মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে প্রায় দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গরুর হাটের অধিকাংশ জায়গা। হাট সংলগ্ন প্রায় ৫০টি বসতবাড়িও চলে গেছে ইছামতির পেটে। গত তিনদিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে নতুন করে ভাঙনের শিকার হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিওর-গোলাপনগর রাস্তা, কুস্তা বেইলি ব্রিজ, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেতু-কালভার্টসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম।
বৃহস্পতিবার থেকে ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত কুস্তা এলাকায় বেইলী ব্রিজের দুই পাশের পাদদেশে ভাঙন শুরু হয়। গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে সংযোগ সড়ক থেকে ব্রিজের মাঝে প্রায় দুই ফুট ফাঁকা হয়ে পড়ে। যে কোন সময় নদীগর্ভে ধসে পড়তে পারে ব্রিজটি। ঝুঁকি এড়াতে ব্রিজের ওপর দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
আরও পড়ুন:কপোতাক্ষের ভাঙন: হুমকির মুখে পাইকগাছার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকের বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও কুস্তা ব্রিজ, কুস্তা কবরস্থান, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এসব স্থাপনা ও বসতবাড়ি।
এছাড়া পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার, উপজেলা খাদ্য গুদাম, ব্রিজসহ ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। খাদ্য গুদামের সামনের বেইলি ব্রিজটিও যেকোনো মুহূর্তে চলে যাবে।
ইছামতি নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, হঠাৎই এই রকম ভাঙন তারা এর আগে দেখেননি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-১২টি গ্রামের বেশ কিছু এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ভয় ও আতংকে তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্যের পরিবর্তে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। এখন ভাঙন রোধে ভরা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এসব বালুর বস্তায় কোন কাজই হচ্ছে না। স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করলে এই ভাঙন রোধ সম্ভব হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন, ঘিওর কুস্তা বেইলি ব্রিজের গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আপাতত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্রিজটি রক্ষায় এরই মধ্যে দুই পাড়ে ব্রিজের গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ রক্ষার চেষ্টা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ইছামতি নদীটি খালের মত সরু। এর উৎস মুখে খনন করায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। এতে হঠাৎই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর বেইলী ব্রীজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত