এ উপলক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত ড. আলীম আল রাজী উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সভাসতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. আলীম আল রাজীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা ও পরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
পরের দিন ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল ল কলেজে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষক অ্যাডভোকেট এম এ করিম মিয়া, অ্যাডভোকেট হুমায়ন কবির ও অ্যাডভোকেট প্রবীর কুমার মোদক।
এ সময় বক্তরা বলেন, ড. আলীম আল রাজী ঢাকায় সিটি আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা না করলে এদেশে অনেকের পক্ষেই সেসময় আইনজীবী ও বিচারক হওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি ছিলেন একজন উদারনৈতিক রাজনীতিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষাবিদ। বর্তমান সময়ে তার মতো মানুষের বড় প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. রাজী ছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। তিনি একজন মানবতাবাদী, সচেতন রাজনীতিবিদ এবং অনুকরণীয় আদর্শের ধারক। ১৯৬৫ সালে ড. রাজী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর এই তৎপরতার ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানে প্রথমে স্বায়ত্বশাসন ও পরবর্তীতে স্বাধীনতার দাবি, সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়।
ড. রাজী পাকিস্তান এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসন প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরণ লড়ে গেছেন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী ন্যাপ) এবং পরবর্তীতে তাঁর নিজ দল বাংলাদেশ পিপলস লীগের ব্যানারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ড. রাজী ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী এবং সামাজিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি নারী অগ্রগতি এবং তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ও তাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের বিপক্ষে ১৯৬৭ সালে দায়ের করা ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় বিবাদীপক্ষের নেতৃস্থানীয় কৌশলি ছিলেন খ্যাতনামা আইনজ্ঞ ড. রাজী। তিনি তার জীবননাশের হুমকিকে উপেক্ষা করে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলা বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের পক্ষে লড়ে গেছেন।
পরোপকারী ড. রাজী সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এবং তার সমস্ত সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন। তিনি তাঁর মূল্যবান বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরিকে দান করে গেছেন। মরহুম ড. আলীম-আল রাজী হতভাগ্য দৃষ্টিহীনদের কথা চিন্তা করে তাঁর মৃত্যুর পর যেন তারই চোখের আলোয় দু’জন অন্ধ এই পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখতে পারে সেজন্য মরণোত্তর চক্ষুদান করে গেছেন। তাঁর চোখের কর্ণিয়া ধারণ করে এখনও পৃথিবীর আলো দেখছেন দু’জন হতদরিদ্র মানুষ। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার সাথে সাথে তারা জীবিকাও নির্বাহ করছেন।