ভাঙন
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে গণ অধিকার পরিষদ
বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ গঠনের প্রায় ২০ মাস পর দলটিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বে নুরুল হক নুর দলের আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দিয়েছে।
কিবরিয়ার জায়গায় রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করে দলের সদস্য সচিব সাবেক ডাকসু সহ-সভাপতি নুরের অনুসারীরা।
এর জবাবে নুর ও রাশেদকে দল থেকে বহিষ্কার করেন কিবরিয়া।
দলের দপ্তর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নুর ও তার সমর্থকরা সোমবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদকে দলের আহ্বায়ক পদে মনোনীত করেন।
আরও পড়ুন: ভারতের প্রেসক্রিপশনে কিছু 'নিরপরাধ' জামায়াত নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে সরকার: নূর
বৈঠকে রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং সাংগঠনিক বিষয়ের পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়।’
সম্প্রতি রেজা ও নুর দুজনেই নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একে অপরের বিরুদ্ধে আর্থিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে 'স্বচ্ছতার অভাব ও মিথ্যাচারের' অভিযোগ এনে পোস্ট দেওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়।
কম্বোডিয়ায় অবস্থানরত রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দলের অর্থায়ন এবং মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নুরের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের দলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, নুর ও রাশেদের আয়ের উৎস দৃশ্যমান নয় এবং তিনি মনে করেন তারা চাঁদাবাজির ওপর ভিত্তি করে জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, ‘নুর অহংকার করে নিজেকে দলের প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রধান ঘোষণা করেন এবং দলের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কাতারসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তবে তিনি কত টাকা সংগ্রহ করেছেন তা প্রকাশ করেননি।’
রেজা বলেন, গত রবিবার গুলশানে দলের এক জরুরি বৈঠকে তিনি আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের কারণ সম্পর্কে নুরের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। পরে একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি দেখা দিলে তিনি সভা মুলতবি করতে বাধ্য হন।
সভা শেষে তিনি বলেন, নুর ও তার সমর্থকরা দল ভাঙার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সিলেটে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল
রেজা বলেন, সিনিয়রসহ দলের ৭৫ শতাংশ নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নুর ও রাশেদকে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা খুব শিগগিরই আবার বৈঠকে বসব এবং আমাদের দলের নতুন সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করব।’
তবে নুর বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি অভিযোগ করেন, রেজা তার নিজের অপকর্ম, দলবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার যোগাযোগ আড়াল করতেই এসব অভিযোগ এনেছেন।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার স্লোগান নিয়ে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে সদস্য সচিব করে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ গঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ৭ কর্মদিবসে সাবেক ভিপি নুরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে হাজিরের নির্দেশ
তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
তিস্তার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার দুই তীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুর ২টার দিকে পানি তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সময় তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদ সীমার শূন্য দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার কম।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফাউদ্দৌলা বিপদ সীমার শূন্য দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (১৯ জুন) সকাল সন্ধায় তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারেজের ভাটি এলাকার চর অঞ্চল গুলোতে পানি প্রবেশ করে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি কমলেও বাড়ছে ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তার তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি একদিন থাকার পর রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানির কমলেও দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত দুইদিন পানিবন্দি পরিবারগুলোর কাছে এখনও কোনো সরকারি সহযোগিতা পৌঁছায়নি।
এদিকে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুর্ণা, ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছ, কালমাটি এলাকায় পানি কমলেও দেখা দিয়েছে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ ভাঙনের মুখে উলিপুরের তিস্তা পাড়ের মানুষ
