইডেনের শাসনামলে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতা করার সুযোগ এবং মার্কিন ইন্দো প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন জানে যে চীন-ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে কেউ বিতর্ক করতে পারে যে, দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক বেইজিংয়ের তুলনায় উষ্ণ এবং আরও বহুমুখী, তবে স্পষ্টতই এখানে একটি প্রতিযোগিতা চলছে।’
রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভারতের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবাইকে একটি মূল বার্তা পাঠাতে চাইছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশেষত দুটি প্রধান শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে। এটি কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছে।’
সাবেক কূটনীতিক বলেন, ভারত এবং চীন যারা একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের সাথে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। ‘আমরা ইন্দো প্যাসিফিক এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেরও অংশ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে যা স্বাভাবিক, যেখানে চীন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে।
তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তাদের বৈদেশিক নীতিতে সাবধানতার সাথে বিবেচনা করতে হবে কারণ বাংলাদেশ এখন আর গুরুত্বহীন দেশ নয়।
এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, তারা আশাবাদী যে মিয়ানমারের বর্তমান ঘটনার বিষয়ে আমেরিকা বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ করবে এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমাধান করবে।
ড. ইফতেখার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কিত বিষয়গুলো জড়িত থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ছোট আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাথেও জড়িত হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লক্ষ্য উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হবে এবং আমরা বিশ্বাস করি ইতিবাচক ফলাফল আসবে।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, আমেরিকা ভারতের সাথে কীভাবে আচরণ করে তা বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ড. নীনা আহমেদ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের পিছনে মানুষের আত্মত্যাগ এবং কীভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন তা স্মরণ করেন।
তিনি দরিদ্রদের মাঝে বিনিয়োগের উপর জোর দেন। এছাড়া বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করতে নারীদের কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে এবং শ্রম বাজারে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুই নেই থেকে শুরু করে বাংলাদেশ এখন ৫০ বছরে এসে পৌঁছেছে।’