এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে চর আলেকজান্ডার ২০ শয্যার হাসপাতালকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে গত ১০ বছরেও হাসপাতালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে উঠেনি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিকিৎসক সংকটে রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা রামগতি চরাঞ্চল হওয়ায় চিকিৎসকরা এখানে যেমন আসতে রাজি হচ্ছেন না, তেমনি কেউ এলেও নিয়মিত হাসপাতালে থাকছেন না কিংবা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও অনেক দিন থেকে সবগুলো পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া আটজন মেডিকেল কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে চারজন কর্মরত রয়েছেন।
সম্প্রতি সুজনা বেগম নামে এক মেডিকেল কর্মকর্তা হাসপাতাল থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ১৯টি পদ থাকলেও বর্তমানে ছয়জন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল আবিদা সুলতানা নামে এক মেডিকেল কর্মকর্তা হাসপাতালে যোগদান করেন। এরপর ১৫ মাস পার হলেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ডাক্তার আবিদা সুলতানার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ দিকে কামনা শীষ মজুমদার নামে আরেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে না এসে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফার্মেসিতে গিয়ে ড্রাগ লাইসেন্স দেখার কথা বলে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সদ্য বদলিকৃত চিকিৎসক সুজানার সাথেও অসদাচরণ করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কর্মরত এক চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক কামনা শীষ মজুমদার বলেন, সঠিক সময়ে কর্মস্থলে এসে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি।
মেজবাহ উদ্দিন, কুলছুমা বেগম, আবুল কালামসহ বেশ কয়েকজন রোগীর অভিযোগ, নদী ভাঙা রামগতি উপজেলার নিরীহ গরীব মানুষগুলো ডাক্তার সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। তাই রামগতি হাসপাতালে চিকিৎসকদের শূন্যপদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফউদ্দিন আজাদ সোহেল জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে চরাঞ্চলের গরীব মানুষগুলো ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। টাকা পয়সার অভাব থাকায় অনেকে নোয়াখালী কিংবা লক্ষ্মীপুর গিয়েও চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আবদুর রহিম জানান, হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার কারণে আবিদা সুলতানাকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অধিদপ্তরের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নিজাম উদ্দীন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজনা বেগমের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।