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি থাকার পর পানি নেমে গেলেও সরকারি সহযোগিতা এখনও পরিবারগুলো পায়নি।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। নির্দেশ পেলেই পানিবন্দি পরিবারের গুলোর মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, বন্যার্ত পরিবারের তালিকার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
আবারও ভাঙন ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ
আবারও প্রমত্তা মেঘনার ভাঙনের ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো এলাকা। ভাঙন-আতঙ্কে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন তাদের বসতঘর ও আসবাব সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন।
এদিকে ঝড়ের খবরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এ এলাকার প্রায় তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
চাঁদপুর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল আলাপকালে ইউএনবি কে জানান, নদীর পাড়ের শত শত জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীগণ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, কোনো জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলে আতঙ্ক যেনো আরও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: ধরলার তীব্র ভাঙন মুখে ৫ শতাধিক পরিবার
দেখা যায়, ভাঙন এলাকায় বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে ভাঙনের ভয়ে লোকজন তাদের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
লোকজন জানান, ভাঙন দেখা দেওয়ায় তারা তাদের ঘরের আসবাব সরিয়ে পাশের রাস্তায় রেখেছেন ও মাঠে ঠাঁই নিয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেখানে ভাঙন-আতঙ্ক কমেনি, বরং বাড়ছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল ইউএনবি কে বলেন, গেল বর্ষার সময় শহর রক্ষা বাঁধের ভালনারেবল স্পট পুরানবাজার দোল মন্দির ও হরিসভা এলাকায় মেঘনার ভাঙন হলে জরুরি ভিত্তিতে এ দুইটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছিল।
সেই কাজের অগ্রগতি ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে দেখে গেছেন।
আলাপকালে তিনি আরও বলেন, যমুনা রোড, টিলা বাড়ি, নতুনবাজার ও পুরানবাজারের দুইটি মোলহেড, দোল মন্দির, হরিসভা, রণাগোয়ালসহ আরও কিছু এলাকাও ভালনারেবল।
তিনি বলেন, এদিকে শহর রক্ষা বাঁধের তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার এলাকাই ভালনারেবল।
তিনি আরও বলেন, এসব ভালনারেবল স্পটে এবার বেশ কয়েক হাজার বালি ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হয়। বর্তমানে আরও ১০ হাজার সিসি ব্লক ও ১০ হাজার জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ নদীর পাড়েই প্রস্তুত আছে যাতে যে কোনো জরুরি ভাঙন মোকাবিলা করা যায়।
প্রতি ব্যাগে ৩০০ কেজি বালু দিয়ে ভরাট করতে দেখা গেছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে আমরা শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণের ওপর সার্ভে ও স্টাডি করেছি। সেই সার্ভে রিপোর্ট হেড অফিসে পাঠিয়েছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক স্থানেই বালু ভর্তি ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। আবার অনেক স্থানের ব্লক বা বালু ভর্তি ব্যাগ ঢেউয়ের আঘাতে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে নদীতে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন
এমনটাই দেখা গেলো হরিসভা, পশ্চিম শ্রীরামদী, পুরান ফায়ার স্টেশন, রণাগোয়াল, টিলা বাড়ি এলাকায়।
চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষার প্রকল্পটি কোন পর্যায় রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল বলেন, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্যে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠিয়েছি।
বর্তমানে সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার এ প্রজেক্ট দেওয়া হয়।
তাতে শহর রক্ষাবাঁধের তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার তিন হাজার ৩৬০ মিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজসহ মেঘনার পশ্চিমে কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা বিশাল মিনি কক্সবাজারসহ ১৩ কিলোমিটার নদী এলাকার চর ড্রেজিং এর কাজও রয়েছে। এছাড়া আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে অনেকের ধারণা, চাঁদপুর শহরের প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে মিনি কক্সবাজার নামক একটি বিশাল চর জেগে ওঠার কারণেই মেঘনার প্রশস্ততা কমে গেছে আর তার প্রভাবেই স্রোতের পানির প্রবাহ হরিসভা, পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকায় তীব্র ঘূর্ণি স্রোত সৃষ্টি ও ভাঙন দেখা দেয়।
নদীর পাড়ে বসবাসরত ভুক্তভোগী এলাকাবাসীদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে সুষ্ঠুভাবে বাঁধের কাজ না হওয়াতে আবারও ভাঙন ঝুঁকিতে থাকছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ।
