সাময়িক মুক্তি
ইরানে সাময়িক মুক্তি পেল নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদী
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মদীকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে ইরান। ক্যান্সারের উদ্বেগ মোকাবিলায় একটি জটিল অস্ত্রোপচারের পর তাকে তিন সপ্তাহের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ইরানের একটি কারাগার থেকে নোবেল জয়ী নার্গিসকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
তেহরানের ফুটেজে দেখা গেছে, উন্মুক্ত কালো চুল এবং কাপড় দিয়ে ডান পা ঢাকা অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স থেকে বের হচ্ছেন মোহাম্মদী। রাস্তায় নেমে চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যালো স্বাধীনতা! নারী, জীবন, স্বাধীনতা! স্বাধীনতা আমাদের অধিকার! স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক!’
মোহাম্মদীর সমর্থনদের তথ্যমতে, তিনি ২১ দিনের সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন। পরে আবারও তাকে সাজা ভোগ করতে কারাগারে যেতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নার্গিসের সমর্থকরা তার স্থায়ী মুক্তির আহ্বান জানালেও ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার চিকিৎসা ছুটির কথা স্বীকার করেনি।
সমর্থকরা যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদীর সঠিকভাবে নিরাময়ের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কমপক্ষে তিন মাস থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তারা বলেছে, শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাকে সাজা দেওয়া অন্যায় ছিল বলে জোর দেন তারা।
মোহাম্মদী বর্তমানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যা প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগে ১৩ বছর ৯ মাসের সম্মিলিত কারাদণ্ড ভোগ করছেন। বারবার গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘায়িত কারাবাস সত্ত্বেও তিনি মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে ২০২২ সালের নারী নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকে সমর্থন করেন। মানব ও নারী অধিকারের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। তার সময় অনেক নারী ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতা অমান্য করেছিলেন।
কারাবাসের সময় নার্গিস মোহাম্মদীর স্বাস্থ্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে একাধিক হার্ট অ্যাটাক এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের বিষয়টি জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
চলতি মাসের শুরুতে তার আইনজীবী জানান, ক্যান্সার সন্দেহে একটি হাড়ের ক্ষতের কারণে তার সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচারের করা হয়।
রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের রেবেকা ভিনসেন্ট মোহাম্মদীর সাময়িক মুক্তির বিষয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। তবে বাড়িতে পর্যাপ্ত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।
ভিনসেন্ট বলেন, 'আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মোহাম্মদীর মুক্তি ইরানে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের সঙ্গে মিলে গেছে। দেশটিতে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিষেধাজ্ঞার ফলে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বিক্ষোভ শুরু হতে থাকে। পরে সরকার এসব বিক্ষোভ দমন করতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রেক্ষিতে ইরানের বিরুদ্ধে 'সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগের নীতি পুনরায় শুরু করার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশটির চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: হিজাব ইস্যু: মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের
১ সপ্তাহ আগে