বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা, কতজনের কাজের বৈধ অনুমতিপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) আছে এবং কতজন বিদেশিকর্মী আয়কর দেন এসব তথ্য আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এনজিও ব্যুরো এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) এ প্রতিবেদন দিতে হবে।
রুলে বিদেশি কর্মীদের বাংলাদেশে কাজের ক্ষেত্রে আইন অনুসারে ওয়ার্ক পারমিট দিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশি কর্মীদের কাজ করার ক্ষেত্রে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছে আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে বিডা, এনজিও ব্যুরো এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
গত ১২ ডিসেম্বর এ রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজুর নাহিদ।
আদেশের পর আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, বিডার এক প্রতিবেদনে এসেছে, বাংলাদেশে ৪৫ হাজার বিদেশি কর্মী কাজ করেন। তাদের মধ্যে মাত্র সাত হাজার কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট আছে। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট নেই। এমনকি তারা আয়করও দেন না। এতে সরকার বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব যুক্তিতেই রিটটি করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ এই আদেশ দিলেন।
১৯ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের ‘বাংলাদেশে এতো বিদেশি কর্মী কেন’ শীর্ষক কলাম এ রিটে যুক্ত করা হয়। ওই কলামে বলা হয়, একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুসারে বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। খবরটির উৎস প্রধানত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংস্থা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও শিল্প বণিক সমিতি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, যেকোনো বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করতে চাইলে বিডা থেকে ওয়ার্ক পারমিট নেয়ার বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন বেসরকারি এমনকি কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লক্ষণীয় হয় যে, এ ধরনের প্রায় ৫ লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছেন। অথচ বিডা থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে ১ লাখ। তাদের আয়ের ওপর সরকার যথাযথভাবে করও পাচ্ছে না। কাউকে বেতন দেয়া হচ্ছে বিদেশে। আবার এ দেশেও অনেককে ডলারে বেতন দেয়া হয়। অথচ আয়কর বিবরণীতে তারা এটা টাকার অঙ্কে দেখান। আর নিবন্ধনহীনরা তো কিছুই দেখান না। আরও বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া যায় যে, সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি কর্মী নিয়োগে অনেক ক্ষেত্রে বিডা থেকে অনুমতি নেয়া হয় না।