তাই মেঘনার ভাঙন থেকে চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় যে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, সেটি যেনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় অনুমোদন লাভ করে সেই আবেদন ও প্রত্যাশা সকলের।
এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রীরও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
মৌসুমীর ‘ভাঙন’ ১১ নভেম্বর
চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও ফজলুর রহমান বাবু অভিনীত মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভাঙন’ মুক্তি পাচ্ছে ১১ নভেম্বর। এরইমধ্যে ত্রিশটির অধিক সিনেমা হলে ‘ভাঙন’ মুক্তি পাচ্ছে বলে প্রযোজনা সংস্থা ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছে।
প্রযুক্তিবাংলা কথাচিত্রের ব্যানারে নির্মিত জীবন-ঘনিষ্ঠ সাহিত্যনির্ভর এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে ‘মোহন গায়েনের বাঁশি’ নামক একটি ছোটগল্প অবলম্বনে।গল্পে বিবৃত হয়েছে একটি পুরোনো রেলওয়ে স্টেশনকে কেন্দ্র করে হকার, বংশীবাদক, চুড়িওয়ালী, ভিখেরি, পকেটমার, বেশ্যা, দালাল, মাদকসেবীসহ কযেকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মানুষের যাপিত জীবনের কথা।
আরও পড়ুন: ‘দেশান্তর’ নির্মাণ চেষ্টায় ঘাটতি রাখেননি আশুতোষ সুজন
সিনেমাটি প্রসঙ্গে পরিচালক মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘সিনেমাটির গল্প মানবজীবনের গভীরকে স্পর্শ করবে। মানুষ কাঁদবে। কষ্ট পাবে। শিহরিত হবে, রোমাঞ্চিত হবে। মূলতঃ কতিপয় ছিন্নমূল মানুষের সুখ-দুঃখের উপাখ্যানই হলো ভাঙন।’
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদান প্রাপ্ত পূণ্যদৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্রে আরও অভিনয় করেছেন মির্জা আফরিন, প্রাণ রায়, সৃষ্টি মির্জা, রাশেদা চৌধুরী, খলিলুর রহমান কাদেরী, হিমেল রাজ, আনোয়ার সিরাজী, সঞ্জয় রাজ, মিশু চৌধুরী ও মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেনসহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: মুক্তি পেল ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’
প্রথমবার ১০০ কোটির ক্লাবে পাকিস্তানি সিনেমা ‘দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট’
কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
সুন্দরবন ঘেঁষা খুলনার কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সোমবার ভোরে হঠাৎ করে কয়রার কপোতাক্ষ নদের তীরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ও শিবসা নদীর তীরে গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধে ধস শুরু হয়।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের তীরে বসবাসকারীদের মাঝে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করেছে।
আরও পড়ুন: ধরলার তীব্র ভাঙন মুখে ৫ শতাধিক পরিবার
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন,বাঁধের যা অবস্থা, ঘূর্ণিঝড় হলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া ছাড়া আমাদের নিস্তার নেই।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, হরিণখোলা বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুপুরের জোয়ারের আগে কাজ করতে না পারলে জমির ফসল, ঘরবাড়ি সব আবার নোনা পানিতে প্লাবিত হবে। হরিণখোলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে মেরামতের কাজের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, চার নং কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনাও ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দে ফেরি চলাচল ব্যাহত
ফেরিঘাটে ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীন বসতভিটা
পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দে ফেরি চলাচল ব্যাহত
পদ্মা নদীর ভাঙনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৩নম্বর ও ৪নম্বর ঘাট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া একটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আরও চারটি বাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এর আগে ৬ সেপ্টেম্বরও ভাঙনের কারণে ৫নম্বর ঘাট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার ৩নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। আড়াইটার দিকে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে নদীর পাড়ের সিদ্দিক কাজী পাড়ায় সালাম বেপারীর এক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়।
তারা জানিয়েছে, প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়ায় পাশের ৪নম্বর ঘাট ভাঙনের মুখে পড়ে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিন নম্বরের পাশাপাশি ৪নম্বর ঘাটটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে ফেরির লষ্কর নিখোঁজ
আরিচা অফিসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার জানান, খবর পেয়ে তিনি বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি খারাপ দেখে তখন ৩নম্বর ঘাটের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙনের কারণে ৪নম্বর ঘাটের কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরিচা অফিসের বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের তীব্রতায় ৩নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দর এলাকায় সড়ক ও ফেরিঘাট নির্মাণ দু’টি এলপিজি প্লান্টের কার্যক্রম ঝুঁকিতে ফেলবে
বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ৩নম্বর ঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলানোর কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে ঘাটটি চালু হতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ফেরিঘাটে ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীন বসতভিটা
ফেরিঘাটে ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীন বসতভিটা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে মুহুর্তের মধ্যে একটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়া আতঙ্কে আরও চারটি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে।
প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের কারণে তিন ও চার নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে ভাঙনে ছয় সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।
আড়াইটার দিকে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে নদী পাড়ে সিদ্দিক কাজী পাড়ার সালাম বেপারীর বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
আতঙ্কে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়।
রাতেই সালাম বেপারীসহ আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর পরিবার ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।
আরও পড়ুন: ঢাকামুখী মানুষদের দৌলদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার অনুরোধ নৌপ্রতিমন্ত্রীর
এই পাঁচটি পরিবার ফেরি ঘাটের অদূরে নিয়ে ঘরের চালাসহ জিনিসপত্র রেখেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে রাতে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার রাত আড়াইটার দিকে সরেজমিন এসে তিন নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ করে দেন।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই ঘাট পরিদর্শনে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তখন থেকে তিন নম্বর ঘাটটি বন্ধ করে দেন।
প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়ায় পাশের চার নম্বর ঘাট ভাঙনের মুখে পড়ে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চার নম্বর ঘাটটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, চার নম্বর ঘাটের পন্টুনের মেরামত কাজ চলায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষে রাতের মধ্যে ঘাটটি চালু করা যাবে বলে আশা করছি। এর আগে ছয় সেপ্টেম্বর প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গা ভাঙন দেখা দেয়ায় পাঁচ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে।
ভাঙনে তিন, চার ও পাঁচ নম্বর তিনটি ফেরি ঘাট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ছয় ও সাত নম্বর ঘাট চালু রয়েছে।
ভাঙন প্রতিরোধে বিআইডব্লিউটিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিন ও পাঁচ নম্বর ঘাট চালু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ক্ষতিগ্রস্ত সালাম বেপারীর ছেলে আশিক বেপারী বলেন, আমাদের মতো শতাধিক পরিবার ফেরিঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ায় বাস করছি। বুধবার রাত দুইটার পর তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় হঠাৎ পানির শব্দ বেড়ে যায়। শব্দের ভয়ে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দেখতে দেখতে চোখের পলকে আমাদের একটি ঘরের ভিটা বিলীন হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য ঘরের জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে নেই। এ সময় স্থানীয় আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর ঘর ভেঙে দ্রুত সরিয়ে ফেলে। যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় আমরা কোথায় যাব সেই চিন্তা করছি। রাত দুইটার পর থেকে ভাঙন শুরু হলেও বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে বালুর বস্তা ফেলা শুরু করেছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান কেউ খোঁজও নিতে আসেনি।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় নদীতে প্রচন্ড স্রোতের দেখা দিয়েছে। স্রোতের তীব্রতায় তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকার প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে তিন ও চার নম্বর ঘাট এলাকা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আজকের মধ্যে তিন নম্বর ঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শেষ হবে। তবে ঘাটটি চালু হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এছাড়া ৬ সেপ্টেম্বর ভাঙনে বন্ধ হওয়া পাঁচ নম্বর ঘাটটি চালু করতে পানি কমার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নতুন করে পানি বাড়ায় আপাতত চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন, ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ
ফরিদপুরে পদ্মা-মধুমতির ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি
গত কয়েক সপ্তাহ যাবত ফরিদপুরের দুটি নদী পদ্মা ও মধুমতি নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও জনপদ। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা।
জানা গেছে, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মধুমতির ভাঙন শুরু হয়েছে গত ১৫ দিন ধরে। অব্যাহত এই ভাঙনের কারণে এখন হুমকির মুখে জেলার সব থেকে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুন কন্যার উদ্যোগে আমরা যারা গৃহহীন ছিলাম তাদের বসবাসের স্থান পেয়েছিলাম । কিন্তু আগ্রাসী এই মধুমতি এখন আমাদের ঘুম নষ্ট করছে।
উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান জানিয়েছেন, মধুমতির ভাঙন এ উপজেলায় দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে বহুবার উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছি, আশ্বাসও পেয়েছি, কিন্তু স্থায়ী কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এখন সরকারের স্বপ্ন নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে রয়েছে।
আরও পড়ুন: নদী ভাঙনে দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ
ঘিওরে ইছামতি নদীর প্রবল ভাঙন, দুর্ভোগে নদী তীরবর্তী মানুষ
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে প্রায় দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গরুর হাটের অধিকাংশ জায়গা। হাট সংলগ্ন প্রায় ৫০টি বসতবাড়িও চলে গেছে ইছামতির পেটে। গত তিনদিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে নতুন করে ভাঙনের শিকার হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিওর-গোলাপনগর রাস্তা, কুস্তা বেইলি ব্রিজ, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেতু-কালভার্টসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম।
বৃহস্পতিবার থেকে ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত কুস্তা এলাকায় বেইলী ব্রিজের দুই পাশের পাদদেশে ভাঙন শুরু হয়। গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে সংযোগ সড়ক থেকে ব্রিজের মাঝে প্রায় দুই ফুট ফাঁকা হয়ে পড়ে। যে কোন সময় নদীগর্ভে ধসে পড়তে পারে ব্রিজটি। ঝুঁকি এড়াতে ব্রিজের ওপর দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
আরও পড়ুন:কপোতাক্ষের ভাঙন: হুমকির মুখে পাইকগাছার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকের বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও কুস্তা ব্রিজ, কুস্তা কবরস্থান, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এসব স্থাপনা ও বসতবাড়ি।
এছাড়া পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার, উপজেলা খাদ্য গুদাম, ব্রিজসহ ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। খাদ্য গুদামের সামনের বেইলি ব্রিজটিও যেকোনো মুহূর্তে চলে যাবে।
ইছামতি নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, হঠাৎই এই রকম ভাঙন তারা এর আগে দেখেননি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-১২টি গ্রামের বেশ কিছু এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ভয় ও আতংকে তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্যের পরিবর্তে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। এখন ভাঙন রোধে ভরা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এসব বালুর বস্তায় কোন কাজই হচ্ছে না। স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করলে এই ভাঙন রোধ সম্ভব হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন, ঘিওর কুস্তা বেইলি ব্রিজের গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আপাতত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্রিজটি রক্ষায় এরই মধ্যে দুই পাড়ে ব্রিজের গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ রক্ষার চেষ্টা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ইছামতি নদীটি খালের মত সরু। এর উৎস মুখে খনন করায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। এতে হঠাৎই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর বেইলী ব্রীজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙন মুখে তিন শতাধিক পরিবার
নদী ভাঙনে দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পাঁচ নম্বর টার্মিনাল দিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বুধবার ফেরি চলাচলের টার্মিনাল এলাকার ৫০ মিটার নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ ফেরি চলাচল বাতিল করে।
ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছে।
আরও পড়ুন: গাড়ি ও মানুষের চাপ কমে দৌলতদিয়া ঘাট ফাঁকা
উপজেলার অন্যান্য আরও তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের হুমকিতে আছে।
সম্প্রতি ইউএনবি’র প্রতিনিধি ফেরিঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখেন ভাঙন থেকে ঘাটের পল্টুন রক্ষায় বিআইডব্লিউটি’র ‘আইটি-৩৮০’ জাহাজের সাহায্যে সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
নদী ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ১০টি দোকানকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বুধবার পর্যন্ত ২০০ ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শনিবার থেকে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