আবারও প্রমত্তা মেঘনার ভাঙনের ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো এলাকা। ভাঙন-আতঙ্কে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন তাদের বসতঘর ও আসবাব সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন।
এদিকে ঝড়ের খবরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এ এলাকার প্রায় তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
চাঁদপুর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল আলাপকালে ইউএনবি কে জানান, নদীর পাড়ের শত শত জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীগণ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, কোনো জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলে আতঙ্ক যেনো আরও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: ধরলার তীব্র ভাঙন মুখে ৫ শতাধিক পরিবার
দেখা যায়, ভাঙন এলাকায় বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে ভাঙনের ভয়ে লোকজন তাদের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
লোকজন জানান, ভাঙন দেখা দেওয়ায় তারা তাদের ঘরের আসবাব সরিয়ে পাশের রাস্তায় রেখেছেন ও মাঠে ঠাঁই নিয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেখানে ভাঙন-আতঙ্ক কমেনি, বরং বাড়ছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল ইউএনবি কে বলেন, গেল বর্ষার সময় শহর রক্ষা বাঁধের ভালনারেবল স্পট পুরানবাজার দোল মন্দির ও হরিসভা এলাকায় মেঘনার ভাঙন হলে জরুরি ভিত্তিতে এ দুইটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছিল।
সেই কাজের অগ্রগতি ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে দেখে গেছেন।
আলাপকালে তিনি আরও বলেন, যমুনা রোড, টিলা বাড়ি, নতুনবাজার ও পুরানবাজারের দুইটি মোলহেড, দোল মন্দির, হরিসভা, রণাগোয়ালসহ আরও কিছু এলাকাও ভালনারেবল।
তিনি বলেন, এদিকে শহর রক্ষা বাঁধের তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার এলাকাই ভালনারেবল।
তিনি আরও বলেন, এসব ভালনারেবল স্পটে এবার বেশ কয়েক হাজার বালি ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হয়। বর্তমানে আরও ১০ হাজার সিসি ব্লক ও ১০ হাজার জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ নদীর পাড়েই প্রস্তুত আছে যাতে যে কোনো জরুরি ভাঙন মোকাবিলা করা যায়।
প্রতি ব্যাগে ৩০০ কেজি বালু দিয়ে ভরাট করতে দেখা গেছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে আমরা শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণের ওপর সার্ভে ও স্টাডি করেছি। সেই সার্ভে রিপোর্ট হেড অফিসে পাঠিয়েছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক স্থানেই বালু ভর্তি ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। আবার অনেক স্থানের ব্লক বা বালু ভর্তি ব্যাগ ঢেউয়ের আঘাতে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে নদীতে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন
এমনটাই দেখা গেলো হরিসভা, পশ্চিম শ্রীরামদী, পুরান ফায়ার স্টেশন, রণাগোয়াল, টিলা বাড়ি এলাকায়।
চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষার প্রকল্পটি কোন পর্যায় রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী রেফাত জামিল বলেন, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্যে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠিয়েছি।
বর্তমানে সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার এ প্রজেক্ট দেওয়া হয়।
তাতে শহর রক্ষাবাঁধের তিন দশমিক ছয় কিলোমিটার তিন হাজার ৩৬০ মিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজসহ মেঘনার পশ্চিমে কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা বিশাল মিনি কক্সবাজারসহ ১৩ কিলোমিটার নদী এলাকার চর ড্রেজিং এর কাজও রয়েছে। এছাড়া আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে অনেকের ধারণা, চাঁদপুর শহরের প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে মিনি কক্সবাজার নামক একটি বিশাল চর জেগে ওঠার কারণেই মেঘনার প্রশস্ততা কমে গেছে আর তার প্রভাবেই স্রোতের পানির প্রবাহ হরিসভা, পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকায় তীব্র ঘূর্ণি স্রোত সৃষ্টি ও ভাঙন দেখা দেয়।
নদীর পাড়ে বসবাসরত ভুক্তভোগী এলাকাবাসীদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে সুষ্ঠুভাবে বাঁধের কাজ না হওয়াতে আবারও ভাঙন ঝুঁকিতে থাকছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ।
তাই মেঘনার ভাঙন থেকে চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় যে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, সেটি যেনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় অনুমোদন লাভ করে সেই আবেদন ও প্রত্যাশা সকলের।
এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রীরও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী