শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান ডিআইজি (পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘১৩ জনের মধ্যে দুই মেয়েসহ চারজন নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়ায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।’
তিনি জানান, নুসরাত হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি ছয়জনকে গ্রেপ্তারে পিবিআই অভিযান চালাচ্ছে।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পেছনে পিবিআই দুটি কারণ চিহ্নিত করেছে- যৌন হয়রানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, যে ঘটনাকে আলেম সমাজের জন্য অপমানজনক বলে ধরে নিয়েছিল হামলাকারীরা। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে শাহাদাত হোসেন শামীমের প্রেমের প্রস্তাব নুসরাতের প্রত্যাখ্যান।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা ছাড়াও নুসরাত বেশ কয়েকবার সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
শুক্রবার রাত পৌনে ১টার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার নুর উদ্দিন ও শামীমসহ চারজন ৪ এপ্রিল ফেনী কারাগারে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের সাথে দেখা করেন। এ সময় তিনি তাদের নুসরাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য কিছু করার নির্দেশ দেন।
নির্দেশনা পেয়ে নুর উদ্দিন, শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আরেকজন ৫ এপ্রিল মাদরাসার পশ্চিম হোস্টেলে বৈঠক করে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন, জানান বনজ কুমার।
এ পাঁচজন তাদের পরিকল্পনা মাদরাসার দুজন ছাত্রী ও দুজন ছাত্রকে জানান। সেই সাথে এক ছাত্রীকে তিনটি বোরকা ও কেরোসিন আনতে বলা হয়।
৬ এপ্রিল শম্পা ওরফে চম্পা নামে একজন নুসরাতকে তার বান্ধবী ‘নিশাতকে’ মারধর করার খবর দিয়ে ডেকে মাদরাসা ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়, বলেন পিবিআই প্রধান।
ঘটনার সময় প্রধান গেট পাহারা দিতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে হাফেজ কাদেরসহ পাঁচজন ভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
বনজ কুমার জানান, তারা এখন পর্যন্ত ঘটনায় ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। ‘আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। তারা যত শক্তিশালী হোক না কেন তাদের আমরা অবশ্যই বিচারের আওতায় আনব।’
শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের বার্ন ইউনিটে মারা যান।